সকাল নয়টা বাজে। মতি বাজার থেকে কিছু ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছে। মাছ কাটতে বসেছেন আসিফা বেগম ও পাপিয়া বেগম। অভ্র বাইরে থেকে এসেছে। সে তাদের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,
‘চারটা মেয়ে থাকতেও সব কাজ তোমরা করো কেন? তোমরা তাদের দিয়ে কাজ করাও না কেন?’
আসিফা বেগম বলেন,
‘শ্বশুর বাড়ি গেলে তো কাজ করবেই। বাবার বাড়িটা একটু সুখ করুক।’
অভ্র বলল,
‘শ্বশুর বাড়ি যেয়োও কাজ করবে না। সে-সময় আরো আলসেমি করবে। ওরা কি করছে?’
পাপিয়া বেগম বললেন,
‘ঘুমাচ্ছে।’
অভ্র কড়া গলায় বলল,
‘সকাল ৯টা বাজে এখনো ঘুম? ওয়েট। আমি তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছি।’
হঠাৎ গালে ঠান্ডা লাগছে। বর্ষা চোখ খুলে অবাক হয়ে জোরে চিৎকার করতে লাগলো। ইলিশ মাছ হাতে নিয়ে অভ্রর পেছনে ছুটলো সে। অভ্র দৌঁড়াতে শুরু করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো। মা আর চাঁচির পেছনে দাঁড়িয়ে গেল। পাপিয়া বেগম ধমক দিয়ে বললেন,
‘কি হচ্ছে? মাছ নিয়ে ছুটছ কেন?’
মায়ের প্রশ্নের উত্তর দিল না বর্ষা। আসিফা বেগম তাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘বড়আম্মু অভ্র ভাইকে কিছু বলবা? আমি ঘুমাচ্ছিলাম, সে আমার মুখে ইলিশ মাছ ধরে রাখছিল।’
ছেলের দিকে তাকালেন আসিফা বেগম। সে জোরে বললেন,
‘অভ্র?’
অভ্র মৃদু হেসে বলল,
‘কয়েকবার ডাকার পরও ঘুম ভাঙেনি। মাছ ধরতে ওঁ উঠে বসল।’
অভ্র হাসি থামিয়ে ফের বলল,
‘মুন্নি বা তিন্নি রুমে নেই। তারা কোথায়? রিমাকেও দেখিনি।’
পাপিয়া বেগম বললেন,
‘মুন্নি আর রিমা বাজারে গিয়েছে বলল কি কাপড় লাগবে। আর তিন্নি হাসপাতালে গেল। আজ শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হাসপাতালে থাকবে। শুক্রবারে রোগীদের ভিড় একটু বেশি থাকে।’
মাথায় হাত বুলিয়ে বলল অভ্র,
‘হ্যাঁ, ভুলে গেছি।’
বর্ষা রেগে গিয়ে বলল,
‘এই মাছ দিয়ে কী করব?’
আসিফা বেগম বললেন,
‘আমাকে দে। দুপুরে ভাজবো।’
মাছটি আসিফা বেগমের হাতে তুলে দিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বর্ষা। হনহন করে চলে গেল।
দুপুরের পর নূর ইসলামের মেয়ে নূরুন্নাহার বিয়ের প্রস্তাবের কথা তুললেন। পাত্র বর্ষাকে খুব পছন্দ করে। নুর ইসলাম ভ্রুকুটি করলেন। বাড়ির বড় মেয়েরা এখনো বিয়ে করেনি সেখানে ছোটোটার সম্পর্কের কথা কিভাবে বললেন? তিনি সরাসরি না করলেন। অপূর্ব বলল,
‘নানা ঠিকই বলেছেন মা। তাছাড়া বর্ষা এখনো পড়ছে। কলেজ পাশও করেনি। তার বিয়ে দিবে কিভাবে?’
নুরুন্নাহার ছেলেকে ধমক দিয়ে বললেন,
‘ভালো ছেলে সবসময় পাওয়া যায়? ছেলে ভালো, বংশ আছে। সমস্যা কি?’
অপূর্ব রাগী গলায় বলল,
‘এই বাড়িতে বিয়ে হলে বড় মেয়ে মুন্নি, তিন্নির বিয়ে আগে হবে। তারপর রিমা ও বর্ষার বিয়ে নিয়ে আলোচনা হবে।’
নাহিদ ইতস্তত করে বলল,
‘কিন্তু?’
