চোখ দুটো খুব জ্বলছে বেঁচে থাকার জন্য।
জন্মলগ্ন থেকে নিরাশার সঙ্গে দেখা, এখন বয়স ১৭ তাও যন্ত্রণা যেনো ভালোসঙ্গির ন্যায় অন্তরে জায়গা নিয়েছে।
১৭ বছর বয়সের ছেলে আমি। অন্যদিকে বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।
চিন্তাভাবনা যেনো পৃথিবীর ব্যাসার্ধেরও অধিক।
এই চিন্তাভাবনাই যেনো ১৭ বছরেই মৃত্যুর স্বাদের ন্যায়। পৃথিবীর স্পৃহা যে এই বয়সেও লোপ পায় তার সাক্ষি আমি।
বাঁচবো কাকে নিয়ে সেটাই বুঝি না, আর কি নিয়ে বাঁচবো তাও জানি না।
জীবনের সকল ইচ্ছা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন সবই তো বিলীন করে দিলাম।
এইগুলা ছাড়া যদি বাঁচি তবে ভালো মানুষ হতে চাই। বেঁচে থাকলে ভালো মানুষ হওয়া ছাড়া আর কোনো ইচ্ছা, আকাঙ্খা বা স্বপ্ন আমার নেই।
আর এই ভালো মানুষ হওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত জীবনে যত অর্জন বা প্রাপ্য হবে আমি মনে করি এইগুলা বেঁচে থাকার লোভ মাত্র, দুনিয়ায় টিকে থাকার এক প্রকার লটারি মাত্র তাছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। বসুন্ধরার চারিধারে যেনো জহরে বিস্তৃত।
এই অর্জন বা প্রাপ্য অপরের কাছে আশা-প্রত্যাশা অনেক মুল্যবান বা স্বপ্নও বটে।
তবে আমার কাছে আমার অর্জন বা প্রাপ্য লটারিতে বিজয়ী হওয়ার মতো। এর কারণ আমার এই অর্জন বা প্রাপ্য নিয়ে আমি কোনো প্রকার স্বপ্ন নেইন, নেই কোনো আশা-প্রত্যাশা, আর কখনো থাকবেও না যত দিন বাঁচি। আমি শুধু আমার ইচ্ছা,ধৈর্য এবং চেষ্টা চালিয়ে যাই যতটুকু পারি, আর আমি তাতেই বিশ্বাসী। আর তাতেই আমি দুর্লভ। মৃত্যু স্বাধ প্রাপ্তিতে তা ভিন্ন।
যেখানে আমার সুন্দর জীবনের মুল্যই নেই, সেখানে হাতেখড়ি অর্জনের মুল্য থাকে কি করে..?
যদি বাঁচি তাহলে ভালো মানুষ হয়ে ফিরবো। কারণ পৃথিবীতে ভালো মানুষের বৃহৎ সঙ্কট। এই ১৭বছরের নির্ঝরিণী ঐদিন প্রাণ খুলে হাসবে যে দিন সে ভালো মানুষ হতে পারবে। তার আগে এই নির্ঝরিণী সারাজীবনের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে থাকতে চায়। সকল কিছু থেকে আলাদা থাকতে চায়, সবার থেকে ভিন্নভাবে থাকতে চায়। একাকিত্ব ভাবে বাঁচতে চায়। আর এই একাকিত্ব নিরবতাই সব থেকে বড় প্রতিশোধ ঐ জহরের। তাও কামনা করি সৃষ্টিকর্তার প্রতি, যদি বাঁচি ভালো মানুষ করিও হে প্রভু।
মরে গেলে তো ভালোই, তবে বেঁচে থাকার এক চুল পরিমাণও ইচ্ছা নেই। দুনিয়ায় বেঁচে থেকে এই অমনুষ্যত্ব দেখার ইচ্ছা আমার নেই।
চলার প্রতিটি সেকেন্ডে মৃত্যু কামনা করি।
আমার চোখ দুটো মৃত্যু চায় না কেনো জানি।
এই দু-চোখ কিছু একটা দেখার ইচ্ছায় বাঁচতে চায়। তা আমার জানা নেই যে, কি দেখতে চায় এই দু-চোখ.?
