#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি

#পার্টঃ২৩

#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)

সন্ধ্যার নিজস্ব লালচে আলো বাগানের পুকুরের উপর আছড়ে পড়ছে৷ সন্ধ্যা মালতি গাছে থেকে সুন্দর সৌরভ ভেঁসে আসছে৷ আমার পাঁ একদম চলছে না৷ পিছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা যে আমার বড্ড চেনা৷ পুরো বাগান ফাঁকা..! আমি আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ছাড়া আর কেও নেই৷ আমি ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম৷ কান্না উঁপচে আসছে৷ ব্লু কালারের শার্টে হালকা লালচে আলোয় তাকে পিছনে থেকে সুপুরুষ লাগছে৷ আমি পিছনে দাঁড়িয়ে আছি৷ হুট করে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠি৷ সে হাসছে..! হাসির শব্দ আমার কানে আসছে৷ আমার রাগ হলো৷ আমি কিনা তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে মরমে মরে যাচ্ছি আর সে কিনা হাসছে৷ আমি তাকে ছেড়ে দিতে নিলেই আমার হাতের উপর তার হাত রাখলেন৷ আমি ছুটতে চেয়েও পারলাম না৷ ফুঁপিয়ে কান্না করেই যাচ্ছি৷

–‘ দুদিন পরে বুঝি আমার কথা মনে পড়েছে? ‘

উনার কথা শুনে উনায় আমি আরেকটু জোড়ে আঁকড়ে ধরি৷ তার পিঠে মাথা ঠেকিয়ে কান্নারত অবস্থায় বললাম,

–‘ আ..পনি আমার সাথে যোগাযোগ কেন করেন নি? আপনি কি বুঝেন না.. আমার কষ্ট হয়৷ ‘

উনি আমাকে সামনে নিয়ে এলেন৷ হুট করে টান দেওয়ায় ভয় পেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে উনার কাছে থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করি৷ বড্ড অভিমান লাগছে৷ এতো এমন কেন উনি? আমি উনার দিকে একদম তাকাচ্ছি না৷ আমার গালের উপর তার ঠান্ডা শীতল হাত রাখেন৷ আমি কেঁপে উঠে তার দিকে তাকাই৷ মুখ শুকনো লাগছে..! জাম রাঙা ঠোঁটের কোণে এখনো রক্তের দাগ আছে৷ চুল গুলো উষ্কখুষ্ক৷ কিন্তু মুখে তার সেই মন ভুলানো হাসি৷ আমার চোখের পানির দিকে সে তাকিয়ে আছে৷ একদৃষ্টিতে..! সে অস্থির কন্ঠে বলল,

–‘ মাথায় কি হয়েছে..! ‘

তার বলা কথায় এতোক্ষণে ঝিমিয়ে থাকা ব্যাথা হুট করেই বেড়ে গেল৷ তীব্র ব্যাথা৷ আমি মাথায় হাত দিয়ে বললাম,

–‘ পড়ে গিয়েছিলাম..! ‘

উনি আমার ব্যান্ডেজের উপর হাত রাখলেন৷ তার চোখেমুখে আতংকের ছাঁপ৷

–‘ এতো লাফালাফি করিস কেন তুই? সাবধানে চলতে জানিস না? আমি দুইদিন বাড়িতে নেই এতেই মাথা ফাটিয়ে দুভাগ করে ফেলেছিস৷ আল্লাহ মালুম আমি না থাকলে তুই নিজেই বোধহয় নাই হয়ে যাবি৷ ‘

উনার কথা শুনে নিজের ভেতরের রাগ হঠাৎ করেই উঁপচে পড়লো৷ উঁচু হয়ে উনার কলার টেনে ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,

–‘ নিজেকে কি মনে করেন আপনি? কি মনে করেন? আমাকে খেলনার পুতুল পেয়েছেন? আমার অনুভূতি না বুঝেই একা ফেলে চলে এসেছেন৷ কেন ফেলে চলে এসেছেন? আমার মাথা ফেঁটে গুড়াগুড়া হয়ে মশলা হয়ে যাক৷ তাতে আপনার কি? আমাকে কাঁদিয়ে মজা পান তাই না? চলে যান..! দরকার নেই আপনাকে আমার৷ খুব তো ফেলে একা হারিয়ে গিয়েছিলেন৷ ‘

উনি নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন৷ রাগে হাঁত পা কাঁপছে আমার৷ অসভ্য লোক একটা৷ এখন এসেছে দরদ দেখাতে৷

–‘ খুজতে কেন এসেছিস তাহলে? ‘

উনার গা ছাড়া কথা শুনে আরো রাগ হলো৷ হাতের মুঠোয় থাকা কাগজ উনার দিকে ছুড়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে বললাম,

–‘ বয়েই গেছে তোকে খুজতে আসার৷ তুই যা..! যেখানে ইচ্ছা যা৷ বাড়ির সবার কথা চিন্তা করেই তোকে খুজতে এসেছিলাম৷ আর তোর ডায়েরি..! কেন দিয়েছিস আমাকে? যা চলে যা..! ‘

উনি আমার কথা শুনে স্তব্দ হয়ে ফাটাফাটা চোখে তাকিয়ে আছেন৷ আমার সেইদিকে কোনো হুশ নেই৷ আমি উনার বুকের পাশে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বললাম,

–‘ যা চলে যা..! আবার এখানে সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছে৷ তোর সব প্ল্যান করা৷ তুই ইচ্ছা করে কষ্ট দিয়ে আমাকে ভুলাতে এসেছিস৷ দরকার নেই তোকে৷ আমি তোর প্রেমের বৃষ্টি হবো না৷ তুই কাঠফাটা রোদ..সেই রোদেই তোকে মানায়৷ ‘

–‘ নীতু,..! ‘

উনার গম্ভীর আওয়াজে ডাক শুনে রাগী দৃষ্টিতে তাকালাম উনার দিকে৷ উনি আমার চোখ দেখে ভয় পেলেন কিনা জানি না৷ সে তার ভালো হাত দিয়ে আমাকে পিছন দিকে ঘুরিয়ে তার বুকের সাথে একদম মিশিয়ে নিলেন৷ আমি মূহুর্তেই নিজের কথা মনে করে বড়সড় একটা ঢোক গিললাম৷ নীতু ইউ ফিনিশ..! ইমোশনাল মোমেন্টে শেষে কিনা তুই বলে ফেলেছিস?

–‘ তারপর.?’

উনি আমার ঘাড়ে থুতনি রেখে বললেন৷ আমার শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো৷ ভাষা খুজে পেলাম না৷ উনি কোমড়ে এক হাত দিয়ে আবার আমাকে সামনে ঘুরালেন৷ আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে তার শার্ট খাঁচমে ধরলাম৷ আমার কঁপালে তার কঁপাল ঠেকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

–‘ কষ্টে পেয়েছিস? ‘

আমি উনার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম৷ ভেবেছিলাম চড় টর খাবো তুই বলার অপরাধে৷ কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিলেন উনি৷ আমি কি বলবো খুজে পেলাম না৷ আবার কান্না পাচ্ছে৷ তাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করা কেন দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য? আমি চোখ বন্ধ করেই উত্তর দিলাম,

–‘ আপনাকে না দেখলে আমার বুকের বাঁ পাশে তীব্র ব্যাথা হয়..! আপনাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলি৷ কেন? আপনি এমন করে কষ্ট কেন দেন? আমার জন্য মায়া হয় না আপনার?’