অপূর্ব কাঠখোট্টা বলল,
‘খান বংশের মেয়েরা যথেষ্ট ভালো। তাদের সাথে ভালো হবে। ইন শা আল্লাহ। মেয়ে বড় হয়ে গেছে বলে বিয়ের প্রস্তাব আসবে বলে লাফালাফি করে বিয়ে দেওয়া যাবে না। বিয়ের সময় হোক তখন দেখা যাবে। আর এসব বিয়ের কথা মেয়েদের শুনাবে না। বিয়ের কথা শুনলে মেয়েদের লজ্জা ভেঙে যায়।’
অপূর্ব বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। অভ্র মাথা নিচু করে মৃদু হাসলো। অপূর্ব অভ্রর থেকে এক মাসের ছোট। ছোট ভাইয়ের কথা অভ্রর ভালো লাগলো।
বিকেলের রোদ চারিদিকে ঝলমল করছে। সাদা কামিজ, নীল ওড়না ও সালোয়ার পরে ছাঁদে আসে বর্ষা। অভ্রকে দেখে পা ধীর করে দিল। সে ঘুরে অভ্রর দিকে তাকাল। অভ্র তাকায়। সে ভ্রু কুঁচকে কিছু জিজ্ঞেস করল। যার অর্থ, কি? বর্ষা ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে ডান থেকে বামে মাথা নাড়ল। যার অর্থ, কিছুই না। মুখে কিছু না বললেও তার অস্থির মন অভ্রর দিকে ছুটতে থাকে। কিন্তু তার মুখটা খুব শান্ত।
বর্ষা প্রায় স্বপ্ন দেখে, চোখের পাতায় ঝিকিমিকি করছে স্বপ্নের দর্শন। মাতাল হয়ে সে একটি ঘরে বসে আছে এবং তার চারপাশে বসে থাকা বেশ কয়েকজন মহিলা তার দিকে তাকিয়ে আছে। কাজী সামনে বসে আছে, বিয়ে পড়াচ্ছেন। বরের নাম অভ্র। এবং তারপরে স্বপ্ন গভীর হয়, সে নিজেকে অভ্রর বুকে উপস্থাপন করে।
বর্ষা অভ্রর মুখোমুখি হতে চায় জানতে চায় কেন সে এমন স্বপ্ন দেখছে। টানা দুদিন একই স্বপ্ন দেখার কি কোন মানে আছে নাকি অকারণে মাথা ঘামাচ্ছে? বর্ষা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠোঁট কামড়াতে শুরু করেছে।
গম্ভীর অভ্র চোখ পিটপিট করে, তারপর তার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় জিজ্ঞেস করল,
‘বাড়িতে খেতে দেওয়া হয় না? ঠোঁট কামড়াচ্ছিস কেন?’
বর্ষা ভ্রুকুটি করল। সে গম্ভীর সুরে বলল,
‘অভ্র ভাই আপনার কি?’
অভ্র মাথা নিচু করে নরম গলায় বলল,
‘কিছু না।’ বলে থামল। তারপর ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,
‘আমি সেই সীমান্তে হারিয়ে যেতে চাই;
যেই সীমানার শেষ প্রান্তে তোমায় পাবো।’
বর্ষা স্পষ্ট শুনতে পেল ক্ষীণ কণ্ঠস্বর। গম্ভীর কণ্ঠটা নিমিষেই নরম হয়ে গেল,
‘কিছু বললেন?’
অভ্র বলল,
‘না।’
অভ্র চলে গেছে। বর্ষা বলল,
‘ইন্ট্রোভার্ট পার্সন মানুষ কি এমন হয়?’