চোখ দুটো খুব জ্বলছে বেঁচে থাকার জন্য। নিজের সাথে চোখের প্রচুর অভিমান হয় শুধু বেঁচে থাকার লড়াইয়ে। সে চায় না মৃতু আর আমি চাই না সজীব থাকা।
আমি চাই যন্ত্রণা যেমন আমার বেস্টফ্রেন্ড তেমনি মৃত্যুটাও আমার কাছের সঙ্গি হোক।
মানুষ বাঁচে তার স্বপ্নে তার ইচ্ছায়। আম নির্ঝরিণী কি নিয়ে বাঁচবো যার নেই কোনো স্বপ্ন নেই কোনো ইচ্ছা। এইভাবে মানুষ কখনো বাঁচতে পারে না।
আমার এইসব ত্যাগ করার কারণ, হাতে বানানো দুনিয়ার মায়া-ভালোবাসা আমার অন্তরে আর কাজ করে না। ধরার মানুষের মনুষ্যত্ব লোপ পেয়েছে নিদারুণ। আবার দায় দিচ্ছে এরাই নাকি মানুষ। আমি মনে করি না আমি মানুষ, যতক্ষণ না আমার ভিতরে মনুষ্যত্ব কাজ করবে।
পৃথিবী সহ পৃথিবীর সকল বস্তু থেকে মায়া -ভালোবাসা উঠে গেছে। কারণ জন্তু কখনো কাউকে মায়া, ভালোবাসা দেখাতে পারে না। যেখানে মনুষ্যত্ব উদাসীন সেখানে মানুষ জন্তুর চেয়েও অধম।
মানুষ থেকে বেশি ভালোবাসতাম এই ধরার সৌন্দর্যকে, এই ধরায় বিস্তৃত পশু-পাখিকে। জানি না আমার মতো কজন এইভাবে ভালোবাসে। জানি অনেকেই ভালোবাসে এদের। আমার ভালোবাসা অনন্য এদের জন্য। যা মানুষকে ভালোবাসার চেয়েও কোটি কোটি গুন বেশি। তবে এখন এইসবও অতলে তলিয়ে গিয়েছে। এখন যত মায়া-ভালোবাসা আছে সব নিজের জন্য। কারণ আমার পক্ষে কাউকে শুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই, আমি মনে করি আমি নিজে যদি শুদ্ধ হতে পারি তাহলেই সব শুদ্ধ করা সম্ভব।
এখন আসি,
মা-বাবার একমাত্র সন্তান হয়েও তাদের সুখি করতে পারিনি। জানি বেপারটা সবার কাছে চাঞ্চল্যকর লাগবে বা সাধারণ লাগবে। কারণ মাত্র বয়স ১৭, আরো তো অনেক সময় আছে বাবা-মা কে সুখি করার।
এইটা আমিও জানি সুখ-শান্তির সময় আরো বাকি।
তবে আমার ধারণার কাছে এই সময়ের অবসান হয়েছে। আসা সময় আমার কাছে পৃথিবী ভ্রমণ ছাড়া কিছুই না। আর পৃথিবী ভ্রমণ অত্যান্ত সুখের তাও সত্যি। তবে মা-বাবা কে সুখ না দিতে পেরে পৃথিবী ভ্রমণের সুখ চিরন্তন মূল্যহীন আমার কাছে।
বলবেন তখন না হয় মা-বাবা কে সুখ দিবেন পৃথিবী ভ্রমণ না করে। হ্যা, আজ আছি, কাল যে আমি থাকবো তার নিশ্চায়ন নেই। আমার মা-বাবা এখন আমার কাছে এখন সুখ দিতে পারছি না আর তখন আমার কাছে থাকবে তার নিশ্চায়ন কিভাবে দিচ্ছেন আপনি..?
১৭ বছরের এই নির্ঝরিণীর কিসের এত ক্লেশ. .? কেনোই বা সকল ইচ্ছা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন প্রত্যাহার করে দিয়েছে.? কেনোই বা ধরিত্রী সহ তার সকল বস্তু থেকে মায়া,ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছে.?
উপরের ভাবনা গুলো পড়ে এই প্রশ্নগুলো আপনাদের মনে জাগতে পারে।
এই প্রশ্ন গুলোর জবাব জবাবহীন থাকবে চিরকাল।
সবকিছুর আড়ালে রয়েছে এই অবনীর আকাশছোঁয়া রহস্যময় ইতিহাস। যা আড়ালেই ভালো থাকে।
তবু জাহানামে বসে পুষ্পের মতো হাসার অসীম ক্ষমতা দু-হাত ভরে দিয়েছেন ঐ উপর ওয়ালা।
জানি আমার মতো অনেকেই আছে যারা এইভাবেই নিশ্ব হয়ে বেঁচে আছে এখনো।
মৃত্যু সদাই জাগ্রত, তার আহার-নীদ্রা নেই। সদা আঁখির সামনেই থাকে।
সবাই উপলব্ধি করতে পারে না, আর উপলব্ধি করার ক্ষমতা সবার থাকে না।
শুধু এইটুকুই জানে সকলে যে প্রায়াণ একদিন হবে, বিনাশ একদিন আসবে।
তবে নিজের লোকান্তরপ্রাপ্তি কামনাই বা করে কতজন.?