উনি স্লো ভয়েসে বললেন,

–‘ আমার ঠিকানা তো তোর মাঝে..! হারিয়ে গেলে খুজে বেড়াবি৷ তোর জন্য আমার ভালোবাসার চিরকুট থাকবে৷ সেই চিরকুটে আমার হারানোর মধ্যেও খুজে পাবি তুই৷ ‘

কান্নার মাএা বাড়ছে৷ তাকে পেয়ে শূন্য বুক পূর্ণ লাগছে এখন৷ আমি তাকে নিজে থেকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েও ধরলাম না৷ শুধু থেমে থেমে বললাম,

–‘ আপনি জানতেন আমি আসবো?’

উনি আবার হাসলেন,

–‘ হ্যাঁ, জানতাম..!কিন্তু মহারাণী দুইদিন পরে আসবে সেটা জানতাম না৷ আর একটু পর বেরিয়ে পড়তাম ফ্লাইটের উদ্দেশ্য..! ‘

আমার বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠলো৷ সত্যি যদি চলে যেতেন তাহলে পেতাম কোথায়৷

–‘ আমি যাবো আপনার সাথে..! ‘

–‘ উহু..! নিবো না৷ ‘

আমি কেঁদে উঠলাম আবার৷ এখন নিবেন না? আর তখন যেতে চাই নি বলে ফেলে চলে এসেছিলেন৷ কথাই বলবো না আর৷ উনি আবার গম্ভীর ভাবে বলল,

–‘ তুই তুকারি করার শাস্তি তুই নিবি? না আমি দিবো..!’

এতোক্ষণে টনক নড়লো আমার৷ ইশ..! আমি কিভাবে পারলাম তুই বলতে? আমি লজ্জায় তাকাতে পারলাম না তার দিকে৷ উনি ঠোঁট কামড়ে ধরে ফিসফিস করে বললেন,

–‘ তোকে শাস্তির দুটো অপশন দিচ্ছি..!’

আমি ভ্রুকুচকে ফেললাম৷ শাস্তির আবার অপশন আছে বুঝি? উনি আমার কুচকানো ভ্রুতে তার আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতেই আমি ঝটপট করে বললাম,

–‘ ক.. কি শাস্তি? আর অপশন টপশন আবার কি?’

উনি আমায় ওইভাবেই রেখেই সামনে এগিয়ে গেলেন৷ আমিও পাঁ য়ে পা মিলিয়ে পিছাতে লাগলাম৷ উনি এখনো আমার কঁপালে তার প

কঁপাল ঠেকিয়ে আছেন৷ উনার কি ভয় হচ্ছে না?দুজনের মাথা ফাঁটা পড়লে নির্ঘাত আজ আর রক্ষা থাকবে না৷ উনি এগুতে এগুতেই বললেন,

–‘ ফার্স্ট অপশন, আমাকে চুমু দিবি..! ‘

–‘ নো.. সেকেন্ড অপশন..! ‘ আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলতেই উনি দাঁড়িয়ে পড়লেন৷ পাশে থাকা ফুল দিয়ে সাজানো দোলনায় আমাকে বসতে বললেন৷ আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি৷ রজনীগন্ধা, গোঁলাপ আর টিউলিপ দিয়ে অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো দোলনা৷ পাশেই বেলুন আর ফেইরি লাইট দিয়ে সাজানো একটা কটেজ..! আমি চোখ ঘুরিয়ে সব দেখছি৷

–‘ এইগুলা..? ‘

উনি আমার কানের কাছে এসে বললেন,

–‘ আমার প্রেমের বৃষ্টির জন্য৷ ‘

আমি ঘুরে উনাকে আমার একদম সামনে পেলাম৷ তার বুকের মাঝে আমার মাথা৷ এতো লম্বা কেন উনি৷ ভেবেই আবার ভ্রু কুচকে ফেললাম৷ পাশে থাকা একটা রজনীগন্ধা আমায় দিয়ে বললেন,

–‘ গত দুই দিন ধরে ফুল পঁচে যাচ্ছে,,আবার পাল্টিয়েছি..! আজ অবশেষে আমার সে এসেছে৷ ‘

আমার খুশি হওয়ার দরকার কিন্তু হতে পারলাম না মনের মাঝে সেই খুশি উঁপচে পড়ছে৷ ইশ! আগে কেন আসলাম না? উহু..! আগে আসলে সেটা আজ সেদিনের ঘটনা হয়ে যেত৷ অপেক্ষার ফল মিষ্টি..! সেটার আক্ষেপ থাকলেও কষ্টে মিশ্রিত ভালোলাগা থাকে৷ উনি আবার আমার কানের পিছনে একটা লাল গোলাপ গুজে দিলেন৷ আমি দোলনায় বসতেই উনিও আমার পাশে এসে বসলেন৷ আমি সরে যেতেই আমার কোমরে ধরে কাছে টেনে নিয়ে এলেন৷ আমার কাঁধে মাথা রাখতেই আমার হৃদপিন্ডের মাঝে ঢেউ খেলে যায়৷

~” পূর্ণিমা সন্ধ্যায়, তোমার রজনীগন্ধ্যায়

রুপসাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়…!

~ ” পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,তোমার রজনীগন্ধ্যায়,

রুপ সাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়..!

তোমার প্রজাপতির পাখা..আমার আঁকাশ চাওয়া মুগ্ধ চোখে রঙিন সপ্ন মাখা…!(২)

~” তোমার চাঁদের আলো… মিলায় আমার দুঃখ সুখের সকল অবসান…!”

ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে গান…!

তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে গান…!

~” আমার আপন হারা প্রাণ…আমার বাঁধন ছেড়া প্রাণ…

ফাগুন………! ”

আমি চোখ বুজে তার গান উপভোগ করছি৷ উনি আমার গালে চুমু দিতেই আমি তাড়াহুড়ো করে চোখ খুলে ফেলি৷ উনি মাথা উঠিয়ে বললেন,

–‘ এই..! তোকে শাস্তি দেওয়ার বদলে আমি গান শুনাচ্ছি কেন? ‘

–‘ আপনার গানের গলা এতো ভালো কেন? ‘ আমি কথা ঘুরানোর জন্য বলতেই উনি হাসলেন৷ আমি ধরা পড়ে গেলাম৷ শুকনো ঢোক গিলে আবার বললাম,

–‘ হাঁতে হাত ধরে হাটবেন? পূর্ণিমা চাঁদ.. রজনীগন্ধ্যা..! ‘

আমি আর কিছু বলার আগেই উনি আমার কাছে একদম ঘেষে রইলেন৷ আমি সরতে চাইলে উনি বললেন,

–‘ সব হবে..! তার আগে তুই তোকারির করার শাস্তির সেকেন্ড অপশন শুনে নে..!’

আমি সাহস জুগিয়ে বললাম,

–‘ শাস্তি দেওয়ার জন্য আপনার দুদিন হারিয়ে যাওয়া কি যথেষ্ট নয়? ‘

–‘ আর আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া কি অপরাধ নয়? ‘

আমি যাই বলি সেটার গুছানো উত্তর উনার কাছে আছেই৷ আমি হার না মেনে আবার বললাম,

–‘ আমায় কষ্ট দেওয়া এইটা কি অন্যায় নয়? ‘

উনি আমার গালে আবার চুমু দিলেন৷ আমি ভড়কে গেলাম৷ নিজের কামিজ আঁকড়ে ধরে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় আছি৷ উনি আমার হাতের আঙুল তার হাতের আঙুলে আবদ্ধ করে বলল,

–‘ প্রেমে পড়েছি..! সেই লাজুকলতার..! তাই শাস্তির সেকেন্ড অপশন বাসর ঘরের জন্য তুলে রাখলাম..! ‘

আমি উনার কথা শুনে রাগ করবো না লজ্জায় পড়বো ভাবতেই উনি আমার হাঁত ধরে উঠে দাঁড়ালেন৷ রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে পিচ ঢালা রাস্তা,,পূর্ণিমার মস্ত চাঁত আর রজনীগন্ধ্যার ফাগুন হাওয়া..!

