কি করছে প্রিয়টা?
-কি আর করবো আপনার সাথে কথা বলছি( মুচকি হেসে ইরিনের জবাব)

‘প্রিয়’ ডাকটা ইরিন এর খুব পছন্দের।আর যদি সেটা নাঈমের কাছ থেকে শুনে তার আরো বেশি ভালো লাগে..! ইরিন আর নাঈমের সম্পর্ক এখন ১ মাস। সেদিন ইরিন, নাঈমের কথায় আর ফেরাতে পারে নি। ইরিন যখন জানতে চাইলো..
“আমার চেহারা না দেখে কেনো আমাকে পছন্দ করলেন?”
এই উত্তরে নাঈম বলেছিল,”আপনি দেখতে যেমনই হোক না কেন আমি আপনাকে শুধু মাত্র চরিত্র দেখে পছন্দ করেছি!”

ইরিন কে তখন শয়তান এতই প্ররোচিত করছিল যে সে এই অবস্থায় অন্য এক পুরুষ থেকে এমন কথা শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না জড়িয়ে গেলো হারাম একটা সম্পর্কে!!!

যদিও ইরিন চাইনি এটা করতে তাও নফসের সাথে শেষমেষ লড়াই করতে পারে নি! ইরিন না চাইলেও তার হয়ে গেছে…ইরিন বাকি সব নন মাহরমের সাথে ঠিকই সুন্দর করে পর্দা মেইনটেইন করে।শুধু নাঈমের বেলায় সে আটকে গেছে, হেরে গেলো নিজে আর জিতিয়ে দিলো শয়তান কে…!

নাঈম ছেলেটা যথেষ্ট ভালো। সেও ইরিন কে পাগলের মতো ভালোবাসে।সে হাফেয।অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।নামাজ,রোজা এবং সকল বিধিনিষেধ পালনে সচেষ্ট কিন্তু শয়তানের ধোকায় সেও….।তবে নাঈম এর ক্ষেত্রে অসাধারণ তেমন একটা গুণ নেয়।সে আগেও প্রায় মেয়ে বন্ধুর সাথে কথা বলতো।যা ইরিনের পছন্দ না ইরিনের সাথে সম্পর্ক শুরু হলে নাঈম তার মেয়ে বন্ধুদের সাথে আর কথা বলে না।যদিও এটা ইরিনের আদেশ ছিল।তাছাড়া ইরিনের সামনে নাঈম নিজেকে এমন ভাবে রিপ্রেজেন্ট করে যার কারণে ইরিন মনে করে সে তার মনের মতো মানুষকেই পেয়েছে।শুরুতে নাঈম ইরিন কে ভালোবাসতো..আস্তে আস্তে ইরিনের মনেও সে জায়গা করে নেয়। কিন্তু হাফেয হয়েও আর এদিকে ইরিন সব জেনেও হারামে লিপ্ত হলো শয়তানের ধোকায়।তাদের দুজনের কেউই চাইনি এভাবে হারামে জড়াতে কিন্তু তারা অপারগ।

এমন কি ইরিন নিয়মিত কথা বলে না গুনাহ হবে ভেবে।এতে নাঈম ও সাড়া দেয় কিন্তু ইরিন এতে বেশি স্ট্রিক্ট থাকে এমন কি সেইই প্রথমে কথা কন্টিনিউ না করার কথা বলে।তারা কয়েকদিন কথা বলে আমার বেশ কিছুদিন যাবত মেসেজ একেঅপরকে দেয় না।কিন্তু শয়তানের ধোকায় নাঈমই প্রথমে মেসেজ দিয়ে দেয় আর ইরিনও তাকে না ফিরিয়ে কথা বলা শুরু করে। এভাবেই একদিন…..

-দেখেন, অনেক দিন কথা হয়ে গেছে আমাদের গুনাহ হচ্ছে!আর কথা না বললে ভালো হবে (ইরিন)
-জ্বী, আচ্ছা কালকে থেকে আর কথা বলবো না।ঠিক আছে??
-না এখন থেকেই!! প্লিজ
-ইরিন প্লিজ আজকেই কথা বলে শেষ করে দেবো
-আচ্ছা ঠিক আছে।ইন শা আল্লাহ

ইরিন নাঈম এর কথায় বার বার গলে যায়। তাই সে দ্বিতীয় কথা ভাবতে পারে নাহ।মেয়েরা সচরাচর এমনই হয়। যাকে ভালোবাসে তাকে প্রাণ উজার করে ভাসে। তবে,, মাঝে মাঝে ইরিন নাইমের কিছু অপ্রীতিকর কাজ দেখে কষ্ট পায়।পরক্ষণেই নাইমকে সেটা জানানো হলে নাঈম আর করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে।এভাবেই চলতে থাকে তাদের সম্পর্কটা….

ইরিনের মাঝে কিছু টা পরিবর্তন এসেছে। সে এখন আর নিয়মিত তালিমে যায় না।একেক সময় একেক টা বাহানা দিয়ে নাঈমের সাথে কথা বলে ইরিন।এমন কি নাদিয়ার সাথেও তার সম্পর্কের অবনতি দেখা যাচ্ছে। তার মেসেজ সিন করে না,বা করলেও অল্প কথায় বলে।ইরিন নাদিয়াকে তার সব পারসোনাল কথা শেয়ার করতে পারলেও এই সম্পর্কের বিষয় টা বলে নি! কারণ সে জানে সে এখন যে কাজে লিপ্ত এটা মারাত্বক গুনাহ,আর নাদিয়া তা শুনলে বন্ধুত্বও নষ্ট করে দিবে।কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় সিক্ত ইরিন বুঝতে পারে না…তার কষ্টের জীবনে নাদিয়া একদিন যেভাবে বোন হয়ে আগলে রেখেছিল,এই বারেও নাদিয়াও যে তাকে এখান থেকে ফেরাবে বা ফেরাতে সাহায্য করবে! এটা বুঝে উঠতে পারে নি।।আসলে সবই আল্লাহর পরীক্ষা! ইরিনের জন্য এটা একটা পরীক্ষা ছিল কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলানোর কিন্তু……

