লাল পাড়ের হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে বসে আছি আমি৷ কাঁচা ফুলের সৌরভ ভেসে আসছে আমার শরীর থেকে৷ গোটা কয়েক মানুষ আমাকে আর কাব্য ভাইয়াকে ঘিরে মাতামাতি করছে৷ কাব্য ভাইয়া নিরলস ভাবে বসে আছে৷ আমিও সেইভাবেই বসে আছি৷ হটাৎ কাব্য ভাইয়া আমার হাতে হালকা ছুয়ে দিতেই আমি তার দিকে তাকাই৷ উনি ইশারা করে বললেন,’ সব শেষ হলে তার সাথে যেন যাই আমি৷ ‘
আমিও ইশারায় ” হ্যাঁ “বলতেই পাশে থেকে কাব্য ভাইয়ার ফুঁপাতো ভাই সাদিদ ভাইয়া আর রাহুল ভাইয়া সহ বাকিরা হই হই করে উঠে৷ কাব্য ভাইয়া চোখ গরম করে তাকাতেই মোস্তাকিম ভাইয়া বললেন,
–‘ চোখ গরম করে লাভ নেই দোস্তো! তোমার উপর চোখ গরম করার মানুষ পাশেই আছে, তাই না নীতু৷ ওহ,সর্যি! ভাবিইইইইই….’
মোস্তাকিম ভাইয়ের কথায় আবারও হাসির রোল পড়ে গেলো । আমি নিজের শাড়ি মুঠ করে ধরে বসে আছি। কাব্য ভাইয়া রাগীভাবে বললেন,
–‘ তোদের ডাকা হয়েছে কি জন্য ?’
পাশে থেকে রাহুল ভাইয়া কাব্য ভাইয়ের মুখে হলুদ লাগিয়ে বললেন,
–‘তোকে হলুদ লাগানোর জন্য ।’
–‘ শুধু ওকে না পিচ্চিকেও লাগানোর জন্য।’ হলুদের বাটি থেকে হলুদ উঠিয়ে আমার মুখে লাগিয়ে দিয়ে বললেন তমা আপু । এতোটুকু সময়ের মধ্যে সব আসলো কি ভাবে আর এতো আয়োজন হলো কিভাবে সেটা ভেবেই আমি পাগলপ্রায়। ফুঁপি তখন আমায় ডেকে শাড়ি আর ফুলের গহনা গুলো দিয়ে বলেছিলো,
–‘ নীতু ,আম্মু! আজ তোর আর কাব্যের হলুদ হবে আর কাল ধর্মীয় ভাবে বিয়ে ।’
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ফুঁপি তাড়া দিয়ে বলল,
–‘তোর হাজার প্রশ্নের উত্তর আমি শর্ট করে দিচ্ছি,
আমি প্রশ্নের উত্তরের জন্য তাকিয়ে আছি ফুঁপির দিকে । ইরা রুমের দরজা বন্ধ করতেই ফুঁপি পেটিকোট আর ব্লাউজ আমার হাতে দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পাঠিয়ে বলল,
–‘ এইগুলো পড়ে জলদি আয় আমি তোর প্রশ্নের উত্তর শাড়ি পড়াতে পড়াতে দিবো কারণ হাতে একদম সময় নেই।’
আমিও বাধ্য মেয়ের মতো সব শুনলাম । আমি ফিরে আসতেই ফুঁপি শাড়ি পড়াতে নিলে ফুঁপির হাত ধরে বললাম,
–‘ আমি যতদূর ভাবতে পারছি,আজ আমার আর কাব্য ভাইয়ার হলুদ !কিন্তু কেন? সে তো বিয়ে করে,,
ফুঁপি আমার কথার মাঝে ইরাকে ইশারা দিয়ে দেখাতেই আমি চুপ হয়ে যাই। কারণ ওরা এখনো বিয়ের ব্যাপারটা জানে না । ফুঁপি ইরাকে সব হয়েছে কিনা দেখার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিতেই আমি আবারো বলি,
–‘ কাব্য ভাইয়ার আর আমার বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে এইটা এখানের সবাই জানে ফুঁপি,তাহলে আবার এইসব কেন? ‘
ফুঁপি আমার শাড়ি পেঁচিয়ে কুঁচি ঠিক করে বললেন,
–‘তোরা বাসায় থেকে ভার্সিটিতে যাওয়ার পর আমির বাসায় এসেছিলো পুলিশ নিয়ে ।’
ফুঁপির কথা শুনে জোরে ‘মানে’ বলতেই ফুঁপি বললেন,
–‘মানে,আমির পুলিশকে বলেছে তোকে কাব্য জোর করে উঠিয়ে এনেছে!”আমির” কতটা খারাপ ভাবা যায়? ও বাড়িতে পুলিশ নিয়ে এসেছে কাব্যকে মিথ্যা কেসে ফাঁসাতে।’
আমি ভয়ে ফুঁপির হাত আঁকড়ে ধরলাম । ফুঁপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
–‘পুলিশের সামনে আমি আর তোর ফুঁপা তোদের রেজিস্ট্রি পেপার দেখাতে আমির আবার বলে এইটা নাকি ভুয়া । আমি উপায় না পেয়ে কাব্যকে ফোন দিই।’
প্রিন্সিপালের রুমে থাকতে কাব্য ভাইয়ার ফোন এসেছিলো আর সে ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তারমানে ওইটা ফুঁপির ফোন ছিলো । আমি কুঁচি ধরে বললাম, ‘তারপর আমিরকে কিভাবে মানালে!’
ফুঁপি লাস্ট কুঁচি ঠিক করে বলল,
–‘ কাব্যকে তো চিনিস, ও ডিরেক্ট বলেছে তুই ওর বউ আর বিশ্বাস না হলে কাল যেন বাসায় আসে ,তোদের ধর্মীয় ভাবে কাল বিয়ে হবে । পুলিশ আমিরকে নিয়ে বেরিয়ে যায় আর বলে যায়,কাল আসবে তারা। কিন্তু আমির নাছোড়বান্দা সে শাসিয়ে যায়,তোকে যেখানে পাবে সেখান থেকেই উঠিয়ে নিবে। কারণ সে তোদের বিয়ে মানে না আর তার দৃঢ় বিশ্বাস তোদের বিয়েটা নাটক ।’
ফুঁপির কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম । এই কথাটা আমিও বিশ্বাস করতাম না আর আমির তো চালাক মানুষ ।আমি আবার বললাম,
–‘ তাহলে এইসব কি আমির কে বিশ্বাস করানোর জন্য ?’
ফুঁপি হেসে বলল,
–‘একদম না,কাব্যের সাথে আমার নীতুকে একদম পাকাপোক্ত ভাবে বেঁধে রাখার জন্য। যাতে কেও প্রশ্ন না করতে পারে,তুই কে?’