 

______________________

পূর্ণিমার সন্ধ্যার ঘুরে রাতের আঁধার ঠিকরে পড়ছে৷ আমি আর সে বাসায় ঢুকতেই সবাইকে ড্রয়িংরুমে বসে থাকতে দেখেই একটু ভয় পেয়ে যাই৷ বাবা আর রেদুয়ান ফুঁপার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি উনার হাত ছেড়ে জিনিয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়াই৷ ফুঁপি উনাকে শাসন করলেন আবার নিজেই কেঁদে উঠে জড়িয়ে ধরলেন৷ আমার চোখের কোণে পানির আভাস পাচ্ছি৷

–‘ এতো রাগ কেন তোর? আমার বুঝি টেনশন হয় না? ‘

ফুঁপির কথার জবান দিতে পারলেন না উনি৷ ফুঁপা উঠে গিয়ে তার গালে থাপ্পড় মারলেন৷ থাপ্পড়ের শব্দে কেঁপে উঠলাম৷ ফুঁপি রেগে কিছু বলার আগেই ফুঁপা থামিয়ে দিয়ে বলল,

–‘ ওর প্রাপ্য এইটা..! এতোটা অবুঝ কেন ও? ‘

উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন৷

–‘ নীতু এইদিকে আয়..! ‘ ফুঁপার ডাকে ভয় পেয়ে কাব্য ভাইয়া আর আব্বুর মুখের দিকে তাকালাম৷ তাদের কাছে থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে আমি কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তার হাতে থাকা একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে রাগী স্বরে বলল,

–‘ সাইন কর..! ‘

আমি ভয় পেয়ে গেলাম..! কিসের পেঁপার এইটা? আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আব্বু পিছনে থেকে বলল,

–‘ কাব্য তোর শাস্তি এইটা..! কথা না মানার শাস্তি৷ ‘

আমি ছলছল চোখে উনার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম ভয়ে তার মুখ অন্যধরনের এক রঙ নিয়েছে..! কি আছে কাগজে?এতো ভয় পাচ্ছেন কেন উনি?


#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি

#পার্টঃ২৪

#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)

নিস্তব্ধতার মাঝে সুখ দুঃখ একে অপরকে জড়িয়ে থাকে৷ হুট করে সব শেষ হওয়ার মাঝে অশান্তি জড়িত ভালোলাগা আছে৷ তপ্ত নিশ্বাসের উঠানামা গুলো বড্ড ভারী হলেও এক চিলতে সুখ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে৷ আমি কাঁদছি..! চোখ বেয়ে নেমে পড়া পানির ফোঁটা গুলো জানান দিচ্ছে অজানা সুর৷ বুকের মাঝে প্রশান্তির বাতাস বইছে৷ আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কাব্য ভাইয়ার মুখেও উঁপচে পড়া খুশি৷ উনি হয়তো বড়রা সামনে না থাকলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতো আমায়৷ গুটিগুটি পাঁয়ে আমার পাশ ঘেষে দাঁড়ালেন উনি৷ আমি একটু ভয় পেলাম সবার সামনে কিছু করলে লজ্জায় মাথা কাঁটা যাবে৷ উনি আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে বললেন,

–‘ এতো জলদি সব কিছু এরেঞ্জ করলে কি করে আব্বু? ‘

ফুঁপা আর আব্বু হাসলেন৷ উনাদের মুখে হাসি দেখে আমাদের মুখেও হাঁসি ফুঁটে উঠলো৷ কাগজ টা আমার হাতে দিয়ে ফুঁপা বলল,

–‘ আমাদের ছেলে-মেয়ের কষ্টের ভাগীদার তো আমরা হতে পারি না৷ আর তুমি এডাল্ট..!কথাটা বারবার ভুলে যাই৷ তোমার আম্মু কথাটা না মনে করালে আমি হয়তো মেনেই নিতাম না৷ আর আমরা জানি তুমি নীতুকে ভালো রাখবে৷ আমাদের চেয়ে হয়তো ওর ভালো তুমি’ই চাও বেশি৷ কিন্তু বাবারা খারাপ চায় না, তাদের মাথায় হাজারো ভাবনা থাকে..! ছেলে-মেয়ের ভালো থাকবে কি ভাবে সেই ভাবনা থাকে৷ তোমরা যতই বড় হও না কেন,আমাদের চোখে এখনো সেই ছোট’ই আছো৷ ‘

কাগজটা মূলত আমার ভার্সিটির ট্রান্সফার সার্টিফিকেট ছিলো৷ কাব্য ভাইয়া ফুঁপার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন৷ ফুঁপি তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ আর আব্বু আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

–‘ তোমাকে ওর কাছে দিয়ে দিয়েছি সেই কবেই৷ আমি চাই ভালো থাকো..! তোমার আম্মু বেঁচে থাকলে হয়তো সবকিছু আরো সুন্দর হতো৷ সেই সুন্দর পৃথীবিটা না হয় কাব্যের সাথে থেকেই হোক তোমার৷ ‘

আমি কাঁদলাম আব্বুর বুকের মাঝে মাথা রেখে..! হয়তো ভালোর জন্যই বাবারা কঠোর হয়৷ বাবাদের কঠোরতায় ভালোবাসা থাকে,আগলে রাখার প্রচেষ্টা থাকে৷ একমুঠো সুখের অংশ বাবারা বিলিয়ে তাদের সন্তানদের জন্য৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা আমাদের কাছে বারাবাড়ি মনে হলেও দিনশেষে তারা সঠিক..!

______________________

হাতে মাএ ছয় ঘন্টা সময় আছে৷ আর উনি এখনো ঘুমুচ্ছেন৷ গত দুইদিনের ঘুম৷ আমি নিজের জিনিসপত্র গোছাচ্ছি..! তার লাগেজ প্যাঁক করা৷ একরাশ মন খারাপের সাথে ভালোলাগা আছে আজ৷ বাড়ি ছেড়ে, ফুঁপি-ফুঁপা,বাবা, জিনিয়াকে ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে৷ কিন্তু যেতে যে হবেই..! আমাকে ছাড়া সে যাবে না আর সে না গেলে তার সপ্ন পূরণ হয়েও হবে না৷ আমি চাই না দিনশেষে এইটার জন্য সে আফসোস করুক৷ আমি তার প্রত্যেকটা ভালো জিনিসের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই৷ এতোটা আবেগ তার প্রতি কবে জমা হয়েছে আমার? যাকে দেখলে ভয়ে পিছিয়ে থাকতাম আজ তার সাথে সারাজীবন থাকার আপ্রাণ চেষ্টার মাঝে আছি৷ আমাকে তার কবে থেকে ভালো লাগে? এই একটা কথা ঘুরেফিরে ভেবে যাচ্ছি৷ ইশ..! সে কি আমায় সেই আগে থেকেই ভালোবাসে? যদি তাই হয় এই অসভ্য বলে নি কেনো৷ এখনো কোথায় বলেছে..! একদম বলে নি৷ ঘড়ির কাঁটায় আটটার ঘন্টা বেজে উঠতেই আমার ভাবনার সুতো ছিড়ে৷ আমি তাড়াহুড়ো করে নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াই৷ ডাকবো কিভাবে? হাত দিয়ে ধাক্কা দিবো..! মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না একদম৷ শার্ট খুলে শুয়ে আছেন উনি৷ ফর্সা বুকের লোম গুলো দেখা যাচ্ছে৷ আমি দুই পাঁ পিছিয়ে গেলাম৷ ছিঃ! এইভাবে কেও শোয়? উনার লজ্জা নেই আমার তো আছে৷ কিন্তু উনায় তো ডাকতে হবে৷ আমি নিজের গলার স্বর পরিষ্কার করে বললাম,

–‘ ক..ক..কাব্য ভ… উচ্চারণ করতেই নিজেই লজ্জায় মিইয়ে যাই৷ সে আমার বর৷ এতোদিন পর ব্যাপারটা খেয়াল হলো৷ ইশ! মানুষ কি ভাববে৷ তাহলে ডাকবো কি বলে?