◩
দুই সপ্তাহ পর।
দেয়াল ঘড়ি টিক টিক করে চলছে তার কোন ক্লান্তি নেই। গভীর রাত ঘড়ির কাঁটা বারোটা বাজল আর জোরে জোরে টুংটাং শব্দ হল। বর্ষার খুব ঘুম পাচ্ছে সে চোখ খুলতে পারছে না। ঘরে আবছা আলোয় ডিম লাইট জ্বলছে। বারান্দায় কিছু পরার আওয়াজ হলো। বারান্দার দরজাটা ভেজানো ধাক্কায় খুলে গেল। সে স্থিরভাবে বিছানার কাছে গেল। অভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে তাকে দেখতে ব্যস্ত। তর্জনী ঠোঁট ছুঁয়ে আদর করল। সে মাতাল কণ্ঠে বলল,
‘তোমার ঠোঁটের উষ্ণতায় ডুবতে ইচ্ছে করে। ‘
অভ্র সময়কাল বিলম্ব করলো না। তার এখানে থাকা উচিত নয়। শরীরে শিরশির করে শিহরণ ভাব জাগছে। অভ্র উঠে দাঁড়াল। বর্ষা নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল,
‘আপনি এসেছেন অভ্র ভাই?’ বর্ষা থেমে গেল। তারপর আবার বলল, ‘আমি জানি আপনি প্রতিদিন আমার ঘরে আসেন।’
অভ্রর পা থেমে গেল। বিছানা থেকে উঠে অভ্রর সামনে এসে দাঁড়াল। বর্ষা গভীর মনোযোগে ঐ দুই চোখের দিকে তাকাল। ক্ষীণ গলায় বলল,
‘আমাদের বিয়ে হয়েছে অভ্র ভাই। এই সত্যটা আপনি সবার কাছে লুকিয়ে রেখেছেন। কেন?’
অভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বর্ষা আবার বলল,
‘আমি আবার সেই গ্রামে গিয়েছিলাম। আমরা যে ঘরে থাকতাম সেখানের লোকেরা আমাকে চিনতে পেরে জিজ্ঞেস করলো কেন আমি আমার স্বামীকে নিয়ে আসিনি। আমি কিছুই বুঝলাম না। তারপর গ্রামের মাতব্বর চাচার কাছে নিয়ে যায়। তার ফোনে একটা ভিডিও আছে যেখানে আমরা বিয়ে করছি।’
অভ্র ঢোক গিললো। বলল,
‘মাতাল অবস্থায় বিয়ে হয় না।’
বর্ষা অস্ফুট স্বরে বলল,
‘তাহলে প্রতিদিন আমার রুমে আসেন কেন?’
‘একটু দেখতে।’
এগিয়ে গেল বর্ষা। সে অভ্রর পায়ে পা রেখে দাঁড়াল। নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘শুধু দেখতে?’
মাথা ঘুরিয়ে নিল অভ্র,
‘হ্যাঁ।’
বর্ষা অভ্রর গালে হাত রেখে বলল,
‘আপনি নেশা করেছেন অভ্র ভাই?’
‘একটু। বন্ধুরা খাচ্ছিল।’
বর্ষা অভ্রকে জড়িয়ে ধরল। অভ্র তাকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। বর্ষা দুর্বল গলায় বলল,
‘কেন বলতে পারেন না ভালোবাসি?’
অভ্র ওর কোমর জড়িয়ে ধরলো। কাঁধে থুতনি রেখে বলল,
‘ভালোবাসা যা ছুঁয়ে দিলেই ম্লান হয়ে যায়।’
বজ্রপাতের শব্দ কানে এলো। এবং মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। বর্ষা সাথে সাথে অভ্রর বুকে মুখ লুকালো। অভ্র তার মাথায় হাত রাখে এবং তার মুখ উপরে তুলে ধীরে ধীরে তার ঠোঁট স্পর্শ করে। অভ্র তার নরম ঠোঁটে গভীরভাবে চুমু খেল। অভ্র তার কানের কাছে ঠোঁট তুলে প্রফুল্ল হাসি দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘প্রণয় চলবে হানি?’
বর্ষা বুকে মুখ লুকিয়ে রেখে বলল,
‘হুম।’
একটা ছোট চড়ুই অনেকক্ষণ খোলা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। অভ্রর ঘরে যাওয়ার জন্য বারান্দার দরজা খোলা পাখিটি ভুলে উড়ে গেল রুমে। বের হবার উপায় না পেয়ে সে কিচিরমিচির শব্দে ডাকতে লাগল। সিলিং ফ্যান নেই। এসির তাপমাত্রা খুবই কম। অভ্র তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে উঠে বসলো। বিছানার পাশের সুইচবোর্ডটা চেপে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিল। ছাদের চারপাশে উড়তে থাকা পাখিটি একসময় নিচে নেমে আসে। দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। অভ্রকে দেখে বুকটা কেঁপে উঠছে তার। অভ্র মৃদু হাসলো। বিছানা থেকে উঠে পাখিটিকে ধরলো। দুই হাতে পাখি নিয়ে বারান্দায় এলো।
তারপর ছেড়ে দেওয়া হয় খোলা আকাশে। উড়তে উড়তে পাখিটি একবার ফিরে তাকাল। অভ্র ভ্রু কুঁচকে মেঝের দিকে তাকাল। কাল রাতে কি বৃষ্টি হয়েছিল? সে এভাবে ভ্রুকুটি করল। বারান্দার মেঝে ভেজা। অভ্র পাশের বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখল দরজা বন্ধ ব্যাপারটা ও ততটা গায়ে মাখলো না। রুমে ফিরে এলো। হলুদ টি-শার্ট পরে আয়নার সামনে দাঁড়াল। বিছানায় ফোন ভাইব্রেট করা বাজছে। একটি বিদেশী নম্বর স্ক্রিনে ঝলকাচ্ছে। অভ্র ফোন রিসিভ করলো। সে দৃঢ় এবং গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো,
‘কী হলো আবার?’