একদিন ইরিন আর নাঈম মেসেজ এ কথা বলছিল এমন সময় নাদিয়া ইরিন কে ফোন দেয়।প্রথমে কল উপেক্ষা করলেও বার বার কল দেয়াই বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করে ইরিন।

-আসসালামু আলাইকুম,ইরিন।
-ওয়া আলাইকুমুস সালাম,কেমন আছিস?
-হাহ কেমন আছি?? আচ্ছা তোর হয়েছে টা কি একটু বলবি?
-কেন কি হবে(মনে মনে অনুতপ্ত হয়ে)
-কি হবে না?? সারাদিনই ত এক্টিভ থাকস খালি আমার সাথেই কথা বলতে পারস না তাই না??
-আরে তা কেন হবে আসলে একটু পড়ালেখার চাপে বিজি থাকি!
-পড়ালেখা! তো আগেও ছিল।তালিমে না আসার কারণ কি?
-তেমন কিছু না এরপর থেকে সত্যিই যাবো ইন শা আল্লাহ! এই মাসে একটু বেশি প্রেসারে ছিলাম।
-আচ্ছা তাহলে দেখা যাবে আসবি কি না!
-সত্যিই আসবো ইন শা আল্লাহ।প্লিজ রাগ করিস না!
-আচ্ছা আল্লাহ হাফেয

ইরিন ফোন রেখেই কেঁদে দেয়।প্রতি মুহূর্তে ইরিন বুঝতে পারে তার এই কাজ টা খুব গুণাহর কিন্তু এর থেকে সে বেরও হতে পারছে না।যখনই এই সম্পর্ক ছাড়ার কথা চিন্তা করে সে আরো কান্নায় ভেঙে পরে। কারণ সে নাঈমকে এতই ভালোবেসে ফেলেছে যে তাকে ছাড়া এক মুহুর্ত কল্পনা করতে পারে না।এমন কি তাদের মধ্যে বেশ কয়েকদিন কথা না হলে ইরিনের খুব কষ্ট হয়।সে নিজেকে বলে আমি যেখানে ২ দিনের বেশি কথা না বলে থাকতে পারি নাহ সেখানে কীভাবে সারাজীবন এর জন্য ছেড়ে দিব???

আসলে সে এমন ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়েছে যে যেখান থেকে বেরুনোর মুরদ নায়।নাদিয়ার সাথে কথা বলেই ইরিন নাঈমকে আপাতত কয়েকদিন কথা না বলার জন্য বলে।নাঈমও এতে রাজি হয়।বুঝাই যাচ্ছে তারা নফসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে খুব কষ্ট করে..!
এরপর ইরিন জায়নামাজ এ বসে অজোরে কাদে, আল্লাহ কে বলেন,”হে আল্লাহ! আমি কি করবো কিছু তো বুঝছি না,আমার দ্বারা কিভাবে এটা হলো তাও না, এখন বেরও হতে পারছি না।তুমি আমার সাথে নাঈমের বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও।”( এভাবে নির্দিষ্ট করে কাউকে চাওয়া ঠিক না,তবে যারা হারামে লিপ্ত আছে তাদের কাছে এটা চাওয়া স্বাভাবিক)

ইরিন অর্থসহ কোরআন পড়ে নিয়মিত।আজকেও পড়ছে কিন্তু আজকে তার পঠিত অংশে ছিল পর্দার আয়াত,জিনা ব্যভিচারের আয়াত।সে এগুলা পড়তে পড়তেই কেঁদে দিলো।নিজেকে শক্ত করতে পারছে না।এরপরের দিনই তালিমে ইরিন অংশগ্রহণ করে।নাদিয়া খেয়াল করে ইরিনের মন খারাপ। কারণ জানতে চাইলে কিছু বলে না।মূলত বলতে পারার মতো কাজ ইরিন করেনি! পদে পদে ইরিন হতাশায় ভোগে। ইদানিং সে খেয়াল করে তার দোয়া গুলো কবুল হচ্ছে না।নামাজে তার মনোযোগীতা কমে গেছে।এই হারাম রিলেশনশিপ এর কারণে ইরিনের জীবন টা তছনছ হয়ে গেছে….!

❝তোমরা জিনার ধারে কাছেও যেয়ো না। কারণ এটি একটি লজ্জাজনক ও নিকৃষ্ট কর্ম, যা অন্যান্য নিকৃষ্ট কর্মের পথ খুলে দেয়।❞
(সূরা:বনি ইসরাঈল আয়াত:৩২)।

প্রায় ১০ দিন হলো তাদের মধ্যে কোনো কথা হয় নি।এদিকে নাঈম আর সহ্য করতে না পেরে ইরিন কে ফোন দিয়ে দেয়।ইরিনও নিজেকে ১০ টা দিন সামলাতে পারে নি।খুব কষ্টে গেছে তার। এই কাজের অনুতপ্ত এর পাশাপাশি বেশি কষ্টে ছিল নাঈমের সাথে কথা বলতে না পারায়।তাই ইরিন কল আসতে দেখেই খুশি হয়ে ফোন রিসিভ করে।নাঈমের সাথে কথা বলতে পেরে তার মন টা আনন্দে ভরে যায়।

❝হারাম❞ মানুষকে এমন অন্ধকার পথে নিয়ে যায় যে মানুষ বুঝতেই পারে না কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম…..!
আবার শুরু হয়ে যায় ইরিন আর নাঈমের প্রতিদিনকার কথা বার্তা।সারাদিন ফোন নিয়ে চ্যাট করে। অনেক বার ফ্যামিলির কাছে ধরা পড়তে গিয়ে পড়ে নি ইরিন।আর শিরিন সুলতানাও ইরিন কে এতই বিশ্বাস করেন যে মেয়ে ফোনে কি কি করছে,কার সাথে কথা বলে তা দেখার প্রয়োজন মনে করে নি কখনো,কারণ ইরিন তেমন মেয়েই না।কিন্তু তার ভাইয়ের মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়।তবে সে সন্দেহ বেশিদিন ঠিকে না, কারণ সেও তার আপুকে বিশ্বাস করে…..!