কাব্য ভাইয়ার সাথে বেঁধে রাখার জন্য? সেটা তো এমনিতেও আছি । আমি আবার বললাম,
–‘ ফুঁপা আর বাবা মেনে নিবে হ্ঠাৎ করে এইসব হওয়ায়।’
ফুঁপি কিছু একটা খুজছে! আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘ কাব্য বুধবারে চলে যাবে! ও ছাড়া তোকে প্রোটেক্ট করার কেও নেই। বড় ভাই তার ব্যবসায়ীক ঝামেলার কথা আমায় খুলে বলেছে। আর কি জন্য তোকে এতো তাড়াতাড়ি ওই আমিরের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো সেটাও বলেছে । সব শুনে আমি স্তব্ধ হয়েছিলাম । আমির তোর বাবার কোম্পানির নামে কেইস করেছে আর সেটা থেকে মুক্ত পাওয়ার উপায়ে তোকে চেয়েছে। কতোটা নিঁচু মনের ভাবা যায়? তাই তারা দুজনে মিলেই আবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তোদের বিয়ে দেওয়ার । কাব্য এমনিতেও চলে যাবে তাই সবাই সব মেনে নিয়েছে,,,,আর আমি মনে করি,কাব্য তোর ভাগ্যে ছিলো তাইতো এতো কিছু । তা না হলে বল তো,আমার ছেলে কেন এতোবড় একটা স্টেপ নিবে।’
ফুঁপির কথা শুনে সব মেনে নিয়েছি। তার আর আমার বিয়েটা যেখানে হয়ে গিয়েছে সেখানে আমার কি বলার থাকতে পারে? তখন না হয় জানতাম না কিন্তু এখন জেনেই তার সাথে আবদ্ধ হই । সে তো চাইলেও আমার স্বামী না চাইলেও আমার স্বামী। তার সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ আমি।যে সম্পর্কে কোনো নাম নেই,,
______________________
সোনালি রাঙা চাঁদের আলো এসে পড়ছে ছাদে৷ পূর্ণ থালার মতো চাঁদ উঠেছে আজ সেই রাতারগুলের রাতের মতো৷ কাব্য ভাইয়া আমার পাশেই বসে আছেন আর রাহুল ভাইয়াদের সাথে কালকের প্ল্যানিং করে নিচ্ছেন৷ তার গাঁলে,হাতে হলুদ ছোঁয়ানো৷ চাঁদের আলো আর লাইটের হালকা আলোয় সেই হলুদে মোড়া কাব্য ভাইকে দেখে কিছু একটা হচ্ছে আমার মনের কিনারায়৷ যে মানুষটাকে আমি এড়িয়ে চলতাম আর সেই কিনা সারাজীবনের পথচলা আমার৷ কোনোকিছুতে খুশী হতে পারছি না৷ তবে তার একটা কথা মনে পড়ছে, ‘যা হচ্ছে হতে দেনা নীতু! জানিস তো অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়৷ ‘
আমি চোরা চোখে তাকে দেখে চলেছি৷ আজ উনার মুখটা সবচেয়ে সুন্দর ভাবে অনুভব করলাম আমি৷ নিতান্তই সে একজন সুপুরুষ! খোঁচা খোঁচা দাড়ি৷ বা পাশের উঁচু দাত৷ হাসলেই সেই দাঁত উঁকি দেয়৷ দেখতে অমায়িক লাগে৷ ইশ!এতো সুন্দর বুঝি কারো হাসি হয়? তার সবকিছু সুন্দর৷ তবে কি তার প্রতি আমার ভেতরে কিছু একটা আছে? কিন্তু কেন?সে আমার স্বামী এইটা বলে৷ তাকে তো আমি মানতে পারছি না আবার দূরে সরাতেও পারছি না৷ ঘুরেফিরে একটা কথাই মনে হচ্ছে, ‘ যা হচ্ছে সেটা ভালোই হচ্ছে৷ কারণ এই মানুষটা ভুল করতেই পারেন না৷’
‘রুপালি থালার ন্যায় চাঁদের আলোয়,
দেখেছিলাম তাকে!
‘অদ্ভুত এক মায়াময় তার মুখের হাঁসি,
অজানা এক ভালোলাগার,
এই খেলায়! ‘
বিরবির করে এই কথাটুকু বলতেই আমার গালে ঠান্ডা কিছুর ছোঁয়া পেতেই চমকে উঠি আমি৷ কাব্য ভাইয়া হলুদ লাগিয়েছে আমার গালে৷ আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সে আমি আর ফুল ছাড়া কোথাও কেও নেই৷ উনি দুইহাতে হলুদ উঠিয়ে আমার গালে আবার লাগিয়ে বললেন,
–‘ আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছিস মনে হচ্ছে? প্রেমে পড়িস না আমার বউয়ের কষ্ট হবে৷ ‘
আমি দ্রুকুচকে তাকাতেই উনি হেসে উঠেন৷ আবার সেই দাঁতের ঝিলিক৷ আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি৷ উনি নিজের গালের সাথে আমার গাল ঘষা দেন৷ আমি মূহুর্তেই চমকে ‘ আউচ ‘ বলে আমার গালে হাত দিই৷ তার দাড়ির খোঁচা আমার গালে লেগেছে৷ উনি আবার হেসে বললেন,
–‘ তুই তো হলুদ লাগাবি না তাই আমিই লাগিয়ে নিলাম৷ ‘
উনার কথা শুনে পুরো হলুদের বাটি উঠিয়ে তার মুখে ঢেলে দিতেই উনি আমার হাত ধরে ফেলেন৷ আমি আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ হাত ছাড়ুন!আপনাকে হলুদ লাগাই নি বলছিলেন না? এখন লাগাতে দিচ্ছেন না কেন!’
উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
–‘ আমি তো হাতের ছোঁয়ার হলুদ লাগাবো না৷ ‘
আমি পিছন দিকে ঝুকে বললাম,
–‘ তাহলে? ‘
উনি আবার আমার গালের সাথে তার গাল লাগিয়ে হলুদ লাগিয়ে দিলেন৷ আমি চোখ বন্ধ করে বসে আছি৷ আজ সব কিছুতে কাব্য ভাইয়ার না নিজের স্বামীর গন্ধ পাচ্ছি!