— ‘ এইযে..এইযে শুনছেন..! ‘

আমার ডাকে সারা না দিয়ে উলটোদিকে মুখ ঘুরিয়ে আবার শুয়ে পড়লেন উনি৷ লাগিয়েছেন টা কি? উফফ! অসহ্য ব্যাক্তি..! আমি রেগে বেডের উপর উঠে তার সামনে বসে বললাম,

–‘ শুনছেন? উঠুন..! ফ্লাইটের টাইম আর কিছুক্ষণ বাকি৷ ‘

–‘ তো?’ উনি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন৷ আমার হার্ট বিট একবার মিস হলো মনে হচ্ছে৷ এতো সুন্দর কারো ঘুম জড়ানো কন্ঠ হয় বুঝি৷ সব ভুলে আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি৷ ঘুমের মাঝেও তার ভ্রু কুচকানো৷ আমি তার মতো আঙুল দিয়ে স্লাইড করে গম্ভীর ভাবে বললাম,

–‘ নীতু, তুই আমাকে বুঝিস না কেন? শাস্তির অপশন তোর জন্য দুইটা..! ফার্স্ট অপশ…

কথা শেষ করার আগেই সে একটানে আমাকে শুয়িয়ে আমার উপর ঝুঁকে শুয়ে পড়লেন৷ আমি ভয় পেয়ে তার গলা আঁকড়ে ধরে রেখেছি৷ এইটা কি হলো? অসভ্য তো ঘুমিয়ে ছিলো৷ উনার সম্পূর্ণ ভার আমার উপরে ছেড়ে দিয়েছেন৷ আমি উঠতে চেয়েও পারলাম না৷

–‘ কি হচ্ছিলো? ‘ উনি আমার গালে স্লাইড করে বললেন কথাটা৷ আমি কেঁপে উঠে আমতা আমতা করে বললাম,

–‘ কো..থায় কি হচ্ছিলো? আমি তো ডাকছিলাম৷ ওহহ হ্যাঁ আপনার ফ্লাইট ছেড়ে চলে গেছে৷ ‘

অস্থিরতায় উল্টাপাল্টা কি বলছি নিজেই জানি না৷ উনি নিজের মুখ সামনে এগিয়ে আনতেই আমি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেই৷ আজ হাত দিয়ে ঢেকে ফেলার উপায় নেই৷ কারণ একহাত বাঁধা আরেক হাত তার গলায় আঁকড়ে রাখা৷ উনি স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ আমি একচোখ খুলে তাকিয়ে আবার বন্ধ করে নেই৷ উনি আমার চোঁখের উপর ছুঁয়ে দিতেই আমি উনার থেকে হাত নামিয়ে নেই৷ উনি ঘোর লাগানো কন্ঠে বললেন,

— ‘ তোর চোখের মাঝে ডুবিয়ে আমাকে মারতে চাস?

তোর গোঁলাপি ঠোঁটের কাঁপুনি তে আমি যে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে..!

তোর লাল হওয়া গালের ডানপাশের ছোট কালো তিলটার অধিকারে মাঝে নিজেকে কেন খুজে বেড়াই বলতে পারবি? ‘

আমার হাত ডানপাশে যেতেই উনি হেসে উঠেন৷ হাসতে হাসতে বলল,

–‘ চালাক হয়ে গেছিস..! ‘

আমি দুদিকে মাথা দিয়ে না করতেই উনি আবার হেসে ফেললেন৷

–‘ আপনি হাসবেন না তো..! হিংসে হয় আমার৷ ‘

উনি আরো হেসে উঠলেন৷ আমি বিরক্ত হলাম৷ আমার হাসির চেয়ে তার হাসি সুন্দর৷ অনেক সুন্দর..! উনি আমার গালে হাত রেখে বললেন,

–‘ কারো হাসির তালে নিজেকে হারিয়েছি তো আমি সেই আগেই৷ আর সে কিনা বলে আমার হাসিতে তার হিংসে হয়৷ দ্যাটস নট ফেয়ার..! আমি তো তার হাসির ঝংকারে পুড়ে যাচ্ছি..! সেই হাসির কারণ আমি হতে চাই বলেই এতোশত কাহিনী৷ তা কি জানে সে?’

আমি নিজেই হেসে ফেললাম এইবার৷ আমার হাসি নিজের দেখতে বড্ড ইচ্ছা হচ্ছে৷ তার হাসির চেয়ে আমার টা সুন্দর..! ভাবতেই একরাশ লজ্জা এসে ভীর করলো আমার মাঝে৷ উনি এগিয়ে এসে আমার গালে নিজের গাল দিয়ে স্লাইড করতেই আমি ভড়কে যাই৷ আবারও এতোটা কাছে৷ আমি চোখ বন্ধ করে নিতেই সে আমার নাকের সাথে তার নাক ঘষে উঠে দাঁড়ায়৷ আমি সেখানে সেইভাবেই আছি৷ ঘোরের মাঝে৷ আমাকে উঠতে না দেখে সে বলল,

–‘ রোম্যান্সের মুড এখন থাকলে লাভ নেই বেবি..! এখন রোমান্স করতে গেলে বাচ্চা সহ জার্মান যেতে হবে৷ ‘

আমি উনার কথা শুনে উঠে বসে একটা বালিশ ছুড়ে মারি৷ ছিঃ! অসভ্য..!

 

গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি সবাই৷ আজ শুধু মোস্তাকিম ভাইয়া আমাদের সাথে যাবেন৷ তার ধারণা, আজ আবার কিছু একটা কাব্য ভাইয়া ঘটাবেন৷ আবার গাছের সাথে গাড়ি ধাক্কা লাগিয়ে বলবেন,সে বাচ্চা নিয়ে জার্মান যেতে চায়৷ তার উপর উনার হাতের ব্যাথা এখনো আছে৷ দুজনের মাথায় ব্যান্ডেজ করা৷ এইটা কোনো কথা?সবার থেকে বিদায় নিতে কান্না পাচ্ছে আমার৷ জিনিয়াকে ছেড়ে যেতে বেশি কষ্ট হচ্ছে৷ যদিও ও ফুঁপির সাথে থাকবে৷ তাও ভালো লাগছে না৷ সেও সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসেন৷ আমি উঠছি না দেখে আবার নেমে আসেন৷ মিষ্টি স্বরে বললেন,

–‘ বউ তোকে কি কোলে করে গাড়িতে উঠাবো? ‘

উনার কথা শুনে আমি জলদি গাড়িতে উঠে বসি৷ বউ তোকে..কথাটা বড্ড আপন মনে হলো৷ আমি এক কোণায় বসতেই উনি আমার দিকে এসে বসলেন৷ মোস্তাকিম ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–‘ বিয়ে শাদী করে ফেলিস..! তোর মেয়ের সাথে আমার প্রথম ছেলের বিয়ে দিবো৷ এর পরে মেয়ের সাথে রাহুলের ছেলের বিয়ে দিবো৷ সিনানের ছেলের সাথে আবার মেয়ে বিয়ে দিবো আরেকটা৷ ‘