ফোনের ওপাশের দিশেহারা লোকটি ইংরেজিতে বললেন,
‘আমাদের চারজন লোককে ওরা নির্মমভাবে মেরেছে, বস। আমরা কি করব? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি জরুরি ফ্লাইটে আসুন।’
অভ্র গম্ভীর গলায় বলল,
‘তুমি জি গ্রুপে থাকো। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসার ব্যবস্থা করছি।’
অভ্র কল কেটে দিল। সে আলমারির কাভার্ড থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে কারো অজান্তেই দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
মায়ের চিৎকারে জেগে ওঠে বর্ষা। সে বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে চিৎকার করে। বর্ষা চোখ খুলে চারদিকে তাকাল। স্পষ্ট কণ্ঠে বলল,
‘মা। অপেক্ষা আর ডেকো না, আমি উঠে গেছি।’
শরীর নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। শরীর ব্যাথা। হঠাৎ এমন ব্যাথার কারণ? ঘুম কাটেনি। গামছাটা কাঁধে নিয়ে বাথরুমে গেল। শরীরে পানির ছিটা পরতে সে ছিটকে উঠল। খুব জ্বলছে শরীর। সে তার জামা একটু নামিয়ে ফেলল এবং নখ ও কামড়ের চিহ্ন দেখতে পেল। তার ফর্সা শরীরের কিছু অংশ লাল হয়ে গেছে। মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসল বর্ষা। গত রাতের কথা একটু মনে পড়ে তার। ভেজা শরীর নিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে রুমে চলে গেল। ঘরটা খালি। অভ্র রাত্রে তার রুমে ছিল, তাহলে এখন কোথায়?
বারান্দার দরজার দিকে এগিয়ে গেল। ভেজা দরজা অভ্র কখন রাত গেল? সে খেয়াল করেনি। বর্ষা বাথরুমে ফিরে গেল তারপর দাঁত কিড়মিড় করে এবং জ্বলন্ত সংবেদন সহ্য করে গোসল করল। বর্ষা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁটের দিকে তাকাল। নীচের ঠোঁট ফুলে গেছে এবং সামান্য কাঁটা। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চুপচাপ বসে রইল। বিছানার এক কোণে অভ্রর শার্ট পরে আছে। ওটা তুলে নিয়ে আলমারিতে রাখল। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে মনকে শান্ত করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সকালবেলা। সবাই তাদের কাজে ব্যস্ত। বর্ষাকে কেউ খেয়াল করেনি। সে একটা গভীর শ্বাস নিল।
দিন শেষ হয়ে রাত আসে। অভ্রর খোঁজ পাওয়া গেল না। দুই মাস হয় দেশে এসেছে, আগে এমনটা করেনি। বাড়ির সবাই তাকে নিয়ে চিন্তিত। ফোন বন্ধ। এলাকার ছেলে পুলের মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হয়। তার কেউই খোঁজ দিতে পারেনি। রাত তখন দশটা। দুই ছেলেকে নিয়ে থানায় যান নূর ইসলাম। নাহিদ তার বাবাকে নিয়ে আশেপাশে খুঁজতে গেল। বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে বসে আছে আসিফা বেগম। ইতিমধ্যেই অনেক চোখের জল ফেলেছেন তিনি।
তিন্নি সবে হাসপাতাল থেকে ফিরছে। রাস্তার ধারে ল্যাম্পপোস্টের নিচে কেউ বসে আছে। তিন্নি ভ্রুকুটি করে গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেল। বর্ষা হাঁটু গেড়ে বসে আছে। একের পর এক গাড়ি চলছে। তিন্নি হাঁটু গেড়ে বসল। তার হাত আলতো করে ছুঁয়ে দিল ওর মাথায়। বর্ষা হতবাক। সে মুখ তুলে বলল,
‘অভ্র ভাই?’