#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৬
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
রাত ১২ঃ৩৪! চারদিকে নিস্তব্ধ অন্ধকার৷ ছাঁদে এখনো বসে আছি আমি আর কাব্য ভাইয়া৷ হলুদ দিয়ে আমায় হলুদ পরী বানিয়ে দিয়েছেন৷ এইটা উনার কথা,আমাকে নাকি হলুদে রাঙানো পরী লাগছে৷ ঘুম চোখের পাতায় পাতায় হানা দিচ্ছে৷ সোফায় হাতের কুনুই রেখে গালে হাত দিয়ে ঝিমাচ্ছি৷ আমার হাতের উপর তার হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে সোজা হয়ে বসি আমি৷ বিরক্তির সুরে বললাম,
–‘ আমি ঘুমাবো, আপনার ঘুম না আসতে পারে কিন্তু আমি তো মানুষ! আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে৷ সারারাত থাকুন আপনি৷ আর কাওকে লাগলে মশা তো আছেই ওদেরকেই না হয় হলুদ লাগাবেন৷ ‘
আমার কথায় উনার কোনো ভাবান্তর হলো না৷ আমার বা হাত তার কোলের উপর রেখে অপর সাইডে ঘুরে মোবাইলে কিছু একটা দেখছেন মনোযোগ সহকারে৷ আমি হাত টেনে আবার ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিতেই উনি চিল্লিয়ে বলে উঠেন,
–‘ ধূর,এতো প্যাঁচানো ডিজাইন কেন দেওয়া লাগবে৷ মাথা ঘুরে গেলো আমার৷ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় এতো মনোযোগ দিলে আজ নাম্বার ওয়ান টপ স্টুডেন্টের খাতায় নাম থাকতো৷ ‘
আমি তার কথায় ঘুম ঘুম চোখেই কঁপাল কুঁচকে বললাম,
–‘ আপনি নাম্বার ওয়ান লিস্টেই আছেন কাব্য ভাইয়া,’
উনি আবারও আমার কথার তোয়াক্কা না করে কাঁকে একটা ফোন দিলেন৷ ওইপাশে ফোন রিসিভ হতেই গম্ভীর ভাবে বললেন,
–‘ আমার রুমের,কাবার্ডের সাইডের টেবিলের ড্রয়ারে একটা প্যাকেট আছে৷ সেইটা ইমিডিয়েটলি নিয়ে ছাদের দরজার সামনে টোকা দে৷ ‘
ফোনের অপরপ্রান্তের মানুষ যা বলল তা শুনতে না পেলেও কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে লজ্জায় পড়ে যাই আমি৷ ফোন পাশে রেখে আমার হাত দেখে বললেন,
–‘ নীতু…..’
–‘ হুম,বলেন৷ আমি চোখ বন্ধ করেই উওর দিলাম৷ তার ঠোঁটের ছোঁয়া হাতে পেতেই হাত সরিয়ে ফেলতে নিলেই সে আরো টেনে নিয়ে বলল,
— ‘ আমায় তোর চোখে কেমন লাগে রে!…
আমি ভাবেলাশীন ভাবে উত্তর দিলাম,
–‘ কেমন আবার লাগবে! ভাইয়ের মতোই লাগে৷ ‘
–‘ হোয়াট…ভাই মানে? আমি তোর বর নীতু৷ কালকের পর থেকে পার্মানেন্ট হয়ে যাবো৷ ‘
আমি উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
–‘ আপনি আমায় মেনে নিবেন আপনার বউ হিসেবে? ‘
–‘ না! ‘
উনার কথা শুনে ধাক্কা খেলাম একটা৷ কষ্ট হলো৷ তাহলে জোর করে আমি তার সাথে আবদ্ধ৷
কোথা থেকে একরাশ পানির ফোঁটা ভীড় করলো চোখের কোণে৷ পানিটুকু মুছে নিলাম৷ কেন তার ” না ” মেনে নিতে পারছি না৷ হয়তো তার নিয়তি আমার সাথে অজানা কারণেই বেঁধে গেছে, এই নিয়তি নিয়েই চলতে হবে ভেবেই মানতে পারছি না৷ আচ্ছা!তার জন্য কি আগে আমার মনে অনুভূতি ছিলো? না এখন আছে?
আমার ভাবনার সুতো ছিড়লো দরজায় কারো আঘাত করার শব্দে৷ কাব্য ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে দরজার সামনে যেতেই রাহুল ভাইয়া আর সিনান ভাইয়া দরজা দিয়ে উঁকি মেরে আমাকে দেখে মস্ত এক হাসি দেয়৷ কাব্য ভাইয়া রাহুল ভাইয়ার পিঠে ধুম করে একটা থাপ্পড় মারতেই আমার হাসি পায়৷ সিনান ভাইয়া থাপ্পড়ের শব্দে সরে দাড়ান৷ রাহুল ভাইয়া পিঠে হাত দিয়ে কাব্য ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে বললেন,
–‘ আজ তোমার সময় তাই বউয়ের সামনে ঠাসঠুস মারছো বন্ধু! এককালে আমরাই তোমার সব ছিলাম আর এখন বউ হয়েছে তোমার আপন৷ হারামি, বউয়ের হাতে উঠতে বসতে মার খাবি তুই৷ ‘
রাহুল ভাইয়ার কথা শুনে আমি উচ্চস্বরে হেঁসে উঠতেই কাব্য ভাইয়া আমার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে তাকান৷ আমি মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছি৷ আর সিনান ভাই তার পিঠ বাঁচাতে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন,
–‘ হলুদ রাতেই সব শেষ করলে বিয়ের রাতে কি করবা,, ‘
উনি আর কিছু বলার আগেই কাব্য ভাইয়া মোবাইল বের করে বললেন,
–‘ তোর ছয় নাম্বার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার আমার কাছে আছে! তুই যে আজ অন্য মেয়ের সাথে ফ্লাটিং করেছিস তা আমি সুন্দর করে উপস্থাপন করবো?’