কিন্তু ইরিন জানে সে কতোটা কষ্ট দিচ্ছে তার পরিবারকে।তাদের অগোচরে সে কোন পথে হাটছে।এগুলা ভাবলে তার বুক ফেটে কাঁদতে ইচ্ছা করে।নাঈমকে বলেই মন শান্ত করে। নাঈম তাকে সান্ত্বনা দেয় বারংবার।

পরে তারা এসব ভুলে আবার ডুবে যায় তাদের হারাম কথায়।নাঈম আজ ইরিনকে ভিন্ন এক প্রস্তাব দিলো।কিন্তু ইরিন বুঝতে পারছে না এটা করাটা ঠিক হবে কিনা।এদিকে নাঈমের কথা না শুনলে সেও মনে কষ্ট পাবে….

সকাল থেকেই মেঘ মেঘ হয়ে আছে আকাশটা।গ্রীষ্মকাল হলেও কেউ দেখে বলবে না যে এখনই বৃষ্টি পড়বে।ইরিন আনমনে বসে আছে জানালার দিকে তাকিয়ে..আজ তার মন টাও কালো হয়ে আছে প্রকৃতির মতো।একদিকে আনন্দ লাগছে অন্যদিকে ভয়।দুদিকের টানাপোড়েনে তার মন টাও বেশ ভীষন্ন!

সে মেঘ যুক্ত কালো আকাশে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে নিজের পাপের কথা চিন্তা করে অজোরে চোখের পানি ফেলছে। তার উপ নাঈম আজকে ইরিনের সাথে দেখা করার কথা বলাই সে এসব চিন্তা করছে।সেও চাইছে দেখা করতে, কেননা তাদের ২ মাসের রিলেশনে কেউ কাউকে সামনাসামনি থেকে দেখে নি…নাঈম শুরু থেকেই চাইতো দেখা করার জন্য কিন্তু ইরিন না করাতে আর দেখা হয়ে উঠেনি তাদের।কিন্তু ইরিন আজকে নাঈমকে না ফিরিয়ে দেখা করবে বলে কথা দেয়।বলতে গেলে সে এক প্রকার জোড় করে রাজি হয়েছে।কিন্তু মনে মনে সে খুব ভয় পাচ্ছে,যদি কেউ তাকে এভাবে দেখে ফেলে কোনো ছেলের সাথে?? তখন কি হবে…!

তাছাড়া সে আরো বেশি ভয় পাচ্ছে,এভাবে একটা ছেলের সাথে দেখা করা কি ঠিক হবে?? হাজার হোক যতই ভালোবাসে না কেন তা তো সব মোবাইলে এখন বাইরের কেউ যদি জানতে পারে..তখন!

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই ইরিনের ফোনে মেসেজের টুং শব্দ হয়…
নাঈমের মেসেজ পেয়ে ইরিনের কালো মুখ আবার হেসে উঠে উজ্জ্বল আলোক রশ্মির মতো…! ইরিনের আজকে কলেজে যাওয়ার পথে নাঈম ও যাবে,,, উদ্দেশ্য দেখা করা। তবে ইরিনের কড়া আদেশ যেন রাস্তায় কোথাও কথা না বলে, দূরত্ব বজায় রেখে যেন হাটে। কথা বলতে হলে ফোনে ফোনেই বলতে হবে।নাঈমও বাধ্য ছেলের মতো ইরিনের কথা শুনে।কারণ সে আজ খুব খুশি তার কাঙ্ক্ষিত প্রিয় মানুষ টার সাথে দেখা…

ইরিন আর নাঈম এক জায়গায় দাঁড়ায় বাসের জন্য,প্রথম দেখায় দুজনেই খুব লজ্জা পাচ্ছে..ইরিনের মনেও খুশি লাগছে।সে হাসছে তার অপর পাশের মানুষ টাকে দেখে।কিন্তু নেকআপ এর আড়ালে তার সুন্দর গালের লজ্জামাখা হাসি মুখ খানা নাঈম দেখতে পাই না।যদি সে দেখতো নির্ঘাত নতুন করে ইরিনের প্রেমে পড়তো।ইরিনও তার প্রাণপ্রিয় মানুষ কে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে দেখে।বাস আসলে তারা আলাদা ভাবেই যায় যেন কেউ বুঝতে না পারে।ইরিনকে কলেজে দিয়ে নাঈম অপেক্ষা করে বাইরে।এই সময়ে নাঈম ইরিনের পছন্দের চকলেট কিনে নেই।এরপর ইরিনের ছুটি হলে নাঈমকে খুজতে থাকে। খুজে পেয়েই তারা বাসে হাটার জন্য সামনে এগুতে থাকলে নাঈম ইরিন কে ফোন দেয় আর বলে যেন একটু দাঁড়ায় একটা জিনিস দিয়েই সে সামনে হেটে যাবে’ এই বলে নাঈম ফোন কেটে দিয়ে ইরিনের সামনে এসে যায় আর চকলেটের প্যাকেট টা দিয়ে ছোট্ট স্বরে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলেই চলে যায়। আকশ্মিক ঘটিনায় ইরিন কিছুটা অবাক হয়ে হেসে দেয়।আবার একটা সুন্দর চিঠিও পেল।ব্যাগে চিঠি টা ঢুকিয়ে নেই বাসায় ফিরে পড়ার জন্য।

এরপর নাঈম সামনে গিয়ে আবার ইরিন কে ফোন দিয়ে কথা বলতে থাকে। তারা বুঝতে পারে না তাদের দ্বারা তাদের আমল নামায় কত গুনাহ লিপিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে…!এই খারাপ কাজের জন্য বের হয়েছে পায়ে হেটে তাই এটা পায়ের যিনা,ফোনে কথা বলছে কন্ঠের যিনা, চোখে দেখছে চোখের যিনা। এভাবেই হারাম কাজ মানু্ষকে আরো হারাম কাজ করাতে উদ্ভুদ্ধ করে।আফসোস যদি তারা বুঝতো…!

