#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি

#পার্টঃ৫

#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

ঘুমের মাঝে অনুভব হচ্ছে কেও আমার ঘরজুড়ে অস্থির ভাবে হাটাহাটি করছে৷ একটু আগে চোখটা লেগেছে!কান্নার ফলে মাথা ব্যাথা করছে যার ফলে হাজার চেয়েও চোখ খুলে তাকাতে পারছি না৷ পায়ের আওয়াজ না পেয়ে ঘুমিয়ে যেতেই কারো ঠান্ডা হাতের ছোয়া আমার গালে পেতেই বিরবির করে বললাম,

 

–‘হাত বুলিয়ে দিবেন আমার গালে? অনেক জ্বলছে জানেন!’

 

ঘুমের ঘোরে সত্যিই কেও হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷তার হাতের ছোঁয়ায় জাদু আছে৷ শান্তির ঘুম হবে!যেখানে থাকবে না কোনো দোটানার পাহাড়৷গালের হাতের ছোঁয়া হঠাৎ মাথায় পেতেই টনক নড়ে আমার৷ এতো রাতে ঘরে কে?গভীর ঘুম ছুটে যায়৷ আমার যতদূর মনে পড়ে দরজা বন্ধ৷ তাহলে কি ওই আপুর আত্মা? চোখ খুলে তাকাতে ভয় হচ্ছে৷ চোখ খুললেই মনে হয় ভয়ানক চেহারা দেখতে পাবো৷ আল্লাহ বাচাও আমায়!দিনে কাব্য ভাইয়ের ভয় আর রাতে ভুতের৷ আমার ভাগ্যে আর কি রেখেছ তুমি? আমি ভয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে বিরবির করে বললাম,

 

–‘দেখুন আপু,আমি আপনার কোনো ক্ষতি করি নি৷ আমার ঘরে থেকে চলে যান প্লিজজজ!আর কাওকে ধরতে হলে আমার পাশের রুমে কাব্য ভাইয়া আছে উনায় ধরতে পারেন৷ উনি ভুত অনেক ভালোবাসে৷’

 

–‘কাব্য ভুত ভালোবাসে আর আমিই জানি না!হাও পসিবল৷’

 

কাব্য ভাইয়ের কন্ঠস্বর শুনে একচোখ খুলে দেখি সে আমার দিকে ঝুকে বসে আছে৷ উনায় দেখে তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে উনার মাথায় বাড়ি খাই৷ এতো শক্ত মাথার বাড়ি খেয়ে আমার পুরো দুনিয়া ঘুরে গেছে । মাথায় হাত দিয়ে ঘষে উনার থেকে সরে বসি৷ ব্যাথা পেয়ে নিজের ভুল ধারণা চলে গেছে৷ আমার ঘরে হাটাহাটি করা উনিই হচ্ছে জিন্দা আত্মা৷ উনি নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

 

–‘এতো তাড়াহুড়ো কেন তোর সব বিষয়ে৷’

 

–‘আপনি আমার রুমে কি করছেন?’

 

–‘তোর জানার দরকার আছে?’

 

আমি চিল্লিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগে উনি আমার মুখে তার হাত দিয়ে নিচু স্বরে বলল,

 

–‘আস্তে কথা বলতে পারলে কথা বলবি৷আম্মুর প্রেশার বেড়েছে তোর চিন্তায় চিন্তায়৷ একটু আগে ঘুমিয়েছে তাই একদম চিৎকার করবি না৷’

 

আমি উনার হাত আমার মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে রাগী ভাবে বললাম,

 

–‘আপনি কি আমায় আবার মারতে এসেছেন?তাহলে নিন মারুন সমস্যা নেই৷ আপনার হাতের পুতুল আমি তাই যেইভাবে খুশি ব্যবহার করতেই পারেন আপনি৷ থাপ্পর মেরে চলে যান!আমায় একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিন৷ নাকি আমার ঘুমও আপনার ইশারায় চলবে?’

 

উনি আমার গালে হাত বুলিয়ে শান্তভাবে বললেন,

 

–‘খুব বেশী কি ব্যাথা পেয়েছিস নীতু?’

 

উনার এতোটুকু কথায় আমার কান্নারা পাল্লা দিয়ে আছড়ে পড়লো৷ তার সাথে বড্ড অভিমান এসে জড়ো হলো৷ আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম,

 

–‘হ্যাঁ!পেয়েছি এখন আমার ব্যাথা কি আপনি কমাতে পারবেন?’

 

–‘ব্যাথা যাতে না হয় সেই জন্যই তো এসেছি৷’

 

–‘আপনার এতো ঠেকা কেন পড়েছে?আমাকে আমায় মতো থাকতে দিন৷আর আপনি রুম থেকে বেরিয়ে যাবেন এখুনি৷ কোন অধিকারে অন্য একটা মেয়ের রুমে এসেছেন আপনি৷’

 

–‘আমার বাড়ি আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবো৷ তোকে কৈ…..

 

কাব্য ভাইয়ের অসম্পূর্ণ কথাটা শুনে আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,

 

–‘কৈফিয়ত কেন দিবেন আমাকে৷ এইটা একটা সুন্দর পয়েন্ট কাব্য ভাই।আপনাকে বলছি কেন দিবেন আপনি৷’

 

উনি আমার কথার মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

 

–‘রাত বিরাতে ঝগড়া করার মুড একদম আমার নেই নীতু৷ দরজা বন্ধ করে বসেছিলি বিকেল থেকে তাই ভাবলাম মরে টরে গেলি নাকি একটু দেখে আসি৷ শত হোক আমি একজন দায়িত্বশীল মানুষ কেও আমার সামনে এমন মরার মতো থাকলে আমার আবার প্রচুর কষ্ট লাগে৷ আর তুই তো আমার অনাগত বাচ্চার “মা” তোর জন্য তো আমার সেই পরিমাণের কষ্ট হয়৷’

 

আমি বেড থেকে নেমে উনার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,

–‘পয়েন্ট টু বি নোটেট কাব্য ভাই! আপনার বাচ্চার “মা” আমি কবে হলাম?আপনার সাথে আমার সম্পর্ক আছে?তাহলে এই মিথ্যা কেন বলেছিলেন৷’

 

উনি আমার বই খাতা নেড়েচেড়ে দেখছেন গভীর ভাবে৷ ম্যানেজমেন্টের নোট বের করে বললেন,

 

–‘লেনদেন বুঝিস তুই?’

 

সিরিয়াস কথার মাঝে উনার আজব কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি৷ আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বই দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি মেরে বললেন,

 

–‘এইভাবে তাকিয়ে থাকিস না তোর নজর লাগবে আমার৷ আর উত্তর দে বুঝিস কি না?’