সিনান ভাইয়ার হাসি মুখ মূহুর্তেই চুপসে যায়৷ সে রাহুল ভাইয়ার হাত টেনে যেতে যেতে বললেন,
–‘ অন্যের পারসোনাল টাইমে আঘাত দেওয়া বড্ড অন্যায় তুই জানিস না? এখানে আহম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছিস…শালা লুচ্চা! ‘
তাদের দিকে তাকিয়ে কাব্য মুচকি হেসে পড়ে থাকা প্যাকেটটা নিয়ে আমার কাছে এসে বসেন৷ আমি দ্রু কুচকে, ‘ এইটা কি ‘ জিজ্ঞেস করতেই উনি হাসি দিয়ে বলে,
–‘ নতুন বউয়ের হাতে মেহেন্দি না থাকলে তাকে নতুন বউ বউ লাগে না৷ ‘
আমি প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে বললাম,
–‘ এইটা কবে কার নিয়ম! আপনি বুঝি মেহেন্দি আনিয়েছেন? ‘
–‘ না ,লাল রাঙা ভালোবাসা আনিয়েছি৷ ‘
আমি কম্পিত চোখে তার দিকে তাকাই৷ ” ভালোবাসা! ” কথাটা বড্ড মোহনীয় শুনেচ্ছে তার মুখে৷ উনি আমার হাত আবার তার কোলের উপর নিয়ে প্যাকেট আমার হাতে দিয়ে বললেন,
— ‘ কিভাবে খুলতে হয়! আমি জানি না৷ একটু খুলে দে তো৷ ‘
আমি কথা না বাড়িয়ে টিউবটা সেট করে উনার হাতে দিতেই উনি দ্রু কুচকে ফেলেন৷ বিরবির করে বললেন,
–‘ কাব্য তোর জীবনে আর কি কি করতে হবে এইটা তার ফাস্ট নমুনা৷ ‘
–‘ আমার হাত নষ্ট হলে… ‘
–‘ হুশশ! আমি যা করি সেটা পার্ফেক্ট হয়৷ পার্ফেক্ট মিনস পার্ফেক্ট৷ ‘
আমায় আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি টিউব থেকে মেহেদী বের করার হাজার চেষ্টা করতে লাগলেন৷ তার চেষ্টা দেখে বড্ড মায়া হলো আমার৷ আমি উনার হাত থেকে মেহেদীর টিউব নিয়ে বের করে দিয়ে বলি, ‘ এইভাবে করতে হয়৷ ‘
উনি বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে আমার থেকে মেহেদীর টিউব ছিনিয়ে নিয়ে ডিজাইন করার মনোযোগ দিলেন৷ হালকা হাওয়ায় তার অবাদ্ধ সিল্কি চুল গুলো উড়ে বেড়াচ্ছে৷ উনি মাঝে মাঝে হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন! তার চুলগুলোকে আমি আলতো করে হাতের মুঠোয় নিই৷ তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে! সেই উঁচু দাঁতের নজর কাড়া হাসি৷ উনি গালে হাত দিতেই হাতে লেগে থাকা অল্প মেহেদী তার গালে লাগতেই আমি আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে সেইটুকু মুছে দিতেই উনি চমকে আমার দিকে তাকায়৷ অনেকক্ষণ তাকায়!তার চোখের ভাষা স্পষ্ট! সেই চোখের ভাষা পড়তে পারছি আমি৷ ভাষা গুলো নীরব, কিন্তু তারা বলছে, ‘ এই আঁচলের ছোঁয়া যেন সর্বক্ষণ আমার পাশে!আমার ক্লান্তিতে ছায়া হয়ে থাকে৷ ‘
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি৷ ইশ! এই কাজটা করার কি দরকার ছিলো তোর নীতু? না করলে কি এমন হতো! না,,এই কাজটুকু না করলে এতোটা ভালোলাগার ছোঁয়া তোর মনের মাঝে আসতো বুঝি?
— ‘ ফিনিশ! ইট’স পার্ফেক্ট৷ যদিও সুন্দর হয় নি তাও আমি দিয়েছি বলে কথা৷ ‘
পুরো দেড় ঘন্টা লাগিয়ে উনি শেষ করেছেন মেহেদী দেওয়া৷ আমি জেগে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম৷ উনার চিল্লানি শুনে উঠে পড়ি৷ আমি ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি উনি একরাশ আনন্দ নিয়ে হাত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলছেন৷ আমায় হালকা ধাক্কা দিয়ে বললেন,
–‘ দেখ, ওই আলতু ফালতু প্যাচানো ভিডিওর চেয়ে আমারটা বেস্ট হয়েছে৷ ‘
আমি ঢুলতে ঢুলতে উনার বুকের মাঝে শুয়ে বললাম,
–‘ কাব্য ভাই সব সময় পার্ফেক্টটা করে আপনি জানেন না? তার সব কিছু পার্ফেক্ট…. ‘
সুন্দর মূহুর্ত আমার ঘুমের জন্য নষ্ট হলেও সে আমায় নিয়ে আরো অনেকক্ষণ বসে ছিলো সেই ছাদের মাঝে৷ একা! তার মতো৷
______________________
ভোরের শীতল হাওয়া চারদিকে প্রাণবন্ত ভাবে বইছে৷ তাদের ছুটোছুটি যেন নিরলস! পাখিরা নীড় ছেড়ে ব্যস্ত ভাবে উড়ছে৷ কোথায় যেন একটা কোকিল ডাকছে৷ এই সময়টা বুঝি কোকিল ডাকে?ক্ষীণ স্বরের সেই আওয়াজে আমার ঘুম ছুটে গেছে৷ আলতো চোখে তাকিয়ে নিজেকে রুমের মাঝে আবিষ্কার করি৷ নিজেকে রুমের মধ্যে দেখে অবাক হয়ে উঠতেই দেখি ইরা আমার হাত ধরে মুচকি হাসছে৷ আমি উঠে বসে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি হাসছে কেন৷ ও আমাকে চোখ মেরে বলল,
–‘ হাও রোমান্টিক বনু! দ্যা গম্ভীর কাব্য ভাইয়া এতো রোমান্টিক জানলে আমি কখনো উনায় তোকে দিতাম না৷ ‘
আমি ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি৷ হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি, হাতজোড়া মেহেদী পড়ানো সুন্দর ডিজাইন করা৷ তার মাঝে লাভ শেপের মধ্যে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা,
‘ রাতের আঁধারে আমার নীলাম্বরী তুমি,’
‘ অদ্ভুদ মোহমোয় মায়াবী তুমি! ‘
‘ জানি না, অকারণের সুখের মূহুর্ত তুমি,
‘ তোমাতে সিক্ত আমি,
‘ অকারণের ছোট অনুভূতির দোলা তুমি! ‘
‘ তুমি যে আমারি৷ ‘
তার নিচে ছোট করে লিখা, তোর কাব্য ভাই নামক বর৷ ‘
লজ্জায় আমার গাল লাল হয়ে উঠলো মূহুর্তেই৷ পাশের রুম থেকে গিটারের আওয়াজের সাথে ভেসে আসছে,
‘ লজ্জায় রাঙানো রূপবতী তুমি….
‘ ভালোবাসার মোহনা তুমি!’
‘ আমি যে বড্ড ভালোবাসি…..’