বাসায় ফিরে ইরিন তার প্রিয় মানুষের চিঠি পড়ে খুব যত্নে রেখে দেয় তার পারসোনাল ডায়েরীতে।এভাবেই কাটতে থাকে তাদের এই হারাম রিলেশন টা…!চলে যায় আরো ২ টা মাস।এর মাঝে ইরিন নিয়মিত না হলেও মাঝে মাঝে তালিম এ যেত। নাদিয়ার সাথে বন্ধুত্ব ঠিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কোনো ভাবে নাদিয়া বুঝতে না পারে সেভাবেই থাকে।

অনেক দিন ধরে ইরিন আর নাঈমের কথা হয় না প্রায় ২৫ দিন হচ্ছে।কারণ ইরিনের কলেজে ফার্স্ট ইয়ার এক্সাম ছিল তাই নাঈম বলেছে পরীক্ষার সময় কথা বলবে না, তা না হলে পড়াও হবে না রেজাল্ট ও খারাপ হবে…এদিকে ইরিনও খুব কষ্ট করে ২৫ টা দিন কথা না বলে থেকেছে।পরীক্ষার শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ইরিন নাঈম কে মেসেজ দেই।কিন্তু নাঈম ইরিনকে ইগনোর করছে।মেসেজ সেন্ট হলেও সে রিপ্লাই করে না, এমন কি এক্টিভ থেকেও…!

ইরিনের বুক ফেটে কান্না আসে। প্রিয় মানুষ থেকে একটু অবহেলা পেলেই তার হৃদয় টা ক্ষাণ ক্ষাণ হয়ে যায়।কারণ এটাই প্রথম ছিল এর আগে নাঈম এমন করে নি…এমন কি আগে নাঈম ৩ দিন এর বেশি কথা না বলে থাকতে পেরে ইরিন কে সে মেসেজ দিয়ে দেয়।তাই ইরিনের বিষয় টা খুব অবাক লাগলো। তাই ইরিন আর কিছু না বলে অনলাইনেই আসে না এরপরের দিন সকালে ইরিন অনলাইনে গেলেও দেখে অপর পক্ষ থেকে কোনো রিপ্লাই নেই! ইরিন তো আরো কান্নায় ভেঙে পড়লো।খুব অভিমান করে তার সাথে, তাছাড়া ইরিনের মাঝে মাঝে নাঈমকে সন্দেহ হত কিছু আচরণের জন্য।তাই কষ্ট টা আরো বেড়ে গেলো।ভাবতে থাকলো কি এমন হলো যে একদিনের বেশি হয়েও সে রিপ্লাই করলো না…সেদিন আর ইরিন অনলাইনেই আসলো না।

এদিকে নাদিয়ার সাথেও তার ১ সপ্তাহের বেশি হচ্ছে কথা হয় না।তাই প্রিয় বোনের সাথে রাগ করেই ঘরে এসে গেলো নাদিয়া।সে এসে ইরিনকে কাঁদতে দেখে।ভেবেছে সে এসে নাদিয়াকে সারপ্রাইজ করবে।কিন্তু নাদিয়া উলটা ইরিনকে দেখে সারপ্রাইজড হলো! ইরিনের কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে জানতে চাইলো,
-ইরিন! আমি জানি তোর কিছু একটা হয়েছে।নাহলে তোর থেকে এমন আচরণ এতদিন ধরে আশা করা যায় না
-আরে তুইই!
-হুম বলতো বোন কি হয়েছে তোর?
-আরে কিহ হবে কিছু হয় নি
-প্লিজ ইরিন মিথ্যা বলিস না, তাইলে কান্না করছিস কেনো??
-না আসলে আব্বুর কথা মনে পড়েছে তাই
-আহ,আমি জানি তুই আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছিস।ভেবেছিলাম আমি সত্যিই তোর বোন বা ক্লোজ ফ্রেন্ড ভাবিস,,না হলে আমাকে এভাবে না বলে থাকতে পারতি না।
-সত্যিই তুই আমাকে ভুল বুঝিস না প্লিজ!
-আচ্ছা কি আর করার।তা খবর কি?

নাদিয়া আর কথা না বাড়িয়ে ইরিনের সাথে অন্য বিষয়ে গল্প করে।কত দিনের জমানো কথা। একটার পর একটা বলে সময় পার হয়ে যায়।ফলে ইরিনের মন টাও একটু ভালো হয়েছে।নাদিয়া না আসলে হইতো আজকে সারাদিন কেঁদেকেটেই যেত। হঠাৎ গল্পের মাঝে নাঈমের কল আসে।ইরিন স্ক্রিন দেখে চিন্তায় পড়ে যায় নাদিয়ার সামনে। যদিও নাম্বার টা সে ‘নাঈমা’ দিয়ে সেইভ করে রাখে যেন নাঈম ফোন দিলে কেউ না বুঝে। বারবার কল করাই বাধ্য হয়ে ইরিন ফোন রিসিভ করে।মেয়ের সাথে কথা বলছে এভাবে করে ইরিন নাঈমের সাথে কথা বলে।নাঈম কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে তাড়াতাড়ি কেটে দিলো।নাদিয়ার বিষয়টা কেমন জানি লেগেছিল। তাও সে কোনো কথা বাড়াই নি। নাদিয়ার যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে।বিদায়ের সময় ইরিন কে উদ্দেশ্য করে বললো,
❝ প্রিয় বোন! জানি তুই কোনো সমস্যায় পড়েছিস।যেটা কাউকে বলতে চাচ্ছিস না।সমস্যা টা হইতো গুরুতর নাইলে আমার ইরিন এমন ছিল না।হাজারো কষ্টের মাঝে তোর ঠোঁটে থাকতো সেই টোল পড়া হাসি।তুই আমাকেও বলছিস না।থাক! এতে আমি রাগ করে নেই তবে কষ্ট পেয়েছি এই ভেবে যে তুই আর আমি এত ক্লোজ আর এত আপন হয়েও মনের সত্যিকারের বন্ধু হতে পারলাম না।যাকে নির্দিধায় সব কষ্ট শেয়ার করা যায়। যাই হোক আমাকে না হয় নাই বললি কিন্তু আল্লাহ কে বল…! তিনি তো তোর সব কষ্ট ধুয়ে মুছে দিবেন তার কাছে চা।প্লিজ এভাবে নিজেকে কষ্ট দিস না। আমার সহ্য হচ্ছে না।আসসালামু আলাইকুম। ❞