 

উনার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললাম,

 

–‘আমি ম্যানেজমেন্টের স্টুডেন্ট কাব্য ভাই৷’

 

–‘গুড! লেনদেন কাকে বলে ছোট করে আন্সার দে ঝটপট৷’

 

–‘কোনো কিছুর বিনিময়ে অন্য কিছু নেওয়াকে লেনদেন বলে৷ বাট এর অনেক বড় সংজ্ঞা আছে৷’

 

উনি বই ঘাটতে ঘাটতে বললেন,

 

–‘আমার বিয়ের পর বাচ্ছা হবে রাইট? আর তোর বিয়ের পর তোর বাচ্চা হবে৷’

 

–‘তো?’

 

–‘আমার বাচ্চাকে তোর কাছে তোর বাচ্চার বিনিময়ে লেনদেন করলে তুই আমার বাচ্চার মা হবি আর আমি তোর বাচ্চার বাবা রাইট?’

 

আমি বোকার মতো দুদিকে মাথা দুলাতেই উনি আমার মাথায় হালকা টোকা দিয়ে বই আমার হাতে দিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি হেসে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়৷ আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে হিসাব মিলাচ্ছি৷ উনার লেনদেন কি সঠিক?না আবারও আমায় বোকা বানিয়ে চলে গেলেন উনি!

___________________________________________

 

সূর্যের হালকা কিরণ আমার বারান্দা জুড়ে বিচরণ করছে৷ ফজরের নামাজ পড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছি আমি৷ সারা সিলেট এখনো ঘুমিয়ে আছে৷ রাস্তায় মানুষের আনাগোনা নেই৷ ফুপি দের বাড়িটা তিনতলা৷ নিচের দুই প্লট ভাড়া আর উপরের পুরোটা ফুপিরা থাকে৷ পূর্ব দিকের দুটো রুমে আমি আর কাব্য ভাইয়া থাকি আর পশ্চিমের দুটো রুমের একটি কবিতা আপুর আর একটি ফুপির৷ কবিতা আপুর বিয়ে হয়েছে একবছর আগে৷ বর্তমানে সে ইটালি তে আছে৷ একটা প্রজাপতি উড়ে এসে আমার হাতের উপর বসতেই আনন্দে আমার মন নেঁচে উঠে৷ ইশ!ওর মতো দুটো পাখা থাকলে আমিও ফুলের বাগানে উড়ে বেড়াতাম৷ যেখানে থাকতো না কোনো ঝামেলা৷ সারাদিন ফুলের সৌরভে মাতামাতি করে কোনো এক ফুলের পাশে চুপটি মেরে বসে থাকতাম৷ আজগুবি সব চিন্তা ভেবেই হাসি পেলো৷ সাথে একরাশ মন খারাপ এসে ভর করলো৷ জীবনের গন্ডি থেমে গেছে অজানা কোনো সুতোর মাঝে৷ আমি চোখ বন্ধ করতেই কানে ভেসে এলো,

 

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে,

রাতের স্রোতে ভেসে!

শুধু তোমায় ভালোবেসে৷

আমার দিনগুলো সব রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে,

শুধু তোমায় ভালোবেসে৷

তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে!’

 

হঠাৎ গানের আওয়াজ বন্ধ হতেই পাশ ফিরে কাব্য ভাইয়ের বারান্দায় তাকিয়ে দেখি সে গিটার হাতে গান থামিয়ে আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ তার চোখের ভাষা পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ উনার গানের আওয়াজ এখনো আমার কানে বাজছে৷ আমি অস্ফুটস্বরে উনার বারান্দার কাছে গিয়ে বললাম,

 

–‘থামলেন কেন?অনেক সুন্দর গাইছিলেন তো৷’

 

–‘আমার ইচ্ছে৷’

 

–‘শুনতে ভালো লাগছিলো৷’

 

উনি গিটার পাশে রেখে বাঁকা ভাবে বললেন,

 

–‘তোকে শুনাতে আমার ভালোলাগছিলো না৷ কেন এসেছিস বারান্দায়?আমাকে ডিস্টার্ব না করলে শান্তি হয় না তোর?নিজের ইচ্ছা মতো কোথাও গানও গাওয়া যায় না৷’

 

উনি বিরক্ত হয়ে উঠে চলে যাওয়ার আগে বললেন,

–‘হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে আম্মুর সাথে কাজে হাত লাগাতেও তো পারিস৷ এইখানে নিয়ে এসেই ভুল হয়েছে৷ অসহ্য একটা৷’

 

আমি থম মেরে দাঁড়িয়ে আছি৷ সুন্দর সকাল হঠাৎ করেই কেমন জঘন্যতম মনে হতে লাগলো আমার কাছে৷ উনি এমন করেন কেন আমার সাথে? কখনো মিষ্টি রৌদ্দুর কখনো আবার কাঠ ফাটা রৌদ্দুর৷ আমি উনার উত্তাপে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি৷ সব কেমন পোড়ানো লাগছে আমার৷ চোখে পানির অস্তিত্ব পেলাম না তবে গলার কাছে একদলা কষ্ট পাঁকিয়ে আঁছে৷ সেইটা বৃষ্টির মতো ঝড়াতে পারলে শান্তি লাগতো৷ থাকবো না আর এই বাড়িতে!

কোনোকিছু না ভেবেই ড্রয়িং রুমে কাওকে দেখতে না পেয়ে গেইট খুলে রাস্তায় বেরিয়ে এলাম৷ সব মেনে নেওয়া যায় তবে এতো অপমান?যেখানে আমার কোনো দোষ নেই৷

 

চারদিকে গুমোট পরিবেশ৷ সকালের নিস্তব্ধতা ছাড়িয়ে কোলাহল পূর্ণ হয়ে গেছে রাস্তা ঘাট৷ ঘুরেফিরে আমার কানের মাঝে এসে বাড়ি খাচ্ছে কাব্য ভাইয়ের তীক্ষ্ণ কথা গুলো৷ আমার মনের দেয়ালে দেয়ালে বিষাদের ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ আমার নিজেকে নিজে মনে হচ্ছে৷ কি করবো!কোথায় যাবো? নানা প্রশ্নে অস্থির হয়ে উঠছে মনের কোঠায়৷ কাব্য ভাইয়া!কাব্য ভাইয়া এই একটা নাম আমার জীবন রৌদ্দুরের তীক্ষ্ণ আলোয় জ্বলসে দিয়েছে৷ যেইখানে কোনো নিজের অস্তিত্ব নেই!নেই কোনো প্রশ্নের জবাব৷ হেটে চলেছি অজানা কোনো পথের উদ্দেশ্যে!তবে সেই অজানার ঠিকানা কোথায়??