ভ্রু কুঁচকে গেল তিন্নি। জিজ্ঞাসা করলো,
‘অভ্র। অভ্রর কি হয়েছে?’
বুকে চেপে রাখা কান্না বেরিয়ে এলো। তিন্নিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে,
‘আপু, অভ্র ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না।’
নিচু গলায় বলল তিন্নি,
‘অভ্র তো বাচ্চা না। ফিরে আসবে। চল বাসায় যাই। সামনেই বাড়ি, হাঁটবি না – কি গাড়িতে উঠব?’
বর্ষা বলল,
‘দাদা, বড় চাঁচ্চু আর বাবা থানায় গেছে। অপূর্ব ভাই আর নাহিদ ভাই সব জায়গায় খুঁজছেন, অভ্র ভাই কোথাও নেই।’
ব্যাপারটা গুরুতর কিন্তু এখানে বসে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে তিন্নি বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো। পুলিশ পরিদর্শক শরাফত খানের বন্ধু। সে অভ্রকে খুঁজতে লাগল। ড্রয়িংরুমে সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। অপূর্ব স্থির পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নামল। নানার পায়ের কাছে বসে নিচু গলায় বলল,
‘অভ্র এশিয়ায় ফিরে গেছে।’
সবার দৃষ্টি এখন তার দিকে। অপূর্ব একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘আমি অভ্রের রুম থেকে এসেছি। তার পাসপোর্ট আলমারিতে নেই। কাউকে কিছু না বলে ও চলে গেছে।’
বর্ষা করুণ গলায় বলল,
‘না, না। অভ্র ভাই এভাবে যেতে পারেন না। সে গুম হয়েছে। কেউ তাকে তুলে নিয়েছে, কিছুক্ষণ পর হয়তো ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করবে।’
বর্ষাকে স্বাভাবিক মনে হয়নি। অপূর্ব বসা থেকে উঠে গেল। বর্ষা জ্ঞান হারিয়ে পরতে নিতেই অপূর্ব তাকে ধরে উচ্চকণ্ঠে বলল,
‘তিন্নি ধর।’
দুদিন কেটে গেল। অভ্রকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অপূর্বর ধারণা সঠিক। বিমানবন্দরে গিয়ে খবর নিয়ে আসেন বড় চাচ্চু। দুদিন আগে বাংলার মাটি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে অভ্র ভাই। বন্ধ ঘরে লাইট নিভিয়ে রাখে বর্ষা। চোখ ফুলে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগও হয়েছে। সময়মতো খাবার না খাওয়ায় শরীরে শক্তি নাই। একা চলতে পারে না। পা টলমল করে। হঠাৎ দুই হাতে মুখ চেপে কেঁদে উঠল। বর্ষা বারান্দায় দেয়ালে চেপে ধরে দাঁড়ায়। মেঘলা আকাশের দিকে চোখ রাখল সে। কবিতার মতো করে ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,
তুমি চলে গেলে, হঠাৎ, কাছে থেকে দূরে। বহুদূরে।
স্বপ্ন ভেঙ্গেছ,
বুকে বয়ে যায় চোখের নদী
বুকে রক্তপাত হলে কি ক্ষতি হয়?
অস্পৃশ্য ভালোবাসায় হারিয়ে যাই
কারো অস্তিত্বের আকর্ষণে পৌঁছানোর টানে!
মরীচিকা সে?!
বজ্রের বৃষ্টিতে ভিজিয়ে অঙ্গ
আজ হেরে যাবো।
এশিয়ার একটি হাসপাতালে শুয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তাইফান। অভ্র মেরুদণ্ড টানটান করে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র তার চোয়াল শক্ত করলো। নিসানের উদ্দেশ্য বলল, ‘আমার যত লোকদের তারা মেরেছে আমি তার দ্বিগুণ মেরে ফেলব।’
নিসান ইংরেজিতে বলল,
‘বস, আপনি যান। আমরা তাইফানের শেষকৃত্য সম্পন্ন করব।’
অভ্র নিসানের কাঁধে হাত রাখল। একটু ঝাঁকুনি দিয়ে বলল,
‘ ওদের লোকের প্রতিটি গতিবিধির ওপর নজর রাখো। একটি সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।’
নিশান একজন দক্ষ সেনাপতির মতো কাঁধ নাড়ল।
‘হ্যাঁ বস।’
নয়তলার অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। বাড়ির লোকজনের কথা মনে পড়তে হঠাৎ ড্রিংকস করার কথা ভাবে সে। দুই পেগ খেতেই সেই রাতের দৃশ্যগুলো অভ্রর চোখে ভেসে উঠল। চোখ দুটো আগুনের মতো লাল। সে অপরাধ করেছে। দূর দেশে অষ্টাদশী কন্যার মন ও বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে। এই মুখ তাকে আবার দেখাবে কী করে?