বলেই মুচকি হাসি দিয়ে নাদিয়া চলে যায়।এদিকে ইরিনের চোখজোড়া জলে টলটলে হয়ে গেছে…সে জোরে জোরে শ্বাস নেই। তার দম বন্ধ হয়ে আসতে চাচ্ছে।।দ্রুত সিজদায় অবনত হয়ে ইচ্ছামতো কাঁদলো ইরিন।ইরিন এই অন্ধকার থেকে মোটেও বের হতে পারছে না তার মনে জোর আসছে না যে সে পারবে।এমন সময় নাঈমের আবার কল আসে, ফোন রিসিভ করেই ইরিন বলে অনলাইনে আসেন মেসেজে কথা বলবো।
ইরিন কথা বলে জানতে পারলো নাঈম নাকি খুব ব্যস্ত ছিল তাই মেসেজ দেখেনি।কিন্তু ইরিন জানে এটা তার মিথ্যা বাহানা সে ইচ্ছে করেই এমন করেছে।তাই সে আর কথা বাড়ায় নি।

কথার মাঝে মাঝে নাইম বারবার নিজেকে ব্যস্ত প্রমানিত করতে পটু। ভালো করে কথাও বলছে না ইরিনের সাথে। কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে সারাদিনে মিলে ১/২ তাদের কথা হয়,তাও শুধু অল্প। এমন আচরণে ইরিনের আরো খারাপ লাগে।শুরুর নাঈম আর এখনের নাঈমের আকাশ পাতাল পার্থক্য আঁচ করতে পারে।জিজ্ঞাসা করলে বলে আমি ব্যস্ত তাই কথা বলতে পারছি না।

একদিন ইরিন নিউজফিড ঘুরতে দেখে নাঈমের……

৭.
ইরিন নাদিয়ার সাথে আজকে তালিমে যাচ্ছে। পথে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলে না।কারণ ইরিনের মন খারাপ।মন খারাপ থাকলে মেয়েটা চুপ করে থাকে! তার নিজেকে খুব হতাশ মনে হচ্ছে,হাজারো দুশ্চিন্তায় সে বিভোর,অন্তরের পীড়া গুলো তাকে গ্রাস করে ফেলেছে।নিজের জীবনের এই পর্যায়ে গিয়ে সে অনুশোচনায় ভোগছে…মনে মনে আওড়াচ্ছে কেন সেদিন মানুষ টাকে সুযোগ দিলাম…কেনো??

গতকাল নিউজফিড ঘুরতে দেখে নাঈমের কিছু আপত্তিকর কমেন্ট তাও আপত্তিকর একটা পোস্টে….দেখেই চোখ দু’টো কে বলতে হলো না যে পানি পড়তে…কেননা ব্যাথা টা অন্তরে লেগেছে…সাথে সাথে বলে উঠলো,, “আমি কি ভুল মানুষকে চয়েজ করেছি??”
পোস্ট টার স্ক্রিনশট নিয়ে সে নাঈমকে পাঠায়।নাঈম ব্যস্ত থাকায় ইরিনের মেসেজ এখনো দেখে নি।সত্যিই ছেলেটা ব্যস্ত। প্রথমে ইরিন তাকে ভুল বুঝেছিল ব্যস্ততার বাহানা ধরে! তবে ব্যস্ততার ফাঁকেও যে সময় দিয়ে একটু হলেও কথা বলে নি তা না,বলেছে কথা! কিন্তু আগের মতো আর কথা হয়ে উঠে না তাদের।এতে ইরিন রাগ করে,অভিমান করে কেননা সেও হাজারো ব্যস্ততা থাকলেও প্রায়োরিটি দিতো নাঈম কে!কিন্তু নাঈম আগে ব্যস্ত ছিল না বলে কথা বলতো এখন ব্যস্ত থাকায় আর সময় দিয়ে কথা বলে না এজন্য ইরিন মনে কষ্ট পায়।মাঝে মাঝে মনে হয় একপক্ষীয় ভালোবাসা!!

নাঈমের পরে সময় হল তখন ইরিনের মেসেজ দেখতে পাই আর দেখেই তার চোখ দুটো কপালে উঠে…! সরি বলে ইরিনকে।তার সাথে ওয়াদা করে যেন এমন আর করবে না…!ইরিন এতক্ষণ নাঈমের রিপ্লাই না পেয়ে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে ছিল তা তারই মিষ্টি মিষ্টি কথায় গলে ভালোবাসায় পরিণত হলো।মেয়েটা বেশিক্ষন তার সাথে রাগ করে থাকতে পারে না।ইরিন যতবার চায় তার প্রতি ক্ষোভ বৃদ্ধি করে তাকে ভুলে গিয়ে সম্পর্ক টা থেকে ইস্তফা নিতে ততবারই সে নতুন করে ভালোবেসে ফেলে…আসলে ইরিন হৃদয়ের গভীরে নাঈমকে জায়গা দিয়েছে যার কারণে সে কোনো মতে এটাকে বের করতে পারছে না।