#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি

#পার্টঃ৬

#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

 

মাথার উপর সূর্য তার নিজস্ব রৌদ্দুর খোলা মাঠের প্রান্তরে ছড়িয়ে দিয়েছে৷ রোদের উত্তাপ বেশি নাকি কম তা বুঝার উপায় নেই৷ সামনের নদী থেকে হালকা মৃদু মন্দ বাতাস এসে সমস্ত জায়গার গরম ভাবটা কমিয়ে দিয়েছে৷ নদীর শান্ত পানির দিকে তাকিয়ে আছি আমি৷ এই নদীটার যেমন স্রোত নেই আমার জীবনেরও কোনো স্রোত নেই৷ সব শান্ত!যাকে বলে,সব কিছু শেষ হওয়ার পথে৷ কাব্য ভাইয়া নামক মানুষটা আমার কাছে ধাঁধার মতো৷ যার ভেতরে উত্তর আছে তবে অজানা৷ বাসায় ফিরবো না আর৷ কিন্তু কোথায় যাবো?বাবার বাসায়?

নদীটা কাব্য ভাইয়াদের বাসা থেকে এিশ মিনিট দূরত্বে। এইখানে কেন দাঁড়িয়ে আছি সেটাও জানা নেই আমার৷ মন বলছে, কাব্য ভাইয়া আসবে আমায় নিতে৷ কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে,’ছিঃ নীতু তুই এতো বেহায়া কেন?এতো অপমানিত হওয়ার পরও তার আশায় বসে আছিস৷’ উহু!তার আশায় নয় যাওয়ার জায়গা নেই এই জন্য দাঁড়িয়ে আছি৷ বাবার বাসায় যেতে সাহস হচ্ছে না৷ কেন হচ্ছে না তাও জানি না!হয়তো তার সামনে দাঁড়াতে পারবো না কারণ কাব্য ভাইয়া আমার সম্মান নিয়ে অদ্ভুত এক খেলায় মেতে উঠেছে৷

 

–‘তোর মাথায় কি আদেও মস্তিষ্ক নামক জিনিস টা আছে?’

 

কাব্য ভাইয়া রক্ত লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটি ছুড়ে দিলেন৷ উনায় দেখে কি রিয়াকশন দিবো ভেবে পেলাম না৷ উনায় সম্পূর্ণ ইগ্নর করে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ উনি আমার হাত ধরে নিজের সামনে ঘুরিয়ে বললেন,

 

–‘কথা কানে যায় না তোর?বাসা থেকে একা একা বের হয়েছিস কেন৷ উত্তর না দিলে ঠাটিয়ে এক চড় মারবো৷’

 

আমি নিরুত্তাপ ভাবে বললাম,

 

–‘হাত ছাড়ুন কাব্য ভাই!আমার লাগছে৷’

 

উনি আরো শক্ত করে ধরলেন চেঁচিয়ে বললেন,

–‘লাগার জন্যই ধরেছি৷ তোর সাহস কি করে হলো একা একা বের হওয়ার?তোর জন্য আম্মু অসুস্থ হয়ে গেছে৷ ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে এসেছি আমি৷ বাই এনি চান্স আম্মু সুস্থ না হলে তোকে মেরে এই নদীর পানিতে ভাসিয়ে দিবো৷’

 

–‘আমার জন্য আপনাদের চিন্তা করতে বলেছি আমি?’

 

–‘মুখে মুখে তর্ক করলে তোর খবর আছে নীতু৷ বেশি বুঝিস তুই?’

 

আমি উনার হাত সরানোর চেষ্টা করে বললাম,

–‘আমার ইচ্ছা হয়েছিলো তাই বের হয়েছি৷ এইবার ছাড়ুন৷’

 

–‘ছাড়বো না কি করবি তুই?’

 

আমি কিছু না বলে চিল্লাতে শুরু করলাম৷ দূরে বসে থাকা কিছু ছেলে আমার চিৎকার শুনে এগিয়ে আসতেই কাব্য ভাই আমাকে তার সাথে একদম মিশিয়ে নেয়৷ ছেলেগুলোর একজন কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই কাব্য ভাইয়া বললেন,

 

–‘তোদের ভাবীর চোখে কি যেন পড়েছে তাই এমন চিৎকার করছে৷’

 

আমি উনার বুক থেকে মাথা উঠানোর চেষ্টা করতে উনি আরো জোরে চেপে ধরেন৷ ছেলেগুলো আর কিছু বলার আগে উনি আবারও বললেন,

 

–‘এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি আমাদের রোমাঞ্চ দেখবি তোরা? স্যারের রোমাঞ্চ দেখতে লজ্জা করে না তোদের৷ এখুনি যা এখান থেকে না হলে আজ প্রাইভেট পড়ানোর সময় সব কয়টাকে রাস্তায় এনে কান ধরে উঠবস করাবো৷’

 

ছেলেগুলোর মধ্যে একজন যাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করলো,’ভাই আপনি বিয়ে করেছেন?কই আমরা তো কিছু জানলাম না৷’

 

উনি রাগী স্বরে বললেন,

–‘সব কৈফিয়ত কি তোদের দিবো আমি?গলির চিপায় সিগারেট খাস আমি কি সেই কৈফিয়ত তোদের কাছে চেয়েছি!তবে আজ চাইবো না তবে সবগুলোর বাসায় খবর পৌছে যাবে৷’

 

উনার কথা শুনে সব গুলো চুপ হয়ে না বলার অনুরোধ করে চলে যায়৷ ওরা চলে যাওয়ার পরও উনি আমার মাথা তার বুকে থেকে উঠাতে দেয় নি৷ দম বন্ধ বন্ধ লাগছে আমার সেই সাথে অস্থিরতা৷ এতোটা কাছে কোনোদিন আসি নি উনার৷ তবে উনার বুকে আজ কেমন ভালোলাগার ছোয়া আছে৷

 

–‘তোর হৃদপিন্ড ঢাক ঢোল পেটাচ্ছে কেন?লাফিয়ে মনে হচ্ছে বের হয়ে আসবে আমার হৃদপিন্ডের কাছে এখুনি৷’

 

আমি উনাকে দূরে সরানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি এর মাঝে হঠাৎ উনার এমন কথায় লজ্জা পেয়ে যাই৷

আমি উনাকে আবারো দূরে সরাতে গেলে উনি বললেন,

 

–‘আমি না ছাড়লে ছাড়া পাবি তুই আমার বাঁধন থেকে!’

 

এই কথা বলেই উনি আমায় ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়৷ আমি জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকি৷ আর একটু হলে দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম৷ আমি জোরে শ্বাস টেনে বললাম,

 

–‘আপনি প্রচুর অসভ্য কাব্য ভাই যাকে মারাত্মক অসভ্য বললেও ভুল হবে৷ উনাদের আপনি বউ বলে কেন পরিচয় দিলেন!আর কতো মিথ্যা বলবেন আপনি? আমাদের সত্যবাদী “দ্যা গ্রেট কাব্য” ভাই বিশিষ্ট মিথ্যাবাদী হলো কবে থেকে৷ আপনি মিথ্যার বেড়াজালে কেন জড়াচ্ছেন আমায়৷ কবে মুক্তি পাবো আমি?আর কবেই বা পাবো এই সবকিছুর উত্তর৷’

 

–‘যতদিন শর্ত না শেষ হয় ওই দিন পর্যন্ত৷’

 

আমি উনার কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,

–‘কিসের শর্ত!’