আমি উনার পেটের উপর জোরে চিমটি দিতেই৷ উনি মুখ দিয়ে শব্দ করতেই মোস্তাকিম ভাইয়া হেসে উঠলো৷ আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে উনায় ইচ্ছা মতো বকে চলেছি৷ ছেলে -মেয়ে হবে কবে তার ঠিক নেই এখুনি তাদের বিয়ের ব্যাবস্থা করে ফেলেছেন৷ একমাএ তার দ্বারাই সম্ভব এইগুলা৷ নিমিষেই মন খারাপ উধাও হয়ে গেছে৷ আমাকে রাগ করতে দেখে উনি ফিসফিস করে বললেন,

–‘ আমার বাচ্চাকাচ্চার আম্মুর মুড এমন পানসে থাকলে তাদের বাবা কিন্তু ভুল ভাল কাজ করে বসবে৷ পরে দোষ দিলে আমি মানবো না..! ‘

আমি উনার কথা শুনে মুচকি হাসলাম৷ এখন উনি কতটা পরিবর্তন হয়েছে..! রুড স্বভাবের মানুষ এতোটা অসভ্য হয় কি করে ভাবতেই অবাক লাগে৷

_________________

বিকেলের সূর্য প্লেনের জানালা দিয়ে আমাদের ছুঁতে চাচ্ছে৷ সব ফর্মালিটি শেষ করে অজানার উদ্দেশ্য পাড়ি জমাচ্ছি৷ একরাশ ভালোলাগা আর একটু খানি ভালোবাসায় মোড়া অনুভূতি গুলো মন ছুঁয়ে যাচ্ছে৷ আমাকে জানালার পাশের সিটে বসতে দিয়ে উনি আমার দিকে ঘুরে বসে আছেন৷ আমি ভ্রু কুচকে তাকাতেই উনি হাসেন৷ আমি ‘, কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই উনি বললেন,

–‘ আমার বুকে মাথা রাখবি..? ‘

আমি অবাক চোখে তাকাতেই উনি মাথার চুল গুলো হাত দিয়ে ব্রাশ করলেন৷ আমি কিছু না বলেই উনার দিকে এগিয়ে চুপ করে তার বুঁকে মাথা রাখি৷ এইখানে শান্তি আছে..! এতোসময়ের মাথা ব্যাথা হঠাৎ করেই উধাও হয়ে মাথার ভেতর হালকা লাগতে শুরু করলো৷ উনি আমার মাথা আলতো করে চাঁপ দিয়ে ধরে রেখেছেন৷ একটু পর বললেন,

–‘ একরাশ বৃষ্টি এসেছে আমার ঘরে,,

সে বৃষ্টি শুধুই প্রেমের বৃষ্টি..! ‘


#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি

#পার্টঃ২৫

#রুবাইদা_হদি(sheikh ridy rahman)

সপ্নের মতো বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা৷ আমার একহাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন উনি৷ মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই আমি এই অচেনা রাজ্যে হারিয়ে যাবো৷ আমিও তার হাত ধরে চারদিকে তাকিয়ে দেখছি৷ আবারো সব ফর্মালিটি শেষ করে আমরা বাইরে বের হতেই অবাক হয়ে যাই৷ বার্লিনের কোল জুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে৷ আঁকাশের কোলে হালকা মেঘের ভেদ করে একফালি রোদ এসে বৃষ্টির ফোঁটা গুলোকে রাঙিয়ে দিচ্ছে৷ রৌদ্দুরে বৃষ্টি..! এর চেয়ে বড় ওয়েলকাম আর হতেই পারে না৷ আমি উচ্ছ্বসিত চোখে তাকিয়ে আছি..মুখে হাসি৷ এতো সুন্দর একটা সারপ্রাইজ পাবো ভাবতেই পারি নি৷ আমিও কাব্য ভাইয়ার হাত ঠেসে ধরলাম৷ উনিও খুশি হয়েছেন..! সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে রৌদ্দুর আর বৃষ্টির খেলা৷ আর আমাদের মনে প্রেমের ছোঁয়া লাগছে৷ কেন এতোটা সৃতিময় আজকের দিনটা? আমাদের স্বাগতম জানানোর জন্য? অচেনা ভালোবাসার শহরে প্রথম রৌদ্দুরে বৃষ্টি..! বার্লিনের প্রথম পাঁ রাখার অনুভূতি এতোটা সুখময় কেন? উনিও আমার মতোই উচ্ছ্বসিত..! যা তার চোখে-মুখে ফুঁটে উঠেছে৷ জার্মানি এক লোক এসে দাঁড়াতেই উনি লাগেজ গুলো গাড়িতে উঠাতে বলেন৷ সেইদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই৷ রোদের আলো আর বৃষ্টির খেলার সাথে রঙধনুর সাত রঙ ফুঁটে উঠেছে৷ আমি উনার হাত ধরেই প্ল্যাটফর্মের একদম সামনে এগিয়ে গেলাম। একপ্রকার টেনেই উনায় নিয়ে যাচ্ছি। আমার এইভাবে টেনে নেওয়া দেখে উনি অবাক হয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে আমার সাথে দৌড়াতে থাকলেন। একটু রাগীস্বরে বললেন,

–‘ পাগলের মতো দৌড়াচ্ছিস কেন? আরে .. আরে পড়ে যাবো তো। ‘

 

আমি উনার কথা একদম পাত্তা দিলাম না৷ আমি রঙধনু ধরবো৷ এতোকাছে থেকে আগে কখনো দেখি নি৷ আমি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই প্ল্যাটফর্মের বাইরে বেরিয়ে এলাম৷ মাথায় ব্যান্ডেজ করা সেইদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই৷ আমিতো নিজের খেয়ালে আছি৷ বৃষ্টি মাথায় পড়তেই উনি হ্যাচকা টান দেন আমায়৷ আমি একদম উনার বুকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়তেই উনি নিজেকে পড়ে যাওয়া থেকে সামলিয়ে নেন৷ রাগীদৃষ্টিতে তাকিয়ে শাসনের সুরে বলল,

–‘ পাগল হয়ে গেছিস? বার্লিনের হাওয়া লাগতেই মাথার তার সব ছিড়ে গেছে কি? এইভাবে বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে এলি কেন? মাথা ভিজে যাচ্ছে সে খেয়াল কি আছে..!’