তালিম শেষ করে ইরিন আর নাদিয়ে বাসায় ফিরছিল হঠাৎই এক মেয়ে নাদিয়াকে ফোন দিয়ে তাদের বাসায় যেতে বলে।মেয়েটি তালিমে বসতে চাচ্ছে তাই নাদিয়াকে ফোন দিয়েছিল।ইরিন আর নাদিয়া এখন মেয়েটার বাসায় যাচ্ছে। অচেনা এক পথ দিয়ে যাচ্ছে তারা,কিন্তু জায়গা টা অসম্ভব সুন্দর।চারপাশে গাছগাছালির সমাহার আর মাঝে সরু রাস্তা।সামনে এক ভেলপুরি ওয়ালাকে দেখে তারা দুজনই লাফিয়ে পড়লো। এত সুন্দর পরিবেশে মিস করতে চাইলো না তাদের প্রিয় খাবার টা।নেকআপের আড়ালে খুব সুন্দর করে এক জায়গায় বসে তারা তাদের প্রিয় খাবার টা খায় যেন কোনো পুরুষ মানুষ না দেখে।মেয়েটার বাসাটা একটু দুরই আছে হাটতে অনেক সময় লাগবে।হাটতে হাটতে তারা পর্দা নিয়ে আলোচনা করতে থাকে। তখনই নাদিয়া কোরআনের একটি আয়াত শুনায়,,,
আল্লাহ বলেন,
❝হে মুমিনগন তোমরা কেন এমন কথা বলো যা তোমরা নিজেরাই মেনে চলো না? তোমরা যা করো না, তা অপরকে বলা আল্লাহর কাছে অতিশয় অসন্তোষজনক।❞
(সূরা সফ: ২-৩)

আয়াত টা শুনে ইরিনের হৃদয় জুড়ে কষ্ট এসে ভিড় করে।হাটতে থাকা ইরিন দাঁড়িয়ে পড়লো।মনে হয়েছে কথাটা তাকেই বলা হয়েছে।তার মনে আসতে থাকে,,,আমিও তো সবাইকে পর্দার ব্যাপারে সজাগ থাকতে তাগিদ দিই! কিন্তু আমি কি আদো পরিপূর্ণ পর্দা করছি?? আমি তো একজন নন মাহরামের সামনে সঠিক পর্দা করি না,,,নাঈমের কাছে…..! এখন আমিও তো এই আয়াতের বিরুদ্ধাচারণকারী!!

সে কান্না করতে করতে বসে পড়লো! রাস্তায় তেমন কেউই ছিল না। নাদিয়া ইরিনের এমন অবস্থা দেখে খুবই ভয় পেয়ে যায়।বলে,

-ইরিন!! কি হয়েছে তোর হঠাৎ?? এভাবে কাঁদছিস কেনো??
-(কাঁদতে কাঁদতে) নাদিয়া আমি খুব খারাপ,,খুউউব।আমি অনেক বড় পাপী…(বলেই আমার জোরে কেঁদে দিলো)
-কি হয়েছে সেটা তো বল?
-তোকে সব বলবো আমি আজকে।
-আচ্ছা একপাশে আয়।
-আগে বল, সব শুনে আমাকে খারাপ ভাববি না?? প্লিজ! এতদিন আমাকে খারাপ ভাববে বলে কাউকে কিচ্ছু বলি নি,,এখন তুই যদি খারাপ ভাবিস তাইলে আমার সহ্য হবে না।আমি খারাপ না, আমি পরিস্থিতি স্বীকার।(কান্না করতে করতে)
-আচ্ছা,আচ্ছা! মানুষ ভুল করতেই পারে।তবে ভুলকারীর মধ্যে উত্তম হলো সে যে এই ভুল থেকে ফিরে আসে।তুই তোর টা বলে ফেল…
-বোন আমি একটা হারাম রিলেশন এ আটকিয়ে গেলাম….(কেঁদে কেঁদে)

ইরিন নাদিয়াকে তার সব কৃতকর্ম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলে ফেলে। তার এতদিনের করা পাপ গুলো সে অনেক কষ্টে নাদিয়া কে বলে। সামান্য একজনের সামনে নিজের গুনাহ প্রকাশ করতে তার বুক ফেটে যায়।কেয়ামতের মাঠে নিজের সব কৃতকর্ম মানুষ কিভাবে শুনবে…!

নাদিয়া সব শুনে নিজেও কেঁদে দিলো।তার প্রাণপ্রিয় বোনের এমন কর্ম শুনে।পরক্ষণে ইরিনকে শান্ত করে বলে,
-তুই কি চাস এই সম্পর্ক থেকে বের হতে???
-হ্যা রে আমি তো জড়াতেই চাইনি…কিন্তু বের হতে তো পারছি না..
-আহহা! তুই আমাকে আগে বল যে তোর ডিসিশন,, বের হবি নাকি হবি না??
-…..(চুপ থাকে ইরিন)
-কিরে?? বল? তাইলে তুই চাচ্ছিস হারাম সম্পর্ক চালিয়ে নিতে তাই তো??
তুই কি চাস কেয়ামতে নিজের লজ্জাস্থান কে আগুনে পুড়তে দিতে,,,হাজার হাজার বছর ধরে???
-না না কক্ষোনোই না!! আমি ফিরে আসবো (কাঁদতে কাঁদতে)
-মন থেকে বলছিস তো??
-হ্যা বোন মন থেকে, কিন্তু তাকে আমি কিভাবে ভুলে থাকবো??
-তোকে পারতে হবে,যেমনই হোক না কেন!!?
-কিন্তু নাঈম শুনলে কি বলবে?
-তোর নাঈম আগে নাকি আল্লাহ আগে??
-আল্লাহ অবশ্যই (অনুতপ্ত হয়ে)
-আচ্ছা এবার বাদ দে।কথা বলতে বলতে দেখ বিকাল পার হয়ে গেছে।এখন ওই বোনের বাসায়ও আর যাওয়া হবে না। ফোন দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে।

ইরিন আর নাদিয়া আর কোথাও না গিয়ে নিজেরা নিজেদের বাসায় চলে যায়।ইরিনের মন টা আজ খুব হালকা লাগছে নাদিয়াকে এতোসব বলতে পেরে।কিন্তু সে এখান থেকে ফিরতে পারবে কিনা বুঝতে পারছে না।যতবারই নাঈমের মুখ তার সামনে ভেসে উঠছে ততবারই সে ডুকরে কেঁদে উঠলো….!