 

উনি পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে ঘুরে যেতে যেতে বললেন,

–‘সেইটাও একটা শর্ত!’

 

উনি কিছুদূর যাওয়ার পর পিছু ফিরে বললেন,

 

–‘কোলে করে নিয়ে আসবো না কি তোকে? এখনো দাঁড়িয়ে আছিস। ওয়েট আমি আসছি কোলে নিতে।’

 

উনি আসার জন্য পা বাড়াতেই আমি দৌড়ে উনার দিকে যাই। এমনি কিসের শর্ত তা নিয়ে আরেক মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেছে।এখন রাস্তার মাঝে কোলে তুললে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবে। এই ছেলের ভরসা নেই যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। আল্লাহ কি দিয়ে বানিয়েছে উনায়?

 

________________________________

টানা চব্বিশ ঘন্টা পার হয়ে গেছে এখনো কাব্য ভাইয়ার দেখা নেই৷ দেখা নেই বললে ভুল হচ্ছে সে ইচ্ছা করেই আমাকে দেখা দিচ্ছেন না৷ আমার জীবনে সবচেয়ে ভালো মূহুর্ত এই চব্বিশ ঘন্টা ছিলো৷ উনাকে দেখলেই আমার প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছা হয়৷ আর উনাকে না দেখলে আমি নিজেকে সামলাতে পারি৷ অন্য কিছুতে ব্যাস্ত রাখতে পারি৷ কাল সকালে আঙ্কেল আসবে৷ আর এই খবর টা শোনার পর থেকে আমার ভয় আরো বেড়ে যাচ্ছে৷ অন্যসব সময় হলে আনন্দের সীমা থাকতো না বাট কাল যদি কাব্য ভাই উল্টাপাল্টা কথা বলেন তাহলে আঙ্কেলর চোখে কতোটা নিচু হয়ে যাবো তা ভাবার বাইরে৷ আমার বাবার পর “রেদুয়ান আঙ্কেল”আমার আরেকটা বাবা৷ আমি চোখ বন্ধ করে এই মানুষটাকে বিশ্বাস করতে পারি,ভরসা করতে পারি৷ উনার চোখে আমি খারাপ হতে চাই না৷ কিন্তু কাব্য ভাইয়া?উনি কি করবেন! পাশের রুম থেকে আজও গিটারের আওয়াজ সাথে কাব্য ভাইয়ের সুন্দর কন্ঠের গান ভেসে আসছে৷ উনার গানের গলা অনেক ভালো৷ মায়ায় পড়ে যাওয়া কন্ঠ তার৷ যেকোনো গান তার গলায় মানায়৷ তবে আজ গানের মাঝে কেমন বিষাদের ছায়া৷ অনেক কিছু বলার আকুতি৷ কিন্তু কাকে বলার? উনায় গিয়ে জিজ্ঞেস করবো!লেখিকা,রুবাইদা হৃদি সকালের কথা মনে হতেই রাগ হলো৷ নীতু তোর এতো ভাবতে হবে কেন?তুই কে উনার৷ যা ইচ্ছা তাই করুক তোর কি তাতে৷

 

–‘নীতু আম্মু তুই কি পড়তে বসেছিস?’

 

ফুপি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল কথাটা৷ আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে বললাম,

–‘কিছু বলবে ফুপি!’

 

ফুপি বেডে বসে আমাকে পাশে বসতে দিয়ে বলল,

–‘গল্প কর‍তে আসলাম তোর সাথে৷’

 

–‘অনেক দিন একসাথে বসে গল্প করা হয় না তাই না ফুপি৷’

 

–‘হ্যাঁ অনেক দিন৷’

 

ঘরের মাঝে হঠাৎ নিস্তব্ধতা নেমে এলো৷ কাব্য ভাইয়ের গলায় ভেসে এলো,

‘ছায়া মেলে জড়ো হয় আকাশে যায় না কিছুতে সরানো!’

‘প্রিয় রঙ হয়ে যায় ফ্যাকাসে হয় না দুহাত জড়ানো৷’

ভুলে বেঁচে থাকা,নোনা জ্বল চোখে মাখা

সুখ নেই… সুখ নেই, পৃথীবির কারখানায়৷

(তাহসান)

ফুপি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমার দিকে ঘুরে বসলো৷ আমার হাতে হাত রেখে বলল,

 

–‘ছেলেটার গানের গলা অনেক ভালো তাই নারে নীতু?’

 

–‘হু!কাব্য ভাইয়া স্টেজে গান গাইলে ভাইরাল হয়ে যাবে৷’

 

–‘আমার ছেলেটার সুখ নেই জানিস৷’

 

আমি অবাক হয়ে ফুপির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ দিব্যি হাসি-খুশি আর আমাকে জ্বালানো কাব্য ভাইয়া নাকি সুখে নেই৷ কথাটা হাস্যকর লাগগো আমার৷ আমি অবাক হয়ে বললাম,

 

–‘কেন ফুপি?উনাকে দেখলে তো সব ঠিকঠাক লাগে৷’

 

–‘উপরে ভালো থাকলেই কি সবাই ভেতরে ভালো থাকে?তুই কি ভালো আছিস!সবার ভেতরে একটা চাপা কষ্ট থাকে আর সেই কষ্টের ভাগীদার সেই মানুষটার মন হয়৷ মন খুলে কারো সামনে দেখানো যায় না কিন্তু উপরের হাসি মুখটা সবাইকে দেখানো যায়৷ আর সেই ঢেকে থাকা মনের একটা কষ্টের গল্প থাকে৷ সেই গল্পটা হয় কষ্টে মোড়ানো৷ যেটা কাওকে দেখানো যায় না বলেই মানুষ ভাবে তুমি ভালো আছো!তোমার সুখের সীমা নেই৷’

 

আমি বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ফুপির দিকে৷ প্রত্যেকটা কথা নিদারুণ সত্য৷ ফুপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

 

–‘তোকে আজ কিছু সত্যি বলবো৷ যেই সত্যিটা কাব্যের ভেতরকার৷ সাথে এতোসব কিছুর৷ কিন্তু সেই সত্যিটা শুনে কাওকে বলবি না৷ আর সত্যিটার বিচার বিবেচনা তুই করবি৷ আমি জানি তুই পারবি সত্যিটা মেনে নিতে৷ কি পারবি না?’