◩
তিন মাস কেটে গেছে। শীত চলছে, হালকা শীত। গ্রামে অনেক গাছপালা রয়েছে আর ঘনবসতিপূর্ণ নয়। তাই শহরের তুলনায় বাতাসে ঠাণ্ডা আবেশ বেশি। শীতের রাতে তিন্নিকে বাসায় নিতে হাসপাতালে আসে বর্ষা। এখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিন্নি তার চেক-আপ করে। ঘণ্টাখানেক পর জ্ঞান ফেরে বর্ষার।
বর্ষা হাসপাতালের বিছানায় বসে আছে। চোখ জোড়া জলে টলমল করছে। যখন তখন চোখের জল গড়িয়ে পড়বে।
বিষণ্ণ গলায় জিজ্ঞেস করল তিন্নি,
‘কী করছিস বর্ষা? এত ভালোবাসা দেওয়ার ফল এই?’ বলে থামল তিন্নি। সে সাথে সাথে উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘এই সন্তানের বাবা কে?’
বর্ষা কেঁদে উঠল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
‘অভ্র ভাই।’
‘বর্ষা, বাচ্চা কি করবি? আর বাড়ির লোকদের কি জবাব দিবি?’ মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করলো তিন্নি। বর্ষা বিছানা ছেড়ে উঠল। তিন্নির দুই হাত ধরে বলল,
‘আপু, আমার ভালোবাসার একমাত্র নিদর্শন, আমি তাকে কখনো হারাতে পারব না। তুমি একটা ব্যবস্থা করো।’
ভাবল তিন্নি। তারপর বলল,
‘আমি এই হাসপাতাল থেকে বদলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাচ্ছি। আমি সেখানেই থাকব। তুই আমার সাথে চল কিন্তু বাচ্চাকে কতদিন লুকিয়ে রাখতে পারবি?’
বর্ষা মৃদুস্বরে বলল,
‘অভ্র ভাই না আসা পর্যন্ত।’
তিন্নি জোরে নিঃশ্বাস ফেলল,
‘ঠিক আছে। আমি বাড়িতে সব সামলাচ্ছি।
বর্ষা অনুকূলে থাকায় সবাই যেতে দিতে ইচ্ছুক হয়। বর্ষা ভাবছে তার প্রয়োজনীয় জিনিস কি নিয়ে যাবে। দিন বেশি নেই আর মাত্র সাত দিন।
◩
চার বছর পর।
গুটিগুটি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পড়ে যায় অর্ণব। কাঁদেনি সে হাঁটু বেঁকিয়ে উঠে বসল। ময়লা তার পায়ে স্পর্শ করেনি, সে আবার দুই পায়ে হাঁটা শুরু করে। রান্নাঘরে ঢুকে মিষ্টি গলায় ডাকলো,
‘মা, মা।’
বর্ষা পেছনে তাকাল। একটা মুচকি হেসে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হয়েছে অর্ণ?’
অর্ণব দুই হাত বাড়িয়ে দিল কোলে উঠার জন্য। তারপর বলল,
‘মা, আমি খাব।’
বর্ষা কোলে নিল। বলল,
‘দুই মিনিট দাঁড়াও অর্ণব। এটা হয়ে আসছে।’
অর্ণবকে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। বারান্দায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। বাড়ির সামনে একটা গাড়ি দেখা গেল। তিন্নি ছাতা নিয়ে গাড়ি থেকে নামল। বেল বাজানোর আগেই বর্ষা দরজা খুলে দিল। যদিও সে কিছুটা ভিজে ছিল। তিন্নি অর্ণবকে কোলে তুলে নিল। তারপর বলল,
‘গাজীপুর যেতে হবে। দাদার অবস্থা খুব খারাপ। জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দাদা তোকে আর আমাকে দেখতে চায়। অপূর্ব কল দিয়েছিল। তুই কি যাবি যদি যেতে চাস রেডি হয়ে আয়।’
তিন্নি কথা শেষ করল। বর্ষা বলল,
‘কি হয়েছে দাদার? আর আমরা দুজন যদি গাজীপুর যাই, তাহলে অর্ণব কার সঙ্গে থাকবে?’