উনার কথা শুনে বড্ড অভিমান হলো আমায়৷ এতোসুন্দর দেখি নি কখনো তাই বেশির এক্সসাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম৷ আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই উনি আবার হাত ধরে টান দেন৷ আমি আবারও পিছিয়ে উনার বুকের সাথে গিয়ে ধাক্কা খাই৷ উনি আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন৷ আমি চোখ ঘুরিয়ে নিলাম৷ কিছু বললাম না৷ উনার সাথে কথা বলবো না একদম৷ উনি চুপ করে আছেন দেখে আমি আবার তাকালাম উনার দিকে৷ চুলগুলো ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে বেরিয়ে আছে৷ ফোঁটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ছে৷ আমার অভিমান মিশে গেলো মূহুর্তেই৷ মাথা ভিজে যাচ্ছে দেখে তাড়াহুড়ো করে বললাম,

–‘ সর‍্যি..আমি বুঝি নি! আপনার মাথা যে ভিজে যাচ্ছে..’ আমি নিজে উঁচু হয়ে তার মাথার উপর হাত দিলাম যাতে পানি না পড়ে৷ উনি আমার কাজ দেখে হাসলেন৷ আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললাম,

–‘ ভেতরে চলুন,,আমি রঙধনু ছুঁবো না..! ‘

উনি এখন আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে হাত উঁচিয়ে জার্মানি সেই ব্যাক্তিকে ডেকে বললেন,

–‘ hey man.. give me umbrella please..! ‘

আমি উনার কথা শুনে ভ্রুকুচকে ফেললাম৷ ছাতা দিয়ে কি হবে? গাড়িতে উঠলেই হয়৷ লোকটা কোথায় যেন হারিয়ে গেলো৷ আমাকে ভ্রুকুচকে থাকতে দেখে উনি আমাকে ছেড়ে নিজের ব্লেজার খুলে ফেললেন৷ আমি অবাক হয়ে বললাম,

–‘ খুলছেন কেন? এমনি ভিজে যাচ্ছেন আরো ভিজে যাবেন তো৷ ‘

–‘ হুশশ..! রৌদ্দুরের বৃষ্টির রঙে রাঙাবো তোকে৷ ‘

আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি৷ ব্লেজার খুলতেই সাদা শাদা শার্ট আর কালো জিন্সে তাকে অপূর্ব লাগছে৷ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো কিছু জার্মানি মেয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছে৷ ভাব দেখিয়ে ব্লেজার খোলার কি দরকার ছিলো? ওহহ হ্যাঁ নিজের ফিটনেস বডি মেয়েদের দেখানোর জন্য৷ আমি মেয়েগুলোর দিকে রাগী চোখে তাকিয়েও লাভ হলো না৷ ওরা তাকিয়ে আছে৷ আমি রেগে উনার কাছে গিয়ে হুট করেই জড়িয়ে ধরি৷ আমার এহেন কাজে সে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন৷ আমি জড়িয়ে ধরতেই ওরা হেঁসে দিলো৷ আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মনে মনে বললাম, ‘ সে আমার..! ‘

–‘ কে কার? ‘

–‘ আপনি আমার..!’

উনি এবার তার ব্লেজার আমার মাথার উপর দিয়ে হেসে উঠলেন৷ বললেন,

–‘ এই জন্যই তো বলি লাজুকলতা হুট করে আমায় জড়িয়ে ধরলো কেন..!’

উনার এতোটুকু কথা শুনে নিজে ছেড়ে চলে আসতে চাইলে উনি এবার আটকে ফেলেন৷ জার্মানি ছেলেটা ছাতা নিয়ে এগিয়ে আসতেই উনি ছাতা ছুড়ে মারতে আর তাকে গাড়িতে অপেক্ষা করতে বললেন৷ ছাতা ফুটিয়ে উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন৷ তারপর আমার হাতে ছাতা দিতেই আমি থমথমে গলায় বললাম,

–‘ আপনার মাথায় ধরুন.. আমার দরকার নেই৷ ‘

উনি রাগী চোখে তাকাতেই আমি ফিচেল হেসে ছাতা হাতে নিয়ে বললাম,

–‘ ওহহ..!আপনার হাতে তো ব্যাথা, বুঝেছি আমি ধরে রাখবো তাই তো?’

–‘ কঁচু বুঝেছিস তুই..! বকবক না করে ছাতা ধর..!’

উনার ধমক শুনে আমি ভড়কে গেলাম৷ ছাতা ধরতেই উনি আমার পিছনে এসে দাঁড়ালেন৷ আমি ঘাড় ঘুরাতেই উনি কোলে উঠিয়ে নিলেন৷ আমি আবার ভয় পেয়ে তার কলার খাঁচমে ধরি৷ উনি ভ্রুকুচকে বললেন,

–‘ এক ছাতা উঠিয়ে আরেক ছাতাও আমাকে ধরতে বলিস? ‘

আমি উনার কথা মানে বুঝতে পেরে তার বাহুতে থাপ্পড় দিতে নিলেই নিজেকে সামলে নিলাম৷ বিরবির করে বললাম,

–‘ ঢং নিজে কোলে নিবে আবার নিজেই ভাব দেখাবে৷ যত্তসব..! আমার কি পাঁ নেই? ‘

উনি হাসলেন৷ হেসে বললেন,

–‘ তাহলে নামিয়ে দেই? প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ওদের একজনকে উঠিয়ে নিয়ে আসি৷ ‘

এইবার আর হাত ফিরিয়ে নিলাম না৷ উনার বাহুতে থাপ্পড় মেরে বললাম,

–‘ আপনার চোখ একদম এয়ারপোর্টের চোরাস্তার মোড়ে ঝুলিয়ে দিবো উল্টাপাল্টা কথা বললে..! এখানে আসার সাথে সাথেই দি ডিসেন্ট কাব্য ভাই গ্রেট লুচু তে পরিণত হয়ে গেছে..!’

উনি হা হা করে হাসলেন৷ আস্তে আস্তে হেঁটে যেতে যেতে বললেন,

–‘ লুচু গিরির কি দেখেছিস তুই?’

আমি হাওয়ায় দুলছি মনে হচ্ছে৷ ছাতা একহাতে শক্ত করে ধরে থেমে থেমে বললাম,

–‘ ক.. কই আমি তো কিছু দেখি নি..! ‘

–‘ কিন্তু আমি তো শুনেছি কেও একজন বলেছে..! ‘

আমি চুপ করে গেলাম৷ চোখ পিটপিট করে তার দিকে তাকিয়ে আছি৷ হুট করে একটা জায়গায় এসে উনি দাঁড়ালেন৷ আমায় নামিয়ে দিলেন৷ আমি এখনো উনার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছি৷ সে আমার দিকে তাকিয়ে হাত ধরে ঘুরিয়ে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিলেন৷ আমার কোমরে হাত পেঁচিয়ে ধরে বললেন,

–‘ এতো শক পাচ্ছিস কেন? এখন থেকে অভ্যাস করে নে..!উঠতে বসেতে এইগুলা সহ্য করতে হবে তোকে৷ আর হ্যাবলার মতো অবাক না হয়ে সামনে তাকা৷ ‘

আমিও তার কথা বাধ্য মেয়ের মতো শুনে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে যাই৷ লেক..বৃষ্টির ফোঁটায় উন্মাদনা সৃষ্টি করছে৷ রোদের আলো প্রতিফলিত হওয়ার ফলে ছোট রঙধনু সৃষ্টি হয়েছে সেই পানির উপর৷ সুন্দর বললেও কম হবে…. আমি অবাক চোখে তাকিয়ে সেই রঙধনু ছুঁতে নিলেই আমার হাতের সাথে মিলিয়ে যায়৷ আমি খিলখিল করে হেসে উঠছি৷ উনি আমার কানের কাছে এসে বললেন,

–‘ চোখের গভীরতার মাপ জানিস কি? ‘

আমি ঘাড় ঘুরাতেই উনি গলা বাড়িয়ে চুমু দেন৷ তাড়াহুড়ো করে সামনে ঘুরে বললাম,

–‘ মাপ টাপ জানি না..! হুট হাট কাঁকের মতো ঠোঁট বাড়িয়ে চুমু টুমু দেওয়া কিন্তু লুচু গিরি..! ‘

উনার কি হলো জানি না আমার গালে আবার চুমু দিয়ে বললেন,

–‘ লুচু তো একজনের সামনেই হওয়া যায়..! আর সেই লুচু গিরি তে লুচ্চামি থাকে না থাকে ভালোবাসা..! ‘