 


#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি

#পার্টঃ৭

#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

 

‘বৃষ্টিস্নাত এই ভোরের আলোয়,মিশিয়ে নেওয়ার এই খেলায়,

তুমি আমি থাকবো দুজনের মনের কিনারায়৷

ভালোবাসি,ভালোবাসি প্রেমের ঠিকানায়৷

 

কাব্য ভাইয়া তার মনের মাধুরি মিশিয়ে গেয়ে চলেছেন৷ গানের কথা গুলো তার লেখা৷ হয়তো সুর তুলছেন৷ তার একটা ডায়েরি আছে!আর সেটার নাম হচ্ছে,”রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি”৷ আজ পর্যন্ত কারো সাহস হয় নি তার এই সিক্রেট ডায়েরি খুলে দেখার৷ সেই পাঁচ বছর আগে একবার চুরি করে দেখতে গিয়ে কাব্য ভাইয়ের হাতে তার ক্লাসমেট তমা আপুর চড় খেয়ে গাল বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো৷ সেই থেকে এই ডায়েরিকে সবাই ভুতের মতো ভয় পায়৷ এশারের নামাজ পড়ে ফুঁপি আবার আসে৷ কথা শেষ হওয়ার আগেই আজান শুরু হয়৷ তাই ফুপি নামাজে চলে যায়৷ আমি উৎসুকভাবে শোনার অপেক্ষায় আছি৷ হয়তো আজ আমার অপেক্ষার অবসান হবে আর তারপর মুক্তি৷ মুক্তি নামক শব্দটা বড্ড ভারী ঠেকলো আমার কাছে৷ কিসের মুক্তি?ভেবেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো৷ ফুঁপি পানির বোতল পাশে রেখে আমাকে বলল,

 

–‘সত্যি গুলো বড্ড তিক্ত হয় জানিস নীতু?অনেক সময় এই সত্যির জোড়ে সম্পর্ক ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়৷’

 

ফুঁপির বলা শব্দ গুলো বড্ড কঠিন লাগছে সেই সাথে ভয়৷ কি এমন সত্যি যেটা সম্পর্ক ভাঙতে পারে?

 

–‘কি এমন সত্যি ফুঁপি? আমার যে বড্ড ভয় লাগছে তোমার কথা শুনে৷’

 

–‘কাব্যে একজন কে অনেক ভালোবাসতো আর তাদের বিয়েও ঠিক ছিলো৷’

 

আশেপাশে বাজ পড়লে যেমন শব্দ হয় তেমন শব্দের ন্যায় এইটুকু কথা লাগলো আমার৷ আমি বিষ্ময়ে নিয়ে তাকিয়ে আছি৷ ফুঁপি নির্ঘাত আমার সাথে মজা করছে৷

 

–‘আমার সাথে মজা করছো!’

–‘মজা করার মতো পরিস্থিতি এইটা নয় তুই ভালো মতো জানিস নীতু৷’

–‘কিন্তু…..

 

ফুঁপি আমার দিকে দৃষ্টি মেলে বলল,

 

–‘সমস্ত কথা শোন আগে৷ মেয়েটার নাম ছিলো রাই৷কাব্য হুট করে একদিন এসে বলল মেয়েটাকে নাকি ও ভালোবাসে৷ আর অনেক অনুরোধ করলো তাকে বিয়ে করবে৷ সব শুনে আমি মানতে নারাজ ছিলাম৷ কিন্তু কাব্য নাছোড়বান্দা সে বিয়ে করবেই৷ আমি তোর রেদুয়ান আঙ্কেল কে জানিয়ে কাব্যকে বোঝানোর চেষ্টা করি৷ কবিতার তখন বিয়ে ঠিক হওয়ার পথে। এতশত ঝামেলায় ওকে কথা দিই আমরা বিয়ে ঠিক করে রাখবো আর কাব্য গ্রেজুয়েট হয়ে বের হওয়ার পর বিয়ে দিয়ে ঘরে তুলবো৷ কিন্তু কিছুদিন পর মেয়েটার বাবা করে অন্য একজনের সাথে বিয়ে দেয় তাও ওই মেয়ের মত নিয়ে। কাব্য শুনে চুপ মেরে বসেছিলো৷ এই ঘটনা তোদের অজানা কারণ আমরা চেয়েছিলাম ওকে কেও প্রশ্ন না করে৷ ইন্টারের সময় মেয়েটার সাথে সম্পর্ক ছিলো৷ তবে মেয়েটা ওকে ভালোবাসতো না৷ বিয়ের আগের দিন হাসিমুখে নিজে এসে বিয়ের কার্ড দিয়ে বলেছিলো,যোগ্যতা ছাড়া দুনিয়ায় কাওকে পাওয়া যায় না৷ কাব্যও হাসি মুখে কার্ড নিয়েছিলো৷নিজের ভুল বুঝে নিজেকে সামলিয়েছে৷’

 

আমি ফুঁপির কথা শুনে চুপ মেরে বসে আছি৷ কি বলা উচিৎ ভেবে পাচ্ছি না একদম৷ আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফুঁপি কে বললাম,

 

–‘ফুঁপি এইগুলো কবে হয়েছে?’

–‘আমরা যখন মিরপুর থাকতাম৷ কাব্য তখন সদ্য ইন্টারে উঠেছে৷ তখন তুই অনেক ছোট৷’

 

আমি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম,

 

–‘কাব্য ভাইয়া কি ওই মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসতো?’

 

–‘ওর মন বুঝতে পারা অনেক কষ্ট রে নীতু৷ চব্বিশ বছর ধরে ওকে আগলে রেখেছি কিন্তু এখনো ওকে বুঝতে পারি না৷ এইটা “মা” হিসেবে আমার ব্যার্থতা৷ ওর মনের সমস্ত কিছু নিজের মধ্যে আগলে রাখতে ভালোবাসে৷ হয়তো মেয়েটাকে ভালোবাসতো খুব বেশি আবার হয়তো ওর মনের আবেগ ছিলো৷ কিন্তু আমার ছেলেটা ভালো নেই৷’

 

–‘তবে আমায় উনি এইভাবে নিয়ে এলো কেন ফুঁপি?’

 

ফুঁপি আমার দিকে নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথায় হাত রেখে বললেন,

 

–‘ও যে শর্তে বাধা নীতু!আর সেই শর্তে আমাকেও বেঁধে রেখেছে৷ তবে এইটুকু বলতে পারি,ও তোকে আগলে রাখার জন্য সবকিছু করতে পারে৷ আর বিয়েটা বড় ভাই ইচ্ছা করে দিতে চায় নি৷ আমিরের সাথে ব্যাবসায়ী শএুতা আছে তা জানিস তুই?’