শুধু আমার মতো নিশ্ব হয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলোই সদা নিজের মৃত্যুকে দেখতে পায় চোখের সামনে, জীবন-মৃত্যু তো অদৃষ্টের খেলা,না বাঁচলে আর তার দোষ কি।
আর তারাই মৃত্যু কামনা করে জীবন পারি দেয়।
কত সুন্দর এদের জীবন ব্যাবস্থা হুম, মৃত্যু কামনা করতে করতেই তারা হাসে, খেলে, মজা করে, পড়াশোনা করে, নানান প্রতিযোগিতায় নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ করে তুলে, নানান সংস্থায় নিজেকে মানব কল্যাণে ব্যায় করে, চাকরি করে, ব্যাবসা করে, সংসার করে, ঘুরেফিরে আহাজারি কত কি না তারা করে। কেউ বুঝে না তাদের। সবাই ভাবে কত আনন্দে, কত মৌহে কাটছে এদের জীবন-জীবিকা।
এরা সাধারণত কাউকে বুঝাতেও চায় না, আর বুঝতেও দেয় না, আড়ালে রাখে সকল যন্ত্রণা।
আমি মাত্র ১৭, আমি ২৭এ যেতে চাই না ৩৭ ও যেতে চাই না।
এখানেই পৃথিবীর দিক হারিয়ে ফেলেছি। আর সেই সময়ে টিকে থাকা কাম্য হবে না আমার জন্য। যা যন্ত্রণা আছে তাই থাকুক এর সীমানাপ্রচীর আর দীর্ঘ না হোক, এই কামনায় আর এগিয়ে যাওয়ায় ইচ্ছা হচ্ছে না।
যতদিন বাঁচি মৃত্যু কামনায় বাঁচতে চাই।
পৃথিবীর সকল বস্তুর জন্য শুভ কামনা রইলো।
কেউ যেনো আর যন্ত্রণা ভোগ না করে, কেউ যেনো আর বেঁচে থেকেই পৃথিবীর দিক না হারায়, কেউ যেনো আর নিজের ইচ্ছা,আকাঙ্খা, স্বপ্ন ত্যাগ না করে।
পৃথিবীর সকল বস্তু যেনো বেঁচে থাকার দীর্ঘ ইচ্ছা স্বাধন করে, এই অনুপ্রেরণা আপনি সহ সকলের জন্য। সকলে সুখি হও।
আপনাকে বলি আমার মতো পৃথিবীকে ঘৃণা করবেন না। এই পৃথিবীই আপনাকে মহৎ করে তুলবে। শুধু পৃথিবীকে ভালোবাসুন পৃথিবীর সকল বস্তুকে ভালোবাসুন।
পৃথিবী আমার অসহ্য হলে সেটা আমার একান্ত, তবে আমার এই ছোট ভাবনাকে আপনি কিভাবে নিবেন সেটাও আপনার একান্ত। তাতে আমার কিছুই যায় আসবে না।
আমি কি লিখেছি সেটা নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, মাফ চাই। আমার ভাবনার সাথে আপনার ভাবনা মিলবে না এইটাই স্বাভাবিক। আপনি আমার থেকে অনেক জ্ঞানী হতে পারেন। তাই বলি আমার ভাবনায় আপনার ভাবনা প্রকাশ পাবে না।
কাউকে আঘাত করে লিখা হয় নি, কাউকে তুল্য করেও লিখা হয় নি।
সদাই নিজেকে ভাবুন আর নিজেই বেঁচে থাকুন।
আমি শুধু ভালোবাসি আমাকে,
আমার ইচ্ছা, ধৈর্য এবং চেষ্টাতেই আমি বিশ্বাসী।
আমি ভালোবাসি আমার কর্মকে, আমি ভালোবাসি আমার মর্মকে।
আমি বাঁচি আমার কর্মে, আমি মরি আমার মর্মে।