আমি কিছু বললাম না৷ হাঁসলাম! এতো যুক্তি কোথায় পায় উনি? উনি গুণগুণ করে বললেন,

 

~” তুমি চোখের আড়াল হও,

কাছে কি’বা দূরে রও,,,,,

মনে রেখো আমিও ছিলাম,,,,

~” এই মন তোমাকে দিলাম,,,

এই প্রেম তোমাকে দিলাম,,,,


#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি

#পর্বঃ২৬

#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)

বার্লিনের সৌন্দর্য অপূর্ব.. জনবহুল এই রাজ্যে সব কিছুই মনোমুগ্ধকর৷ জার্মানের রাজধানী বার্লিন৷ এতোটা আকৃষ্ট হবে জানলে আমি আরো আগেই চলে আসতাম৷ গাড়ি ছুটে চলেছে হাই স্পিডে৷ আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সুন্দর সুন্দর ঘর আর নাম না জানা গাছের ছুটোছুটি দেখে চলেছি৷ আর উনি আমার খোলা চুলের ছুটোছুটি সামলাতে ব্যস্ত৷ আমার চুল ভিজে গিয়েছিলো বলেই সে খুলে দিয়েছে৷ আমার সেদিকে পাত্তা নেই৷ আমি বাইরে তাকিয়ে থাকতে ব্যাস্ত আর সে আমার দিকে ব্যস্ত৷ আমার চুল গুলো তার হাতে প্যাচিয়ে নিচ্ছেন৷ সেদিকে আমার কোনো দ্রুক্ষেপ নেই৷ অন্য সময় হলে চুলের টান সহ্য না করতে পেরে কেঁদে উঠতাম৷ কোমর ছাড়ানো চুল৷ উনি হঠাৎ চুল ধরে টান দিতেই আমি তার বুকের উপর ঝুঁকে পড়ি৷ ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠতেই সে তাড়াহুড়ো করে ছেড়ে দেন৷ উনি ব্যস্ত হয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

–‘ ব্যাথা পেয়েছিস? আমি তো আলতো হাতে টান দিতে চেয়েছিলাম৷ ইশ..! এখনো আগের মতোই চুলের টান সহ্য করতে পারিস না..! ‘

আমি উনার বুকে থেকে মাথা উঠিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,

–‘ আপনি কি করে জানলেন? ‘

উনি বোধহয় আমার কথা শুনে কিছুটা লুকোনোর চেষ্টা করলেন৷ কথা ঘুরানোর জন্য বললেন,

–‘ চুল গুলো বেঁধে ফেল..! আমায় বড্ড জ্বালাতন করছে৷ ‘

আমি ইচ্ছা করেই তার কথা না শুনে চুল গুলো আরো উড়িয়ে দিলাম৷ যাতে উনার চোখে মুখে আছড়ে পরে৷ আমি তার থেকে খানিকটা সরে বসলাম যাতে আরো ভালো ভাবে তাকে জ্বালাতন করতে পারে৷ আমার কাজ দেখে উনি কিছুই বললেন না৷ উল্টো হাওয়ার তালে চুলের ঝাপটা না সামলে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিলেন৷ আমার কাছে নিজে এগিয়ে এলেন তারপর জোরে জোরেই বললেন,

–‘ গাড়ির মধ্যে তোর প্রেম পাচ্ছে? ওকে নো প্রব্লেম আ’ম রেডি৷ ‘

আমি উনার কথা শুনে ড্রাইভারের দিকে তাকাই তারপর উনার দিকে৷ ড্রাইভার ছেলেটা কি ভাবছে? উনার আসলেই লজ্জা নেই৷ একদম নেই৷ আমি চুল গোছাতে নিলে উনি একদম গোছাতে দিলেন না৷ আমি যতবার চুল খোঁপা করছি৷ উনি বিগড়ে দিচ্ছেন৷ লুকিং গ্লাসে উনার আর আমার স্তব্ধ ঝগড়া দেখে জার্মানি ড্রাইভার ছেলেটা হাসছে৷ উনিও তার হাসির সাথে তাল মিলালেন৷ আমি আবার চুল বাঁধতে গেলে উনি আমার হাত টেনে ধরে তার সাথে হেসেই চলেছে৷ এইবার বিরক্ত সাথে প্রচুর রাগ লাগছে৷ আমি রেগে বললাম,

–‘ ছাড়ুন..! ও কি ভাবছে বলুন তো৷ ‘

উনি হাসতে হাসতেই জবাব দিলেন,

–‘ ওদের অভ্যাস এর চেয়েও বেশি আছে..! ‘

–‘ মানে কিসের অভ্যাস..? ‘ আমি অবাক সুরে জিজ্ঞেস করতেই উনি বললেন,

–‘ PK অভ্যাস..! ‘ আমি ঘুরে তাকাতেই উনি আবার হাসলেন৷ ব্যাপারটা বুঝতে কিছুক্ষণ লাগতেই আমি উনার থেকে হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে গিয়ে বললাম,

–‘ ইয়াক ছিঃ! আপনি এতো অসভ্য কেন? সারাদিন কি কি বলেন৷ আমার কাছে একদম আসবেন না৷ ‘

উনি আমার দিকে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে জার্মানি ছেলেটাকে বললেন,

–‘ ক্রুজ.. ডু ইউ নো এনিথিং এবাউট রোম্যান্স? ‘

জার্মানি ছেলেটা কি বলল তা বুঝলাম না৷ কারণ সে জার্মানি ভাষায় কি সব বলে দিলো৷ তার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া হু হা করে হেসে উঠলেন৷ আমি গাড়ির দরজার সাথে একদম মিশে বসে আছি৷ না জানি কি উল্টাপাল্টা বলেছেন৷ আমাকে টেনে তার কাছে নিয়ে এসে বললেন,

–‘ ডু ইউ নো ? ‘

আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে থেমে থেমে বললাম,

–‘ না.. না এ একদম জানি না.! ‘

উনি মুচকি হেসে আমার বাঁধা চুল গুলো খুলে দিয়ে বললেন,

–‘ আচ্ছা শিখিয়ে দিবো..! ‘

আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি৷ উনি চোখের পাতায় ফুঁ দিয়ে বললেন,

–‘ খাঁটি বাংলা ভাষায় বলছি তাই উনার বোঝার উপায় নেই..! অন্য সময় না হয় প্রাক্টিক্যালি শিখিয়ে দিবো৷ ‘

আমি উনার মুখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেললাম৷ হাত দিয়ে ঢেকেও শান্তি নেই৷ উনি হাতের তালুতে চুমু দিচ্ছেন৷ উফফ! কি অসহ্য ব্যাক্তি..! হাত দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থাই উনি বললেন,