#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৭
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
বাড়িতে পুরো বিয়ে বিয়ের আসর৷ মানুষের কোলাহল! এতো এতো মানুষের ভীরের মাঝে কাব্য ভাইয়া আমাকে নিয়ে ছাঁদের চিলেকোঠায় আটকে রেখেছে৷ উহু,,আটকে রাখে নি তার সো কল্ড কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে এসেছে৷ আমি দেয়ালের সাথে একদম লেগে দাঁড়িয়ে আছি আর উনি এক হাত দেয়ালে রেখে আমার দিকে ঝুকে দাঁড়িয়ে হাতের মেহেদী দেখে চলছেন৷ গভীর ভাবে দেখছেন তিনি মেহেদী! তার উত্তাপ নিশ্বাস আমার হাতের উপর পড়ছে৷ আমার হার্ট বিট ক্রমেই বেড়ে চলছে৷ লোকটা আমার কাছে আসলে হার্ট নামক যন্ত্রটা একদম কথা শুনে না সেইটা তড়িৎ গতিতে হাতুড়ি পিটতে থাকে৷ আমি কম্পিত কন্ঠে বললাম,
–‘ ফুঁপি ডাকছে আমায়..!’
–‘ তোকে বলেছে? ‘
–‘ আমি শুনতে পেলাম৷ ‘
উনি আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন৷ সরু চোখে বললেন,
–‘ মৃগী রোগীদের মতো কাঁপছিস কেন এইভাবে? আমি কিছু করেছি তোকে! ‘
আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি কাঁপছি আমি৷ উনি আমার কাধে হাত রেখে চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–‘ কুল..এতো কাঁপাকাঁপির কিছুই হয় নি৷ তবে হবে,,আজ রাতেই হবে৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ কি হবে! ‘
উনি আমার কঁপালে চুমু দিয়ে বললেন,
–‘ অনেক কিছুই হবে! তোর এতো জানা লাগবে কেন? বেশি পেকে যাচ্ছিস দিন দিন৷ এখন সোজা রুমে ঢুকবি দেন গোসল করে আমার কাছে আসবি..তোকে নিয়ে পার্লারে যাবো ভুত সাজাতে৷ এমনি তো ভুত আছিস আরেকটু না হয় বানিয়ে আনলাম৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে তাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,
–‘ ভুত হলে হবে আপনার বউ৷ ‘
–‘ হ্যাঁ,,আমার বউ তো ভুত’ই! ‘
এই কথা বলে উনি হাসলেন৷ উনার হাসির জন্য দ্রু কুচকে তাকাতেই নিজের বোকামির কথা বুঝতে পারি৷ বউ তো আমি..
__________________
সকাল দশটার সূর্যের আলো আজ মোহনীয় লাগছে আমার কাছে৷ গাড়িতে করে আমি আর কাব্য ভাইয়া কোথাও একটা যাচ্ছি৷ গাড়ির পেছনের সিটে আমাকে সাজানোর জন্য সমস্ত কিছু রাখা৷ পার্লারে ফুঁপি আর ইরা নিয়ে যেতে চাইলে কাব্য ভাইয়া জেদ করে, সেই নাকি নিয়ে যাবে আমায়৷ তার প্রত্যেকটা কাজে ব্যাঘাত দেওয়া লাগবেই লাগবে৷ আমি মনমরা হয়ে বসে আছি৷ উনি লুকিং গ্লাসে নিজেকে দেখে আমার উদ্দেশ্য বললেন,
–‘ আজ আমাকে বড্ড হ্যান্ডসাম লাগছে! দেখেছিস? ‘
আমি জবাব দিলাম না৷ তার কি প্রয়োজন ছিলো আমার সাথে আসার সেটাই তো বুঝতে পারছি না৷ আব্বু,জিনিয়া সবাই কাব্য ভাইয়াদের বাসায়৷ গাড়ি আমাদের কলোনী তে যেতেই আমি চমকে উঠি৷ আমাদের বাসার আশেপাশে পার্লার নামক কিছু আছে বলে আমার জানা নেই৷ আমি দ্রু কুঁচকে উনায় বললাম,
–‘ এখানে এনেছেন কেন? ফুঁপি কিন্তু তিনটার আগে বাসায় পৌছাতে বলেছে৷ ‘
উনি গাড়ি আমাদের বাসার সামনে পার্ক করতে করতে বললেন,
–‘ টাইম এন্ড টাইড ওয়েট’স ফর নান৷ তোর চেয়ে টাইমের জ্ঞ্যান আমার বেশী আছে! তাই চুপ করে বসে থাক৷ ‘
উনি নেমেই জিনিস গুলো হাতে উঠিয়ে বাসার ভেতর যেতে থাকলেন৷ পাগল হওয়ার আর বাকি নেই কিছু! আজ ফুঁপির বকা একটাও মাটিতে পড়বে না৷ সাথে আমিরের হুমকি….! উনি পিছন ঘুরে বিরক্তির স্বরে বললেন,
–‘ গাড়িতে বসেই সব করতে চাস তুই? ওকে আমি আসছি৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে নেমে দাঁড়াতেই জুঁহি আপু কোথা থেকে এসে জড়িয়ে ধরলেন আমায়৷ আমি ভয় পেয়ে যাই৷ কাব্য ভাইয়া আবারও বিরক্ত হয়ে বললেন,
–‘ জড়িয়ে ধরার পরেও সময় পাবি গাঁধী! আমার বউকে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য ডেকেছি তোকে !এমন জড়িয়ে ধরার জন্য না৷ ‘
জুঁহি মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
–‘ ইউ স্টপ,,রোমান্টিক পোলা৷ হুটহাট বিয়ে করছিস আগে না জানিয়ে, বউকে সাজানোর সময় আমাকে মনে পড়েছে৷ ‘
কাব্য ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দরজা খুজে বাসায় প্রবেশ করতেই জুঁহি আপু গদগদ হয়ে বলল,
–‘ আ’ম,সো এক্সসাইটেড নীতু! আমার এই প্রফেশনে আসার পর আজ প্রথম কোনো বর তার বউকে সাজিয়ে দিবে সেটা দেখতে পাবো৷ হাও রোমান্টিক ইয়ার! ছবি তুলে আপলোড করে আজ ভাইরাল হয়ে যাবো ড্যাম সিউর৷ ‘
–‘ বর বউকে সাজাবে মানে? ‘ আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাকে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে যায় জুঁহি আপু৷ কাব্য ভাইয়ার চাচ্চুর মেয়ে জুঁহি আপু৷ আমায় শুধু ফিসফিস করে বলল,
–‘ রোমান্টিক বোম পেয়েছিস তুই! সামলে রাখিস আমার ভাইটাকে৷ তোকে সে অনেক ভালোবাসে৷ ‘
আপুর কথা শুনে মূহুর্তেই দুনিয়া থমকে যায় আমার৷ আমাকে ভালোবাসে? সত্যি? তার মতো মানুষ ভালোবাসতে জানে বুঝি?