‘এখানে কারো কাছে রেখে যাবি?’
বর্ষা বলল,
‘অর্ণব এখনও অনেক ছোট। তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেখে গাজীপুরে থাকব কী করে?’
তিন্নি বলল,
‘গাজীপুর চল, আমার এক বন্ধুর বাড়িতে রাখব। তার দুটি সন্তানও রয়েছে। তাছাড়া বাড়িতে এখন অর্ণবের কথা বলতে হবে। অভ্র ফিরে আসবে বলে মনে হয় না। কেন অভ্রের জন্য ওর পুরো শৈশব নষ্ট করছিস? অর্ণবের অধিকার আছে তার সকল দাদা-দাদী এবং খালা এবং চাচাদের দ্বারা ভালবাসা পাওয়ার। তাছাড়া আমার বিয়ের কথা ও বলাবলি হচ্ছে।’
বর্ষা বলল,
‘ওখানকার পরিস্থিতি আগে দেখব, বলার মতো পরিস্থিতি থাকলে বলব।’
তিন্নি বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘এখন রেডি হো।’
অর্ণব খুশি হয়ে বলল,
‘আমি দাদার কাছে যাব।’
তিন্নির বন্ধু দেশে নেই। স্বামী-সন্তান নিয়ে চলে গেছে বাহিরের এক দেশে। অনেকদিন যোগাযোগ না থাকায় তিন্নি তা জানতো না। বর্ষা তিন্নির উদ্দেশ্য বলল,
‘আপু তুমি হাসপাতালে যাও। আমি অর্ণবকে অহিতার বাড়িতে রেখে সোজা হসপিটালে চলে আসব।’
‘তুই আসতে পারবি তো – আমি কি তোর সাথে আসবো?’
‘আমি পারবো, আপু। তুমি যাও।’
নূর ইসলাম মোটামুটি সুস্থ। তার গলায় একটি ছোট অপারেশন করা হয়েছে। অপূর্ব ছোট্ট অপারেশন কে বাড়িয়ে বলেছে কারণ, বাড়ির সবাই চেয়েছিল বর্ষা বাড়িতে আসুক। সেই যে মেয়েটি গেল আর গাজীপুরে আসেনি। কখনও কখনও ভিডিও কলে কথা বলতো কিন্তু সেটি এক মিনিটের বেশি হত না। অপূর্বর উপর রেগে গেল তিন্নি।
‘বেচারার ওপর আর রাগ করিস না তিন্নি।’
হঠাৎ একজন পুরুষের মৃদু কণ্ঠস্বর শুনে তিন্নি স্তম্ভিত হয়ে গেল। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠল। সে ফিরে তাকাল অভ্রর দিকে। তিন্নি বাড়ির সবার কাছ থেকে বিস্তারিত শুনলো। অভ্র কাল রাতে দেশে আসছে। আর সে-ই দাদা নূর ইসলামকে গলার অপারেশনের জন্য বুঝিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে। চাপা গলায় বলল তিন্নি,
‘আমি একটা ফোন করব।’
সবার থেকে একটু দূরে চলে গেল তিন্নি। বর্ষাকে কল দিল। সফিপুর থেকে রতনপুর যাওয়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা। অহিতা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণবকে অহিতার কোলে তুলে দেওয়া হল তারপর বর্ষা কিছু একটা বলে তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হতে শুরু করল। তারপর হঠাৎ কল এসে ফোনটা বেজে উঠল। তিন্নি কল দিয়েছে। সে হাসপাতালে গেছে। জরুরী ভেবে কল রিসিভ করে সে।
তিন্নি বলল,
‘বর্ষা, অভ্র আসছে।’
রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা। তারপর হঠাৎ একটি গাড়ি ধাক্কা মারে। বাজারের জামে মসজিদটির সামনে নিথর হয়ে পড়ে আছে। রাস্তায় ভিড় জমলো। ফোনে সবার কথা শুনে তিন্নি ছুটে এল। পরিবারের সদস্যরা ও সঙ্গে রয়েছে। রাস্তার লোকজন জানান, যে মেয়েটির সদ্য দুর্ঘটনা ঘটেছে তাকে তানহা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্ষা জরুরি ওয়ার্ডে আছে। মাথায় ও হাতে আঘাত লেগেছে এবং অন্য কোন ক্ষতি হয়নি। বর্ষা বিছানায় বসে আছে। তিন্নি একজন ডাক্তার। তাই সে নিজে ও একবার চেক করলো। বাড়ির সবাই বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। বর্ষার সামনে দাঁড়ানোর সাহস নেই তার। অহিতা হাসপাতালের বাইরে আছে এবং অর্ণবকে কাঁদছে দেখে ভিতরে যায়। বাচ্চার কন্ঠ শুনে সবাই দরজার দিকে তাকালো। তিন বছরের একটা ছেলে ‘মা, মা’ বলে দৌড়াচ্ছে। বিছানাটা অনেক উঁচু অর্ণব ওঠতে পারে না। তিন্নি অর্ণবকে বিছানায় উঠিয়ে দিল। ছোট্ট অর্ণব মায়ের বুকে আঁকড়ে ধরে। সবার মনেই প্রশ্ন জাগে। পাপিয়া বেগম বলেন,
‘এই ছেলেটা কে? আমার মেয়েকে মা ডাকছে কেন?’