–‘ অসহ্য হই আর অসভ্য সহ্য কিন্তু তোকেই করতে হবে..! ‘

_____________________________

রাস্তায় পড়ে আছে হলুদ রাঙা ফুল৷ সম্পূর্ণ রাস্তা যেন আগমণ জানাচ্ছে আমাদের৷ মৃদু হাওয়ার তালে দুলে চলেছে নাম না জানা হলুদ ফুলের গাছটা৷ আমি বিছানো ফুলের উপর পা রাখতেই একদফা ভালোলাগার ছোঁয়া মনে প্রাণে গেঁথে যায়৷ অচেনা শহরে এই উন্মাদ কাব্য ভাইয়াকে নিয়ে থাকতে খুব একটা খারাপ লাগবে না বোধহয়৷ লাগেজ গুলো ক্রুজ আর উনি সাদা ডুপ্লেক্স বাড়ির আউটডোরে রেখে আসলেন৷ আমি ঘুরে ঘুরে বিশাল বাগানের সারি সারি গাছ আর ফুল দেখে চলেছি৷ বাগানের এককোণায় টিউলিপ দেখতেই মন টা জুঁড়িয়ে যায়৷ হয়তো তাকে চিনি বলেই এতোটা আনন্দ লাগছে৷ আমি টিউলিপ ছুঁতে এসে ভুলেই গিয়েছিলাম কাব্য নামক মানুষটা আমার সাথে আছে৷ এতোটা বিভোর হয়ে গিয়েছে সে কখন আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন টের পাই নি৷ লাল রাঙা টিউলিপটা ছিড়তেই উনি ঝট করে আমায় কোলে তুলে নেন৷ আমি আবারো ভয় পেয়ে তার শার্ট খাঁমচে ধরি৷ এইভাবে কেউ কোলে উঠায়৷ আর একটু হলেই আমার আত্মা মনে হউ উঁড়ে যেত৷ আমাকে ভয় পেতে দেখে উনি কঁপাল কুচকে ফেলেন৷ বললেন,

–‘ এমন ভাব করিস যেন আমি তোকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছি..!’

উনার কথাতে কিছুটা অভিযোগের আভাস৷ আমি কি সত্যিই বেশি করছি? আমি উনার শার্ট ছেড়ে দিয়ে লাল টিউলিপ উনার মুখের সামনে ধরে বললাম ,

–‘ লাল টিউলিপ, লাল গোলাপ, ভালোবাসার প্রতীক..! ‘

উনার মুখে হাসির রেখা ফুঁটে উঠেছে৷ সামনে এগিয়ে গিয়ে বললেন,

–‘ আর বরকে হুটহাট চুমু দেওয়া পবিত্রতার প্রতীক৷ ‘

আমি মূহুর্তেই উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

–‘ ওইটা ভুল,, বরের জায়গায় বউ হবে..!’

ওহহহ শীট..কি বললাম এইটা৷ আমি মুখ কাঁচুমাচু করতেই উনি মুচকি হেসে এগিয়ে গেলেন৷

বাসার সামনে এসে নামিয়ে দিলেন আমায়৷ ঘরে যাওয়ার আগে আমার হাত আঁকড়ে ধরে বললেন,

–‘ নতুন শুরু, নতুন পথ চলা

একেটা দিন তোকে যত্ন করে আমার মঝে রাখতে চাই..! সব কিছুতে তোকে চাই৷ ‘

আমি কি বলবো খুজে পেলাম না৷ শুধু উনার হাতটা শক্ত করে ধরলাম৷ অনেক সময় নীরবতার চেয়ে সুখের উত্তর আর কিছুই নেই…!

 

দুটো বেড রুম৷ প্রত্যেকটা রুম সাদা রঙের ছড়াছড়ি৷ গ্লাস দিয়ে মোড়ানো রুম গুলো৷ ভেতর থেকে বাইরে দেখা গেলেও বাইরে থেকে ভেতরে দেখা যায় না৷ সব কিছুরে আভিজাত্যের আধুনিক ছাঁপ৷ ফার্ণিচারগুলো কাঁচের৷ কাঁচ বলেই হয়তো এতোটা শোভা পেয়েছে সব কিঁছু৷ আমি ফ্রেশ হয়ে এসেই চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছি৷ বেড রুমের সাথেই পাশে সুইমিং পুল৷ আর সেখানে দাঁড়ালেই সমুদ্রের গর্জন৷ এতোসুন্দর হয়তো না হলেই পারতো৷ আমি পুলের পানিতে হাত ছোঁয়াতেই কোথা থেকে এসে আমার হাত সরিয়ে নিলেন উনি৷ কিছু না বলেই টেনে রুমের ভেতর নিয়ে এলেন৷ এতো জলদি সব কিছু হওয়াতে আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না৷ উনি আবার আমাকে বেডের মধ্যে বসিয়ে মাথায় হাত দিলেন৷ আমি ব্যাথা পেতেই শব্দ করে উঠি৷ উনি ব্যস্ত হয়ে ফুঁ দিতে লাগলেন৷ আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে সেদিনের মতো উনার কথা কপি করে বলালাম,

–‘ আমার চেয়ে আপনি ব্যাথা পেয়েছেন বেশি সেটা কি জানেন.?’

উনি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে মলন লাগিয়ে দিলেন৷ আমি উনাকে জ্বালানোর জন্য বললাম,

–‘ আহ..! লাগছে তো৷ ‘

উনি আবার ব্যস্ত হয়ে উঠে বললেন,

–‘ আর লাগবে না আর একটু..!’

আমি মুখ টিপে হেসে উঠলাম৷ সে অনেকটা পসেসিভ৷ এতোটা সুখ আমার কাছে না আসলে আমার জীবন বোধহয় অন্য হতো৷ আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

–‘ এতো সুন্দর বাড়ি কার? ‘

–‘ আমাদের..! ‘

আমাদের ছোট একটা শব্দ হলেও মনের ভেতরের সমস্ত ভালোলাগা গুলো ডানা মেলে উড়তে শুরু করলো৷ আমি অনেক বার আমাদের শব্দটা আওড়ালাম৷ আর বার বার আমার মনে জোয়ার বইছে৷ এতোটা ভালো কেন সে?

___________

ডিনার করেই সিম পাল্টিয়ে সবার সাথে কথা বলে এইবার শান্তি লাগছে৷ আমি পানসে মুখ নিয়ে সারা ঘর সাজাচ্ছি৷ উনি কোথাও একটা গিয়েছেন আমাকে একা রেখে৷ যাওয়ার আগে শুধু বলে গিয়েছেন অফিসের কিছু একটা কাজে যেতে হবে ইমিডিয়েটলি৷ আমিও প্রশ্ন করি নি৷ এখন বিরক্ত লাগছে৷ সারা ঘরে আমি ছাড়া কেও নেই৷ একরাশ মন খারাপ নিয়ে আমার আর তার বিয়ের একটা ছবি দেখছি৷ নিঁখুত সাজ..নিজেকে দেখলে হিংসে লাগে৷ সারাদিনের জার্নিতে ক্লান্ত লাগছে সাথে ঘুম৷ বাইরে সোডিয়ামের আলোয় বোঝার উপায় নেই দিন না রাত৷ হলুদ ফুল গুলোর উপর সাদা আলো পড়ছে৷ মোহময় লাগছে..! একগুচ্ছো রাতের আঁধারে হাত ধরে হাটার মতো সুন্দর পরিবেশ৷ গাড়ির আওয়াজ পেতেই আমি দৌড়ে গেটের কাছে যাই৷ আজ হাতে হাত রেখে হাটবো সব ক্লান্তিকে ছুড়ে ফেলে৷ দরজা খুলে দিতেই তার মুখ দেখে আমার মুখে হাসি ফুঁটে উঠে৷ আমি আদুরে ভাবে বললাম,

–‘ শুনেন,, আমি রাস্তায় হাঁটবো হলুদ ফুলের উপর৷’

উনি কিছু না বলে ঘরে ঢুকতেই পাশে একজন মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি৷ আমি অবাক চোখে তাকাতেই উনি বললেন,

–‘ রাই আসো..!’

আমি থমকে দাঁড়ালাম নামটা শুনে৷ আমাকে সরতে না দেখে উনি আবার বললেন,

–‘ রাই কে বাসায় ঢুকতে দে নীতু..! ‘

 

শেয়ার করুন