মনের কোণায় জানান দিলো, ‘ তার মতো আর কেও এতো ভালোবাসতে পারে না নীতু! সে যে কাব্য…কাব্যিক তার ভালোবাসা৷ ঠিক রৌদ্দুরে হঠাৎ আগমণ বৃষ্টির মতো৷ ‘
_____________________
আমার রুমের মাঝে বসে আছি তিনজনে৷ আমি রীতিমতো জুঁহি আপুর আর কাব্য ভাইয়ার ঝগড়ার জন্য হাঁপিয়ে উঠেছি৷ কারণে অকারণে ঝগড়া করছেন দুইজন৷ আমি অফ হোয়াইট কালারের গোল্ডেন পাড়ের লেহেঙ্গা পড়ে চুঁপ মেরে বসে আছি৷ লেহেঙ্গা নিশ্চয়ই কাব্য ভাইয়ার পচ্ছন্দের৷ উনার চয়েস এতো ভালো সেটা কখনো জানতাম না৷ হুট করে সব হলেও তিনি ঠিক আমার সপ্নের মতো করে সব করছেন৷ জুঁহি আপু কাব্য ভাইয়ার সাথে পেরে না উঠে আমার চোখে আইলাইনার লাগিয়ে রেগে চলে যায়৷ কাব্য ভাইয়া তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাঁসে! রহস্যময় হাসি৷ আমি ভয়ে বললাম,
–‘ আপনার জন্য আজ সব উল্টাপাল্টা হচ্ছে কাব্য ভাই..! জুঁহি আপুকে যেতে দিলেন কেন ?এইবার আমি সাজবো কি ভাবে? মানুষ জীবনে বিয়ে একবার করে আর আপনি…’
–‘ হুশ… তোকে একবার বিয়ে করবো কে বলেছে? হাজার হাজার বার তোকে..’
উনি তার কথা সম্পূর্ণ না করেই চুপ হয়ে গেলেন৷ তারপর এক গাল হেঁসে বললেন,
–‘ এই আইলাইনার ফাইলাইনার লাগানোর জন্যই ওই গাঁধী টাকে ডাকা৷ ‘
–‘ মানে? তাহলে আমাকে সাজাবে কে!’
–‘ কেন আমি..!’
আমি উনার কথা শুনে পিছিয়ে যাই৷ চোখেমুখে হাত দিয়ে ঢেকে বললাম,
–‘ এই একদম না! আপনি পারেন কিছু? শেষে আমাকে সত্যি ভুত লাগবে৷ ‘
উনি আমার সামনে এসে হাত সরিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন,
–‘ ইউ ট্রাস্ট মি? ‘
তার কন্ঠে কিছু একটা ছিলো৷ আমি দুদিকে মাথা দোলালাম৷ উনি মুচকি হেসে বললেন,
–‘ তাহলে আমাকে আর জ্বালাস না প্লিজ..! আমার কাজ করতে দে৷ এইটা আমার সপ্ন৷ নিজের বউকে নিজের হাতে সাজাবো আমি৷ ‘
নিজের বউ! কথাটা শুনে আমার হার্ট অনেক জোরে বিট করে উঠলো৷ না চাইতেও ভালো লাগলো অনেক৷ উনি উঠে গিয়ে কালো গোলাপ, লাল গোলাপ, গোলাপি গোলাপ নিয়ে আসলেন সেই সাথে নাম না জানা অনেক ফুল৷ আমি দ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি৷ উনি নিজে একমনে আমাকে ফুল দিয়ে সাজাচ্ছেন৷ আমি নড়তেই বারে বারে ধমকে উঠছেন উনি৷ আমার কান্না পাচ্ছে সেই সাথে অদ্ভুদ সুখ৷ এমনটা আগে কখনো হয়েছে কারো সাথে?এমন সৌভাগ্য বুঝি আমার কঁপালেই লিখা ছিলো? উনি পিছন ঘুরতেই তার মোবাইল দিয়ে কয়েকটি ছবি তুলে নেই আমি৷ আজ আমার রাজ্যের সুখ লাগছে৷ আজ মনে হচ্ছে, সেদিন কাব্য ভাইয়া আমাকে বিয়ে করে ভালো করেছিলেন৷ তা না হলে আজকের কাব্য ভাইয়া আমি পেতাম কোথায়৷ উনায় আঁকড়ে ধরে রাখতে ইচ্ছা হচ্ছে!
___________________
কাব্য ভাইয়াদের বাসায় পৌছাতেই আরেক দফা ভালোলাগার ছোঁয়া মনেপ্রাণে বয়ে যায়৷ গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই বাসার সবাই হই হই করতে করতে এগিয়ে আসে৷ সেই সাথে উপর থেকে ফুলের বর্ষণ৷ ফুলের বৃষ্টি৷ আমি খুশিতে কাব্য ভাইয়ার হাত চেঁপে ধরি৷ উনিও মুচকি হাসেন৷ এতোটা সুন্দর আজকের দিনটা না হলেই পারতো৷ সব কিছু সাজানো গোছানো সপ্নের মতো৷ আর সেই সপ্ন তৈরি করেছেন কাব্য ভাইয়া৷
বাসার সবাই আমাদের দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে । সিনান ভাইয়ারা চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
–‘ মামা তো পুরোই রোমান্টিকের ডিব্বা । ইশ! আমাদের একটু শিখাতে তে পারিস । এক কাজ কর ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বউ সাজানোর দায়িত্ব নিয়ে নে । ‘
কাব্য ভাইয়া সিনান ভাইয়ার পেটে গুঁতো দিয়ে বললেন,
–‘ আমি শুধু আমার বউ সাজাতে পারি হারামির দল । সব সিক্রেট ফাঁস করার অপরাধে তোকে ফাঁসিতে ঝুলাবো বিয়ের পর।’
ফুঁপি কাব্য ভাইয়ার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
–‘ এতো সুন্দর করে তুই সাজিয়েছিস ওকে? মাশাআল্লাহ…!কারো নজর না লাগুক আমার ছেলের বউয়ের উপর । ‘
আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম । একটু পরেই কাজি সাহেব আমার সামনে বসতেই আমি আশেপাশে তাকাই । আমির নামক অশুভ ছায়া এলো কিনা সেই ভয়ে জড়সড় হয়ে আছি । আমাকে কবুল বলতে বললে আমি চুঁপ হয়ে থাকি । কাব্য ভাইয়া আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
–‘ যে চিন্তা করছিস সেইটা বাদ দে,,,! আর বাসরের চিন্তা কর ,তাই জলদি কবুল বলে ফেল । ‘
আমি উনার কথা শুনে কবুল বলতেই ….😶
#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৮
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