 

আমি মাথা দোলালাম৷ সত্যি আমিরের সাথে বাবার টাকা নিয়ে ঝামেলা চলছিলো৷ বিয়ের দু দিন আগে “আমির” আমাদের বাসায় আসে তারপর বাবা তাড়াহুড়ো করে আমার বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে৷ বাবা একপ্রকার জোর করেই বিয়েতে হ্যাঁ বলিয়েছে আমায়৷ ফুঁপি দম নিয়ে আবার বলল,

 

–‘আমি অসুস্থ ছিলাম তাই তোর বিয়েতে যেতে পারি নি৷ কাব্য আসার আগে ফোন করে বলেছিলো তোকে নিয়ে আসছে৷’

 

–‘কিসের শর্ত ফুঁপি?আমি ভেবে ভেবে পাগল প্রায় হয়ে যাচ্ছি৷ আর বাবাও আমাকে তার বাসায় যেতে বারণ করে দিয়েছে৷ আমি কতোদিন থাকবো এইখানে?আমার পড়ালেখার কি হবে৷’

 

ফুঁপি মুচকি হেসে আমাকে তার কোলে মাথা দিয়ে শুতে বলেন৷ আমি শুতেই মাথায় বিলি কাটে৷আমি শান্তিতে চোখ বন্ধ করে ফেলি৷ এখন মনে হচ্ছে সব শর্ত গোল্লায় যাক ফুঁপির আদরে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ি৷

 

–‘তোর পড়াশোনা এখানেই হবে আমাদের বাসায় থেকে৷ আর বড় ভাই সব কিছু সামলিয়ে তোর সাথে দেখা করতে আসবে৷ আর শর্ত সেটা উপযুক্ত সময় হলে সেটা তোকে কাব্য নিজে বলবে৷ এখনো সেই সময় আসে নি৷’

 

আমি চোখ খুলে বললাম,

–‘সেই সময়টা কবে আসবে ফুঁপি!আর কতো দোটানায় থাকবো আমি৷’

 

–‘সেইটা পাঁচ বছর পর আসতে পারে আবার দুদিন পরও আসতে পারে৷ তোর এতো কিছু ভাবতে হবে না৷ নিজের পড়াশোনার দিকে ফোকাস কর৷ নিজের পায়ে দাড়া৷ আমরা তোর পাশে আছি ইভেন তোর বাবাও তোর পাশে আছে সেইটা সময় হলেই বুঝতে পারবি৷’

 

পরম শান্তিতে আমার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসলো৷ ফুঁপি আমাকে ঘুমাতে দেখে নিজে চুপ হয়ে মাথায় হাত বুলাতে থাকলেন৷ বাইরে থেকে কাব্য ভাইয়ের কন্ঠ ভেসে আসছে৷ কি বলছেন উনি কিছুই কানে ঢুকছে না৷ আমার ঘুম দরকার শান্তির ঘুম!

_________________________________

ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে কদম গাছটা৷ সকালের স্নিগ্ধ আলো কদমের ছোট ছোট নেড়া মাথায় পড়ছে৷ সূর্যের আলোয় ছোট কদম গুলো কুসুমের মতো লাগছে৷ কিছুদিন পরেই কদমের সুন্দর রুপের ছড়াছড়ি হবে এই নেড়া মাথা থেকে৷আমার এই কদম গুলো দেখতে দারুণ লাগে৷ কিছু কাঁক সেই কদম ঠোকাঠুকি করছে ছিড়ার জন্য৷ কাঁক গুলো বড্ড বোঁকা এই কদম ছিড়ে কি করবে ওরা? নিজের প্রেমিকা কে দিবে? কদম প্রিয় কাঁক প্রেমিকা৷ ভেবেই দম ফাটা হাসি পেলো৷ কাঁক গুলো কদম ছিড়ে নিয়ে ওদের প্রেয়সীকে দিয়ে বলবে,

 

‘প্রেয়সী কাঁক তোমার জন্য মানুষের প্রিয় কদম এনছি।

এইবার আমাকে গ্রহণ করো কাঁক সুন্দরি।’

সত্যি কি এমন টা করে ওরা?

 

–‘তোর মতো গাঁধা আর কি কি ভাবতে রে!’

পিছন থেকে কাব্য ভাইয়ার অপমান সূচক বাক্য শুনে আমি চুপ করে গেলাম৷ উনি আমার পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে কদমের দিকে তাকিয়ে বললেন,

 

–‘শুভ সকাল কাঁকের প্রেম বিশেষজ্ঞ৷’

 

আমি উনার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম,

–‘আপনি এখানে কখন এসেছেন?’

 

–‘তুই যখন কাকের প্রেমের বাণী শোনাচ্ছি….ওয়েট তোকে আমি জবাব কেন দিবো৷’

 

উনার এমন কথা শুনলে বিরক্ত লাগলেও আজ লাগছে না৷ উনায় একটু জ্বালাতে ইচ্ছা হচ্ছে প্রচুর৷ আমি নিরুত্তাপ ভাবে জবাব দিলাম,

 

–‘আপনার বউ আমি জবাব তো দিতেই হবে আপনাকে৷’

 

উনি ফাটাফাটা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললেন,

 

–‘আমি মানা করেছি নাকি? তা বউ বাসর ঘরের ব্যাবস্থা করি৷’

 

আমি উনার থেকে একহাত দূরে গিয়ে বললাম,

–‘দূরে যান আপনি!সকাল সকাল আমাকে না জ্বালালে শান্তি হয় না আপনার৷’

 

উনি আমার কাছে এসে বললেন,

 

–‘না হয় না কাঁকের প্রেম বিশেষজ্ঞ৷’

–‘উফফ!বিরক্তিকর৷’

–‘উফফ!কাঁকের প্রেমকর৷’

 

উনার সাথে কথা বলাই বৃথা৷ আচ্ছা উনি কি জানেন ফুঁপি আমায় অনেক কিছু বলে দিয়েছে?এইজন্যই কি আজ মেজাজ মজা করার মুডে তার!উনি হঠাৎ আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,

 

–‘তোকে আজ খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে জানিস?তাও বাটার দিয়ে৷ একদম স্নিগ্ধ লাগছে৷’

 

উনার ফিসফিস শব্দে আমার কেমন অদ্ভুত লাগছে সেই সাথে লজ্জা৷ আমি মেকি রাগ দেখিয়ে বললাম,

 

–‘আমাকে কি আপনার খাওয়ার জিনিস লাগে? আপনি পাগল হয়ে যাচ্ছেন দিন দিন কাব্য ভাইয়া সেইটা কি আপনি জানেন?’