সে কি পারবে এই অন্ধকার থেকে আলোকে খুজে পেতে?? পাবে কি আলোর সন্ধান??

ইরিন মুখ হাত ধুয়ে আছরের নামাজ পড়ে নেই।নামাজ শেষে মন দিয়ে দোয়া করে। কারণ এখন যে দোয়া কবুলের সময়।শুক্রবার আছরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত।তাই সে মনের সব যন্ত্রণা আল্লাহকে শেয়ার করে।ফলে তার হৃদয় টা প্রশান্তিতে ভরে গেলো।মাগরিবের আজান দিলে সে নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে।

কিছুক্ষণ পর ইরিন মোবাইল হাতে নেয় নাদিয়াকে মেসেজ দেওয়ার জন্য…! দেখা গেলো নাদিয়া অনেক মেসেজ দিয়ে রাখে ইরিন কে।মেসেজ গুলো ছিল অনেক বড় বড়।
ইরিন পড়া শুরু করে,মেসেজ গুলো ছিল তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বার্তা যা তার জীবন কে……..

নাদিয়া সবসময়ই চাই ইরিন কে নিয়ে জান্নাতে থাকতে! কারণ ইরিন কে সে বোনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে। তাই সে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, ইরিনকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার।এই কারণেই নাদিয়া এক জ্ঞানী আপুর থেকে এই বিষয়ে পরামর্শ চাইলো।মানে কিভাবে এর থেকে একেবারের জন্য বের হয়ে যাওয়া যায়।নাদিয়া ওই আপুর থেকে পরামর্শ নিয়ে সেটা ইরিনকে দেয়।

পরামর্শ টা ছিলো এমন…….

❝এটার একমাত্র আন্সার হচ্ছে হয় বিয়ে,, না হয় শেষ মানে পুরাপুরি শেষ। মাঝে মাঝে আবার যোগাযোগ করা যাবেনা।ইসলামের ক্ষেত্রে কোন কম্প্রোমাইজ নেই। নেই মানে নেই। জিনা এমন একটা জিনিস যেটা আপনাকে গুনাহ থেকে দূরে রাখবেনা বরং আরো গুনাহের দিকে ঠেলে দিবে।
আল্লাহর ভালবাসাটা প্রত্যেক টা মানুষের বুঝা উচিত।শুধুমাত্র এটা খেয়াল করেন ওনারা যোগাযোগ বন্ধ রাখতে চাইলেও কিন্তু বন্ধ হচ্ছেনা,,আবার ইনভলভ হচ্ছে সেটা যদিও বা লেইটে হোক না কেন।

যখন আল্লাহ কে ভালবাসা শুরু করবেন ,তখন আপনার কাছে ঐ মানুষ টার ভালবাসাটা কম মনে হবে। আসলে আল্লাহর প্রতি ভালবাসাটা আর বিশ্বাস টা ডিপ করতে পারছেননা।তাই হারাম থেকে বের হতে পারছেননা পারমানেন্টলী।

হে উনি যদি আসলেই আল্লাহর ভালবাসা টা বুঝে তাহলে ওনার দোয়া আর অপেক্ষা টা তো আল্লাহ ফিরাবেন না। আর আল্লাহ ওনার জন্য সব থেকে সুন্দর পদ্ধতিতে সুন্দর ভাবেই সব করবেন। ওনাকে ডেইলি তাহাজ্জুদ কন্টিনিউ করতে বলবেন আর বেশি বেশি ইস্তিগফার করতে বলবেন।

মেক্সিমাম আলেম রা রিসার্চ করার পর এই আন্সার টাই দেন এবং সব থেকে সুন্দর পথ হচ্ছে আল্লাহর ডিসিশানের জন্য ওয়েট করা।

উনি যদি নিজের ভুল টা নিয়ে চিন্তা করতে না পারেন তাহলে আল্লাহর নিয়ামত বুঝবেন কিভাবে?
আল্লাহর কাছে এভাবে চাইতে হবে, আল্লাহ, যদি সেই মানুষটা আমার দুনিয়া এবং আখেরাতের জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে আমাদেরকে হালাল ভাবে মিলিয়ে দিন।

বোনটাকে বলবেন, তোমাকে যিনি দুনিয়ায় পাঠাইছেন তার জন্য কাউকে ছেড়ে দাও,, আল্লাহর জন্য যাকে ছেড়ে দিয়েছ তাকেই আল্লাহ বেস্ট একটা ভার্সনে তোমার কাছে আবার পাঠাবেন। শুধু আল্লাহর উপর তাওয়াক্ক্বুল টা বাড়াতে বলেন।
যদিও বা কষ্ট হবে কিন্তু আল্লাহতো বলেছেনই–

“নিশ্চই কষ্টের সাথেই আছে স্বস্তি”

–আল্লাহর কাছে যেভাবে সেইফ থাকবে আর কারো কাছে সেভাবে সেইফ থাকবেনা,, যখন আমরা কাউকে কোন জিনিস আমানত দিই তখন বলি এই জিনিস টা যত্ন করে রেখো অথবা দেখে রেখো ,এখনো ঠিক এটাই চিন্তা করতে হবে।ঐ মানুষ টা কে আল্লাহর কাছে জমা দিয়ে দিচ্ছেন। আল্লাহর থেকে বেস্ট কেউ তাকে রাখবেনা। যদি সে আমার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে যত দিন পরই হোক না কেন আল্লাহ অবশ্যই তার সাথে মিলিয়ে দিবেন।

আমাদের শুধুমাত্র আল্লাহর ব্যাপারে সিরিয়াস হতে হবে ,দুনিয়াটা পার্থিব সুখ দিয়ে না মৃত্যুর চোখ দিয়ে দেখতে হবে,,আখিরাত হিসেবে দেখতে হবে ,,ইন শা আল্লহ সব ঠিক হয়ে যাবে..