বাসর ঘর নামক ফুলের সাম্রাজ্য বসে আছি আমি৷ হালকা অন্ধকার ঘরের মতো আমার মনের প্রতিটি কোণে অস্বস্তি নামক বাক্যটি ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে৷ বেডের প্রতিটা কোণায় কোণায় বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজানো৷ আর রুমের প্রত্যেকটা জায়গায় মোমবাতি আর প্রদীপ দিয়ে সাজানো৷ প্রায় এিশ মিনিট আগে আমাকে কাব্য ভাইয়ার রুমে বসিয়ে দিয়ে গেছে সবাই৷ ভয় হচ্ছে…এতোদিন ঠিক ছিলো সব তবে এই ঘরটায় আসার পর থেকে কেমন যেন লাগছে৷ বাইরে সবার হই হুল্লোড়ের শব্দ ভেসে আসছে৷ তার মধ্যে সিনান,রাহুল ভাইয়ার বলা কথায় বুঝতে পারলাম,টাকা না দিলে বাসর ঘরে ঢুকতে দিবে না তারা৷ কাব্য ভাইয়া পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন৷ আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম৷ এইভাবে টাকা চাওয়া চাওয়ি চলতে থাকলে সময় কেটে যাবে৷ সাদা রঙের একটা ফুল থেকে সুন্দর মন মাতানো সৌরভ ভেসে আসছে৷ সেই ফুল হাতে নিতেই দরজা খোলার শব্দে কেঁপে উঠি৷ জড়োসড়ো হয়ে বিছানার চাঁদর খামচে ধরে বসে আছি৷ এতো জলদি ছেড়ে দিলো ভেবেই অবাক হচ্ছি । আমি কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি না একদম৷ রুমের মধ্যে পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি৷ ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই চোখ তুলে তাকিয়ে উনাকে একদম আমার মুখের সামনে দেখতে পেয়ে চিল্লানি দিতেই আমার মুখ আটকে ধরেন উনি৷
–‘ এই… এই স্টপ! চিল্লাছিস কেন? ‘
তার হাত আমার মুখের উপর থাকার জন্য দম বন্ধ হয়ে আসছে৷ আমার অবস্থা বুঝতে পেরে উনি হাত সরাতেই আমি হাফ ছাড়ি৷ রাগী ভাবে বললাম,
–‘ মারতে চান আমাকে? এইভাবে কেও ধরে বুঝি! আর আপনি..না ওয়াশরুমে গেলেন৷ ”
–‘ তুই কি জানিস, তোকে অপরুপ লাগছে৷ ‘
তার মোহময় ঘোর লাগানো কন্ঠের কথা আমার দুনিয়ায় মূহুর্তেই হাজার খানিক ভালোলাগার অনুভূতির প্রকাশ পেল৷ লজ্জায় মিইয়ে গেলাম আমি৷ আমার থুতনিতে উনার হাত দিয়ে উঁচু করে ধরে বললেন,
–‘ তুই নিজেকে দেখেছিস? ‘
আমি চোখ বন্ধ করে বসে আছি৷ আজ অন্যরকমের লাগছে৷ উনি আবার আদুরে ভাবে বললেন,
–‘ এই নীতু,দেখেছিস? তোকে আজ অপরুপ
লাগছে৷ ‘
–‘ ন…না.. দেখি নি৷ ‘
উনি আমার কাছে থেকে সরে গেলেন৷ কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা৷ তাকিয়ে দেখি উনি ড্রেসিং টেবিলের সামনে কিছু একটা করছেন৷ আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–‘ আমির আজ আসে নি কেন? তার তো পুলিশ নিয়ে আসার কথা ছিলো৷ ‘
–‘ আসে নি বলে তোর খারাপ লাগছে বুঝি? ‘
উনি পিছন ফিরেই উত্তর দিলেন৷ আমি নিজের ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বললাম,
–‘ উঁহু… নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে তাই বলে জিজ্ঞেস করছি৷ ‘
–‘ কমিশনার এসেছিলো! আমার গেস্ট হিসেবে৷ আর আমির বর্তমান জেলে আছে৷ তোদের কোম্পানিতে যে কেস করেছিলো সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে৷ ‘
বাবার কথা মনে হতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷ যাক এখন একটু টেনশন মুক্ত হবে তার৷ উনি ধীর পায়ে আমার দিকে আগাচ্ছেন৷ আমি উনার পায়ের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বললাম,
–‘ আমি আমার রুমে যাচ্ছি..! ‘
–‘ কেন? ‘ উনার শীতল কন্ঠের আওয়াজে আবারও কথা আটকে আটকে যাচ্ছে আমার৷ উনি আমার সামনে এসে আবার বসলেন৷ আমি পিছিয়ে যেতেই আমার হাত ধরেন উনি৷ আমি কেঁপে উঠতেই সে মুচকি হাসে৷ আমার সামনে আয়না ধরেন৷ আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাতেই চোখ দিয়ে ইশারা করেন আয়নার দিকে তাকাতে৷ আমি তাকাতেই আরেক দফা অবাক হয়ে যাই৷ এতোটা নিপুণ ভাবে কেও সাজাতে পারে? হাতে,গলায় ফুলের গহনা ছিলো কিন্তু মাথায় ছিলো সেটা মাএ দেখলাম আমি৷ প্রত্যেকটা জিনিস সুন্দর ভাবে সেট করা৷ কালো আর লাল গোলাপ আমার মাথায়,, খোঁপায় হাত দিতেই উনি বললেন,
–‘ সেখানে গোলাপি আর লাল গোলাপের বাস৷ ‘
আমি নিজের হাতের ফুলগুলো ধরে বললাম,
–‘ আপনি পার্লারে কাজ করতেন? ‘
উনি আমার কথা শুনে কেশে উঠেন৷ আমার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছেন৷ আমি জোর করে হেসে বললাম,
–‘ না মানে..অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছেন৷ ‘
–‘ সেটা তোকে বলতে বলেছি? ‘
আমি আবার আয়নায় নিজেকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম৷ বিয়েতে যে ভাবে সাজার ইচ্ছা ছিলো তার থেকে হাজার গুণ সুন্দর সাজিয়েছেন তিনি আমায়৷ উনি হঠাৎ আয়না সরিয়ে ফেললেন৷ আমার হাত দুটো তার হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন,
–‘ আমার রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি হবি? ‘
‘ আমার এক আঁকাশের ডানা মেলা পাখি হবি? ‘