তিন্নি আলতো করে চাঁচির কাঁধে হাত রাখল। নরম গলায় বলল,
‘তার নাম অর্ণব। সে বর্ষার ছেলে চাঁচি।’
তারা অবিশ্বাসের চোখে তাকাল। সবার প্রশ্ন, বাবা কে? বর্ষার বাবা সাহরিয়ার খান বললেন,
‘বর্ষা কবে বিয়ে করেছে আর এই ছেলের বাবা কে?’
অভ্র আওয়াজ তুলল। স্পষ্টভাবে বলল,
‘আমি।’
সবার গম্ভীর মুখ মুহূর্তেই নরম হয়ে গেল। অভ্র এগিয়ে এলো। বর্ষার চোখ ছলছল করছে। অর্ণবকে প্রথমবারের মতো তার বাবা কোলে নিল। বুকের সাথে মিশে যায় অর্ণব, জেনো আকাশ এসে মিশে গেল মাটির সাথে। অভ্রর চোখ ভিজে গেছে। সে একবার বর্ষার দিকে তাকাল।
অভ্র খাটের একপাশে ছোট্ট একটু জায়গায় বসল। অভ্রের চোখের কার্নিশ থেকে এক ফোঁটা জল পড়ল এবং সে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরল। মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলল,
‘আই এম সরি। আমি তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি আর যাব না।’
দূর আকাশে চাঁদ জ্বলে, জ্যোৎস্না রাতকে আলোকিত করে। ছাদে যাওয়ার পথে বাতি জ্বালিয়েছে বর্ষা। জ্যোৎস্নার আলো লাইট জ্বলাতে সোভা ছড়াতে পারছে না। অন্ধকারকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলছে। নিস্তব্ধ পায়ে হেঁটে এলো অভ্র। ডান পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
‘হানি।’
তার হৃদয় কেঁপে উঠল। ইচ্ছে না করলেই একবার শরীর কেঁপে উঠল। বর্ষা তাকাল। অভ্র বলল,
‘আমার পিছনে অনেক শত্রু ছিল। তাদের সবাইকে শাস্তি দিতে এবং ফিরে আসতে চার বছর লেগেছে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি জানতাম না আমাদের একটা অর্ণব আছে। তুমি আমার জন্য কত কষ্ট সহ্য করেছ।’
বর্ষা তার তর্জনীটা অভ্রর ঠোঁটে রাখল। এবং তার দুই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াল। কানের লতিতে ঠোঁট ছুঁয়ে নেশালো কণ্ঠে বলল, ‘অভ্র ভাই আপনার জন্য অপেক্ষা করতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারি।’
অভ্র অবাক চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে। তারপর বুকে জড়িয়ে ধরে। অভ্র ওর কপালে চুমু খেয়ে তারপর ওর ঠোঁটে চুমু খেতে থাকলো। বর্ষা অভ্রর বুকে বা পাশে হাত রাখল। বাধা দিয়ে বলল,
‘অর্ণব চলে আসবে।’
অভ্র ওকে জড়িয়ে ধরে আদরের সুরে বলল,
‘কেউ আসবে না। আমি দরজায় ছিটকিনি দিয়ে আসছি।’
বর্ষা সাথে সাথে কয়েকটা কিল-ঘুষি মারলো অভ্রর শক্ত বুকে। নরম গলায় বলল।
‘বর্বর।’ অভ্র জোরে হেসে বর্ষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
-‘সমাপ্ত’