আর সম্পর্ক টা শেষ মানে শেষ,,,এটা থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র পথ হলো গুনাহের বীজ উপড়ে ফেলা অর্থাৎ হারাম রিলেশন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া।❞

————————————————————–

ইরিন নাদিয়ার দেওয়া মেসেজ টা পড়তে থাকে আর তার হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে আসছিল।সে কান্না করছে অবিরত।পড়তেই পড়তেই তার মনে সাহস আসে আর এতই আল্লাহ তা’লা তাকে সাহস দেন যে সে সেই মুহুর্তে হারাম সম্পর্ক ছেড়ে দেওয়ার ডিসিশন নিয়ে ফেলে।এখানে যেভাবে গুনাহর বীজ উপড়ে ফেলতে বলা হয়েছে ইরিনও তাইনকরতে উদ্ভুদ্ধ হয়েছে…! এটা আল্লাহর রহমত বৈ আর কিছুই না!

এরজন্য সে নাঈম কে জানানোর কথা চিন্তা করে। সে জানে নাঈম এতে তাকে সাহায্য করবে অবশ্যই কারণ নাঈমও চাইনি এভাবে হারামে জড়াতে।শয়তানের চক্রান্তে তারা ফেঁসে গিয়েছিল।

এরপরই ইরিন নাঈমকে মেসেজে এই পরামর্শ টা শেয়ার করে।।নাঈম মেসেজ পরেই হতভম্ব। নাঈম রিপ্লাই দিলো….,

-ইরিন!!
-জানি, আপনি অবাক হচ্ছেন।কিন্তু জানেনই তো আমাদের কত গুনাহ হচ্ছে। তাই আমি আর এই সম্পর্ক রাখবো না।আর আপনিই বলেন যদি আল্লাহ আপনার সাথে আমার জোরা রেখে থাকেন তাহলে আমাদের পরিচয় না হলেও ঠিকই বিয়ে হতো।তাহলে কেন আমরা শুধু শুধু হারাম ভাবে নিজেদেরকে পেতে যাবো? তাই কপালে যেটাই থাকুক না কেন।এই হারাম থেকে আমরা বের হবো।কি বলেন আপনি?(কান্নারত ইরিন)
-অবশ্যই! ইন শা আল্লাহ আমাদেরকে পারতেই হবে।
-তাহলে আমাকে সবদিক থেকে ব্লক দিয়ে রাখিয়েন। আর আমিও আপনাকে ব্লক দিয়ে দিবো ইন শা আল্লাহ
-ইরিন আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
-আমারো কান্না আসতেছে অনেক। কিন্তু আমরা আল্লাহকে যে বেশি ভালোবাসি একেঅপরের থেকে সেটা প্রমাণের জন্যও আমাদেরকে এমন টা করতেই হবে।মনে করবেন না আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না। খুব হচ্ছে….!বুক ফেটে যাচ্ছে…!

এরপর ইরিন নাঈম থেকে বিদায় নিয়ে তার সাথে করা সব চ্যাট ডিলিট করে দেয়।আর নাঈমও ডিলিট করে দেয়। ইরিন নাঈমকে একেবারে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিয়েছে।।যেন কোনোভাবেই আর কথা না বলা হয়।নাঈম যেন ইরিনের স্মৃতি তে এসে উঁকি না দেয় তার জন্য নাঈমের সব স্মৃতি সে মুছে ফেললো।।ছিড়ে ফেলেফিল প্রথম দেখায় দেওয়া চিঠি টা।ডায়েরিতে নাঈম সম্পর্কে ইরিন যা যা লিখতো সব ছিড়ে ফেলে দিয়েছিলো সে রাতে। শয়তান যেন আর ইরিনকে আর কোনো ভাবে প্ররোচিত না করে তার সব বন্দোবস্ত সে করেছে।সে প্রমাণ করতে চেয়েছে নাঈমের চাইতে সে আল্লাহ কে বেশি ভালোবাসে।

ইতি টানলো ইরিন আর নাঈমের ৬ মাসের ছোট্ট একটা হারাম সম্পর্কের গল্প…!শুরু হলো ইরিনের নতুন করে সব কিছু করার…।

ইরিনের সেই রাতে আর ঘুম হয়নি।পুরো নির্ঘুম একটা রাত কাটায় সে। শুধু জায়নামাজে বসে আছে আর চোখের পানি ফেলছে।তার খুব কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে কিভাবে এত বড় পাপ তার দ্বারা হলো।ইরিন রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে খাঁটি মনে তওবা করে।তওবা অর্থ ফিরে আসা।আর সে একেবারের জন্য ফিরে আসার ওয়াদা করেছে মহান রবের কাছে। সে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছে যে আর কখনো সে নাঈমের সাথে কোনো ভাবেই কথা বলবে না…….!

জায়নামাজে সিজদায় দোয়া করতে করতে ইরিনের সেখানেই ঘুম চলে আসে।ফজরের সময় উঠতে গেলে মা শিরিন সুলতানা দেখে অবাক হয়।ইরিন কে তিনি ডেকে দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-উঠ,,,,এখানে শুয়ে আছিস কেন,আম্মু?
-অহ, আসলে আম্মু বসতে বসতে হঠাৎ ঘুম এসে গিয়েছিল হইতো।(ঘুম ঘুম চোখে)
-অহ আচ্ছা! যা এবার ওজু করে নামাজ পড়ে নে।
-জ্বী আম্মু।

এরপর ইরিন নামাজ পরে আবার আরাম করে লম্বা ঘুম দিলো।কেনো যেন তার আজকের ঘুমটায় অনেক প্রশান্তি জড়ানো।আল্লাহর রহমত জড়ানো,হারাম থেকে ফিরে সদ্য তওবাকারীর ঘুম।

সকালে উঠে সে তার আবারো তার কৃতকর্মের কথা চিন্তা করে কাঁদে…….

শেয়ার করুন