‘ এক পশলা বৃষ্টির স্নিগ্ধতায় মোড়া ভালোবাসা হবি? ‘
আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আজ কেন যেন ওই চোখ দুটো বলে বেড়াচ্ছে, ‘ নীতু তোকে আমি ভালোবাসি৷ ‘
আমি চোখ ফিরাতে পারলাম না৷ তার দিকে তাকিয়ে আছি৷ আমার ঠোঁট কাঁপছে৷ উনি আমার ঠোঁট আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতেই চমকে উঠি আমি৷ আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ আমার ভালো লাগছে না..! একদম ভালো লাগছে না৷ আমার যে দম বন্ধ হয়ে আসছে৷ আপনার কথায় কেমন শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ ‘
উনি আলতো করে আমার গালে হাত রাখলেন৷ আমি আবার তার দিকে তাকালাম৷ উনি স্নিগ্ধ কন্ঠে বললেন,
–‘ তোর আর আমার নিয়তি এক তুই জানিস? ‘
আমি দুদিকে মাথা দোলালাম৷ উনি মুচকি হাসলেন৷ আবার বললেন,
–‘ ভিন্ন ভাবে শুরু হওয়া দুনিয়াকে আমি খুব করে চাই..! ‘
আমি চুপ করে তার কথা শুনে চলেছি৷ কথা বলার মাঝেই আমার গালে থেকে হাত সরিয়ে উনি তার পিছনে থেকে তার ডায়েরিটা আনলেন৷ আমার হাতের মাঝে যত্ন করে তুলে দিয়ে বললেন,
–‘ আমার যত্নের এই ডায়েরির ভাজে তোকে চাই৷ ‘
আমি তার দিকে তাকিয়ে ডায়েরি হাতে নিতেই উনি আমার কঁপালে চুমু খেলেন৷ আত্মতৃপ্তি! এতোটা ভালোলাগার ছোঁয়া আমার জীবনে এই প্রথম মনে হচ্ছে আমার৷ আমি স্থির হয়ে বসে আছি৷ ধীরে ধীরে বললাম,
–‘ কিন্তু ডায়েরি তো আপনার৷ ‘
–‘ উহু! তোর৷ ‘
আমি ডায়েরি খুলতেই উনি গম্ভীর ভাবে বললেন,
–‘ তোকে দিয়েছি…তার মানে এই না এখনই খুলতে হবে৷’
–‘ মানে? ‘
–‘ ঘুমিয়ে পড় নীতু৷ ‘
উনি আবার আমার দিকে ঝুঁকলেন৷ গভীর ভাবে চুমু খেলেন৷ হৃদপিন্ড তড়িৎ গতিতে ধুক করে উঠলো৷ আবার সেই ভালোলাগার ছোঁয়া৷ আমায় ছেড়ে উনি কিছু না বলেই বারান্দায় চলে গেলেন৷ একটু পর গিটারের আওয়াজ তারপর আমায় ডাকলেন উনি৷ আমি চমকে উঠে ভারী লেহেঙ্গা ধরে উঠে তার কাছে যাই! আমি তার পাশে দাড়াতেই পাশে থাকা বেতের মোড়ায় বসতে বললেন৷ আমি বসতেই উনি গেয়ে উঠেন,
~আমি চোখ বুজেই সপ্ন দেখেছি…
সেই সপ্নের আলোতে তোমায় খুজেছি…!
আমি না বুঝেই ভালোবেসেছি
~রৌদ্র ছায়া কাব্যে তোমায় খুজেছি……
বলা হলো না কতো না বলা কথা!
জানি না তুমি আসবে কি ফিরে আর……’
উনি থেমে গেলেন৷ আমি মোহে পড়ে গিয়েছিলাম তার কন্ঠের৷ হঠাৎ থেমে যেতেই আমি নড়েচড়ে বসি৷ উনি বললেন,
— ‘ দরজা খুলে তোর রুমে চলে যা নীতু৷ ‘
আমি অবাক হয়ে গেলাম৷ সাথে কেমন অপমান ফিল হলো৷ এইভাবে কেও বলে এতো সুন্দর একটা মূহুর্তে৷ আমি অভিমানের সুরে বললাম,
–‘ কেন? ‘
উনি গিটার পাশে রেখে বললেন,
–‘ আমার শূন্যতা মেনে নিতে পারবি হঠাৎ করে? তাই দূরে থাকাই ভালো৷ ‘
আমার বুকের মাঝে হু হু করে উঠলো৷ উনার দূরত্ব কথাটা কেমন বিষাদময় লাগলো আমার কাছে৷ আমার কি হলো জানি না, উনার হাত দুটো ধরলাম আমি৷ তিনি চমকে উঠে তাকালেন৷ আমি বললাম,
–‘ শূন্যতা পূরণ করার জন্য আপনাকে চাই কাব্য ভাই৷ শূন্যতা কথাটা আমার বড্ড ভারী লাগছে যে৷ ‘
মূহুর্তেই সেই চমকানো ভাবটা কেটে গিয়ে তার মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো৷
–‘ বাসর বাসর ফিলিংস হচ্ছে তোর? ‘
আমি উনার হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গিয়ে বললাম,
–‘ আপনি অসভ্য কাব্য ভাই…প্রচন্ড পরিমাণের অসভ্য৷ ‘
উনি হঠাৎ আমায় একদম কাছে টেনে নিলেন৷ আচমকা এমন হওয়ার আমি তার শার্ট খাঁমচে ধরি৷ উনি আমার ঘাড়ে মুখ গুজে ফিসফিস করে বললেন,
–‘ অসভ্য হওয়া তো শুরু মাএ! তোর যে উপায় নেই নীতু…! ‘
আমি উনার থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করলাম৷ উনি আমার কোমড়ে হাত রেখে আরেকটু জড়িয়ে ধরলেন৷ আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–‘ ছা…ড়ুন কাব্য ভাই… আমার ভালো লাগছে না৷ ‘
উনি ছেড়ে দিলেন আমায়৷ চোখ তুলে তাকালেন না আমার দিকে৷ আমার কেমন খারাপ লাগা শুরু হলো৷ উনি আবার গম্ভীর ভাবে বললেন,
–‘ আ’ম সর্যি…তুই ঘুমিয়ে পড়৷ ‘
আমি আর কিছু বলার আগে উনি উঠে সোফায় শুয়ে পড়লেন৷ আমি কি করবো? ভেবে পাচ্ছি না যে! উনার কি খারাপ লাগলো? কিন্তু এমন টা তো হওয়ার ছিলো না৷ আমি বারান্দায় বসে আছি৷ এখান থেকে কাব্য ভাইয়ার মুখ দেখা যাচ্ছে৷ নিষ্পাপ তার মুখ! চুল গুলো ছুঁয়ে যাচ্ছে তার কপালের মাঝে৷ তার কাছে আসা অস্বস্তি দিলেও ভালোলাগার তীব্র গন্ধ ছুটে চলে আমার মাঝে৷ আমি ধীর পায়ে উনার কাছে সামনে গিয়ে বসি৷ গভীর ভাবে তাকে দেখে চলেছি…! হুট করে আমি উনার কঁপালে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে চুমু দিয়ে বসি৷ উনি ঘুমের মাঝেই কঁপাল কুঁচকে ফেললেন৷ আমি নিজের করা কাজে নিজেই লজ্জায় মরে যাচ্ছি৷ ইশ! উনি কি ভাববেন?