উনি কদমের ডালের দিকে লাফিয়ে দুটো কদম ছিড়ে বললেন,

 

–‘সারাদিন এতো ভাই ভাই করিস কেন রে! তোকে না বলেছি ব্রো বলবি আমায়৷’

 

উনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম৷ এই ছেলে নিশ্চয় ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাঁকা হয়ে গেছে পুরনো প্রেমিকার কথা মনে করে তাই উল্টো পাল্টা বকছে৷ আমি হাসবো নাকি কাঁদবো? উনি কদম গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছেন৷

 

–‘ব্রো মানেও তো ভাই কাব্য ভাইয়া৷’

 

উনি আমার দিকে তাকিয়ে রাগী ভাব মুখে ঝুলিয়ে বললেন,

 

–‘এতো বুঝা লাগবে কেন তোর৷ বলতে বলেছি বলবি৷ আর না হলে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় আমার নামটা আছে সেইটা ধরে বলবি৷ সারাদিন ভাই ভাই বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে৷ তোর কোন জন্মের ভাই লাগি আমি?’

 

–‘কেন এই জন্মের সাথে আরো সাত জন্ম থাকলে সেই জন্মেরও ভাই লাগেন৷’

 

–‘টেনে এক চড় মারবো তোর গালে৷ বেশি কথা বলিস৷ যা করতে বলবো তাই করবি আর এইটা তোর প্রতি আমার অধিকার৷’

 

–‘কিসের অধিকার!মিথ্যা অধিকার নিয়ে আমার উপর জোর দেখাবেন না একদম৷লেখিকা,রুবাইদা হৃদি৷ একজন ভাই হিসেবে জোর দেখাতে পারেন তাও লিমিট রেখে৷’

 

উনি কদম গুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে ধরে বললেন,

 

–‘অধিকার দেখানো তো মাএ শুরু৷ তোকে এই অজানা অধিকারের পুড়াবো৷ না তুই যেতে পারবি না সহ্য করতে পারবি৷ আর অধিকারে সমস্ত আয়োজন করবো আজ সেটা তোর সামনেই৷’

 

উনি আমার হাত ধরে টেনে ছাদ থেকে নামায়৷ উনাকে এইভাবে টানতে দেখে ফুঁপি বারবার মানা করেন কিন্তু উনি ফুঁপিকে উপেক্ষা করে আমায় গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন৷ বারবার ছুটতে চাইলে আরো জোরে আঁকড়ে ধরছেন হাত৷ উনার এই রাগ আবার কোন মোড় এনে দিবে আমার জীবনে?


#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি

#বোনাস_পার্ট

#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

কাজী অফিসে বসে আছি আমি আর কাব্য ভাইয়া৷ উনি আমার একহাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন৷ আমার কান্নার শব্দ গুলো উনার কান অবধি পৌঁছাতে পারছে কিনা সেই জানে৷ উনি অন্য হাতে তার চুল টেনে ধরে আছেন৷ চোখ গুলো রক্তলাল৷ হাত এতো শক্ত করে ধরেছেন মনে হচ্ছে এখুনি খুলে পড়ে যাবে৷ আমার মোচড়ামুচড়ি দেখে একবার আমার দিকে তাকাতেই আমি চুপ হয়ে যাই৷ উনাকে আগে এইভাবে রাগতে দেখি নি৷ ভয়ে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার৷ আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে একবার ঘড়ি দেখলেন আবার বাইরের দিকে তাকালেন৷ আফসোসের সুরে বললেন,

 

— ‘ড্যাম ইট!প্রয়োজনের সময় কাওকে পাওয়া যায় না৷’

 

সাদা পাঞ্জাবি,কালো টুপি সাথে মুখে দাড়ি আর পান খেতে খেতে একজন লোক চেয়ার টেনে বসতেই কাব্য ভাই নড়েচড়ে বসলেন৷ উনার হাবভাব দেখে কাজী লাগছে৷ উনাকে দেখে আমি এইবার জোরে কান্না করে দিলাম৷ শেষ আশাও আজ শেষ! কাজী দাত গুলো বের করে হে হে করে হেসে বললেন,

 

–‘উঠিয়ে নিয়ে আসছেন নাকি ভাইজান?হয় এমন হয়!কতো করাইছি এমন বিয়া তার হিসাব নাই।তা আপনাগো সাক্ষী কই? আমার এইখানে মেলা সাক্ষী আছে লাগলে কন ডাইকা দেই৷’

 

–‘স্টপ!আর একটা কথা বললে আপনার দাঁত ভেঙে গুড়িয়ে দিবো৷’

 

উনার ধমক শুনে কাজী সাহেব চুপ হয়ে গেলেন৷ আমি উনার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,

–‘আপনি এখন বেশী বেশী করছেন কাব্য ভাই৷ তখন চুপ ছিলাম তবে আজ চুপ থাকবো না৷ আমি এইখান থেকে পুলিশের কাছে যাবো৷’

 

উনি আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

–‘যা তোকে মানা করেছে কে? অধিকারের কথা বলেছিলি না!এখন সত্যিকারে অধিকার নিবো তোর৷’

 

কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে আমার৷ এতোটা খারাপ কেন এই লোকটা৷ সব সময় আমার উপর জোর দেখায়৷ কাঁদার ফলে কোনো কথাই বলতে পারছি না৷ কিছুক্ষণ পর রাহুল ভাইয়া আর মোস্তাকিম ভাইয়া আসতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়৷ এইবার মনে হয় সত্যি সত্যি বিয়ে হয়েই যাবে। আমাকে কাঁদতে দেখে রাহুল ভাইয়া বললেন,

 

–‘কাব্য ও কাঁদছে কেন এইভাবে?’

 

–‘আমি মরে গেছি এইজন্য কেঁদে কেঁদে শোক পালন করছে৷’

 

রাহুল ভাইয়া ভেবাচেকা খেয়ে গেলেন উনার কথা শুনে৷ মোস্তাকিম ভাইয়া কাকে যেন ফোন করলেন৷ শুধু বললেন,

–‘জলদি আয় তোরা আমারা অপেক্ষা করছি৷’

 

কার আসার কথা বলছেন আর?সবাই তো এসেই গেছে৷ আল্লাহ বাচাও আমায়৷ একটু পর তমা আপু আসতেই কাব্য ভাইয়া উঠে দাঁড়ায়৷

 

–‘মাহিম আর তোদের ফ্যামিলির সবাই কোথায়?তোদের সকাল নয়টায় বের হতে বলেছিলাম৷’

 

কাব্য ভাইয়ের কথা শুনে একটা ছেলে আর ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,

–‘এই যে আমি৷ আপনার ফ্রেন্ড বাসা থেকে বের হতে দু ঘন্টা লাগিয়েছে৷’

 

তার কথা শুনে তমা আপু উনার পেটে গুতা দিয়ে বললেন,

–‘বেশি কথা বললে সোজা এইখানে থেকে বাসায় চলে যাবো৷’

 

তমা আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

–‘এইটা নীতু না? ও কাদছে কেন এইভাবে!’

 

পাশে অনেক গুলো অচেনা মুখ আমার দিকে চেয়ে আছে৷ আমি কাব্য ভাইয়ার পিছনে আর একটু সরে দাড়ালাম৷ আমাকে হাত ধরে সামনে এনে বললেন,

 

–‘নতুন বিয়ে করেছি তো তাই লজ্জায় তোদের দেখে কান্না করছে৷’

 

তমা আপুর ফ্যামিলি সাথে সবাই কাব্য ভাইয়ার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ একবার আমাকে দেখছেন আরেকবার তাকে। মোস্তাকিম আর রাহুল ভাইয়াও অবাক হয়েছেন৷ আমি উনার হাত নিজে থেকে খামচে ধরি৷ উনি আমার দিকে তাকিয়ে সবাইকে তাড়া দিয়ে বললেন,

 

–‘আমাকে আসতে বলেছিলি এসেছি!এইবার জলদি বিয়ে কর আমায় যেতে হবে৷ তোদের প্যানপ্যানানির জন্য আমি আর নীতু না খেয়েই বেরিয়ে এসেছি৷’

 

উনার কথা শুনে সবাই বিয়ের দিকে মনোযোগ দেন৷ আমার আত্মায় পানি এসেছে এখন। তারমানে আজ তমা আপুর বিয়ে ছিলো। উনি আমাকে টেনে নিজের কাছে এনে নিচু হয়ে ফিসফিস করে বলেন,

–‘আবার কাঁদা শুরু কর। কারণ ওদের পর তোর আমার আর তোর রেজিস্ট্রি হবে। ওয়েট এন্ড সি।’

———————————

রৌদ্র তপ্ত দুপুরে আমি ঘেমে চিপচিপে হয়ে গেছি। কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে আমাকে নিয়ে পার্কে এসে বসেছেন উনি। গরমে জান যায় যায় অবস্থা। আর ড্রেসের দিকে তাকালে আরো কান্না পাচ্ছে আমার। শয়তান লোক একটা আমাকে ইচ্ছা করে ভয় দেখিয়েছে। তবে রাগ ছিলো অধিকার নিয়ে বলার জন্য। হুহ! রাগ আমারও আছে শুধু বের হয় না মিস্টার কাব্য। একদিন আমার রাগে আপনি ভয়ে গুটিয়ে থাকবেন। উনি আমার এক বেঞ্চিতে বসিয়ে রেখে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছেন। বিরক্ত লাগে! অসহ্য মানুষ একটা। কাব্য ভাইয়া হুট করে যেমন গিয়েছিলেন তেমন হুট করে এসে আমার কোলে মাথা দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ে আর বলেন,

 

–‘বিরবির করে বকা হয়ে গেলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে।’

 

আমি অবাকের শেষ চূড়ায় গিয়ে বসে আছি । একে তো পাবলিক প্লেস তার উপর আমার অনুমতি না নিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমি উনার মাথা ঠেলে উঠিয়ে দেওয়ায় চেষ্টায় লেগে আছি। আর উনি মাথা ঘুরিয়ে আমার পেটে মুখ গুজে শুয়ে রইলেন। উনার গরম নিশ্বাস আমার উপর পড়ছে।অস্বস্তি তে আমার ভেতর কেঁপে উঠছে। আমার নড়াচড়া দেখে উনি নাক ঘষে বললেন,

 

–‘সাইলেন্ট মুডে বসে থেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে। আর বেশি ভাইব্রেট করলে পাবলিক প্লেসে চুম্মা দিবো।আর আমি যা বলি তার থেকে বেশি করি।’

 

উনার কথা শুনে আমি একদম মূর্তির মতো বসে রইলাম। এই লোকের কাজ সম্পর্কে ধারণা হয়ে গেছে। উনি এইবার মাথা উঠিয়ে বললেন,

 

–‘হাত কি নেই তোর? চুল গুলো টেনে দে আমার। নিজে তো শান্তি মতো ঘুমাস আমার ঘুম হারাম করে। এখন আমায় ঘুমাতে দে না হলে…

 

আমি মনে মনে হাজার খানিক বকা দিয়ে উনার কথা মতো চুল টেনে দিতে থাকলাম। ইচ্ছা হচ্ছে সব গুলো চুল টেনে ছিড়ে ফেলি। আস্ত একটা রাক্ষস কেও হার মানাবে এই ছেলে। উনি আবার বিরবির করে বললেন,

–‘আমার অনাগত বাচ্চারা কেমন আছে রে নীতু?তাদের যত্নের হেরফের হলে তোকে উঠিয়ে ফেলে দিবো আমি।’

 

উনার নিশ্বাস ভারী হচ্ছে। ঘুমিয়ে গেলো। এইটুকু জায়গায় উনার মতো হাতির জায়গা হলো কি করে?হাও পসিবল!

 

টানা দেড় ঘন্টা ঘুমিয়ে উঠেছেন মহাশয়। উঠেই এটিটিউড শুরু হয়ে গেছে উনার। আমার পা ব্যাথায় ভারী হয়ে গেছে। উনি উঠেই সামনের দিকে এগিয়ে যায়। প্রচন্ড রাগ লাগলো আমার। আমি দাঁড়াতে পারছি না উনার জন্য আর উনার কোনো হুশ নেই?

–‘আমাকে কি আপনার চোখে পড়ে না। আমি উঠতে পারছি না আর আপনি নিজে একা একাই হেটে চলে যাচ্ছেন। এমন কেন আপনি?’

 

উনি আমার সামনে এসে কোনো কথা না বলেই কোলে উঠিয়ে নিলেন । আচমকা এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরি। আর উনি দ্রু বাকা করে তাকিয়ে বললেন,

 

–‘আজ থেকে কম খাবি তুই। দিনে দিনে হাতির বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে। আমার কোমর শেষ আল্লাহ! এর চেয়ে হাতি কোলে নিলেও হতো।’

 

উনার কথা শুনে রাগে আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। এতো অসভ্য কেন উনি?ইচ্ছা হচ্ছে এখুনি কোলে থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ি।

 

গাড়িতে বসার পর আর একটাও কথা বলেন নি উনি । মুখ আবার গোমড়া করে গাড়ি চালাচ্ছেন । আর এমনটা হয়েছে একটা ফোন আসার পর থেকে। আমি রাগের জন্য কারণ জিজ্ঞেস না করেই বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। উনার যা ইচ্ছা হোক তাকে আমার কি? বাড়িতে পৌছে ফুঁপির থমথমে মুখ দেখে ভয় পেয়ে যাই। সাথে কাব্য ভাইয়াও মুখ ভার করে বাসায় ঢুকলেন। আমি উনার পিছে পিছে ড্রয়িং রুমে যেতেই ভয়ে কাব্য ভাইয়ের পিছে লুকাই। এতোটা সময় সব তো ঠিক ছিলো তাহলে এখন……….

শেয়ার করুন